Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
International news

পরিণত পদক্ষেপ কূটনীতির সড়কে

দৃঢ়, ঋজু, ভারসাম্যসম্পন্ন এবং ধারাবাহিক। সন্ত্রাসের প্রশ্নে এক বৃহৎ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে বার্তা দিলেন, তাকে এই চারটি শব্দ দিয়েই ব্যাখ্যা করা উচিত।

জি ২০ সামিটে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

জি ২০ সামিটে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৪
Share: Save:

দৃঢ়, ঋজু, ভারসাম্যসম্পন্ন এবং ধারাবাহিক।

সন্ত্রাসের প্রশ্নে এক বৃহৎ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে বার্তা দিলেন, তাকে এই চারটি শব্দ দিয়েই ব্যাখ্যা করা উচিত। অনেক দিন পর এমন একটা কূটনৈতিক পদক্ষেপ দেখা গেল, যাকে সর্বাংশেই স্বাগত জানানো সম্ভব।

বিশ্বের বিশটি শিল্পোন্নত রাষ্টের শিখর সম্মেলনের যে আয়োজন চিনে হয়েছে, তার চেয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মঞ্চ যে কমই হয়, সে সংশয়াতীত। তেমন মঞ্চকে ব্যবহার করার সুযোগ পাওয়া যেমন গরিমার বিষয়, তেমনই দায়িত্বশীলতারও। সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় সে মঞ্চ থেকে নরেন্দ্র মোদী দায়িত্বশীল বার্তাই দিলেন গোটা বিশ্বকে।

ইতিহাসের সাক্ষ্য নিলে দেখা যায় পশ্চিম প্রান্তের প্রতিবেশী ভূখণ্ড থেকেই বার বার সন্ত্রাস ছিটকে আসে ভারতের মাটিতে। জি-২০-র মহতী মঞ্চে যেহেতু সে প্রতিবেশীর ঠাঁই নেই, সেহেতু সে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেই প্রতিবেশীর নাম উচ্চারণ করলেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু অভ্রান্ত স্পষ্টতায় বুঝিয়ে দিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার একটি মাত্র দেশ গোটা অঞ্চলে নিরন্তর সন্ত্রাসের বীজ বুনে চলেছে। বললেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই, তাতে ভারতের ভূমিকায় সহনশীলতার লেশমাত্র থাকবে না। পশ্চিম প্রান্তের প্রতিবেশীর উদ্দেশে নিক্ষিপ্ত এই বার্তা যে দৃঢ়, তা নিয়ে সংশয় নেই।

নরেন্দ্র মোদীর এই বার্তায় বিভ্রান্তিও নেই। কোনও সমান্তরাল সংস্থান নেই। ঋজু রেখা যেন এক। তিরের ফলা স্থিরনিবদ্ধ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে। সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তানকে আক্রমণের পাশাপাশি চিনকেও নিশানায় রাখা হচ্ছিল সম্প্রতি। অত্যন্ত অযৌক্তিক ভাবে তা হচ্ছিল, সে বলা যাবে না। বরং সন্ত্রাস প্রশ্নে চিনের আচরণে এক ধরনের দেখেও না দেখার ভান স্পষ্ট। কিন্তু রণকৌশলের স্বার্থেই অনেক ক্ষেত্রে এক ধাপ অগ্রসর হয়ে যে দু’ধাপ পিছিয়ে আসতে হতে পারে, সে কথা মাথায় রাখা বেশ জরুরি। নরেন্দ্র মোদী মাথায় রেখেছেন। আক্রমণের নিশানা শুধু পশ্চিম সীমান্তেই নিবদ্ধ রেখেছেন। উত্তর তথা উত্তর-পূর্ব সীমান্তেও একই সঙ্গে রণদুন্দুভি বাজিয়ে দেওয়ার পথে হাঁটেননি। ঋজু পথে হাঁটতে শুরু করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

বিশ্ব রাজনীতিতে চিনের প্রভাবশালী অস্তিত্ব এই সময়কালে ঘোর বাস্তব। কারও পক্ষেই তা পত্রপাঠ অস্বীকার করা সম্ভব নয়। ভারতের পক্ষেও নয়। একই ভাবে ভারতের গুরুত্বও যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ক্রমবর্ধমান, তা আন্তর্জাতিক স্তরে স্বতঃসিদ্ধ। এমন দুই শক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্কের তুলাযন্ত্রে ভারসাম্য থাকা অত্যন্ত জরুরি। সাম্প্রতিক অতীতে প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে চিন-ভারত চাপানউতোর যখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল, তখন নরেন্দ্র মোদীর চিন সফরকাল এক নতুন উপলব্ধির সাক্ষী হয়ে উঠল। চিনে পা রেখেই প্রধানমন্ত্রী জোর দিলেন পারস্পরিক শ্রদ্ধার বার্তায়। সন্ত্রাসকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় না দেওয়ার বার্তা দেওয়ার সময়েও চিনের দিকে ইঙ্গিত করলেন না। চিনও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করল,অন্তত মৌখিক ভাবে। সন্ত্রাস মোকাবিলার প্রশ্ন তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদী যে তির ছুড়ে দিলেন পাকিস্তানের দিকে, শি চিনফিং সে তিরের গতিরোধ করার কোনও চেষ্টা করলেন না। অর্থাৎ ভারসাম্যের দিকে এক দ্বিপাক্ষিক অগ্রগতি হল।

ভারতীয় কূটনীতির সাম্প্রতিক নেতিগুলিকে এই ভাবে বর্জন করে এগনোর চেষ্টা হল ঠিকই। কিন্তু তার জন্য সন্ত্রাস বা অন্যায়ের সঙ্গে আপোসের প্রশ্নও কিন্তু উঠল না। প্রতিটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাম্প্রতিক কালে ভারত যে ভাবে তুলে ধরতে শুরু করেছে পাকিস্তানের দুরভিসন্ধি, জি-২০ মঞ্চেও সে প্রয়াস অব্যহত রইল। সুকৌশলী কূটনীতির সুবাদে ভারতের অবস্থানের কোনও বিরোধিতাও ধ্বনিত হল না। নিসঙ্কোচে বলা যায়, সন্ত্রাসে পাকিস্তানি মদতের প্রশ্নে অবস্থানগত ধারাবাহিকতা বজায় রাখল নয়াদিল্লি।

পরিণতমনস্কতার জয় হোক। আরও আগেই এই উপলব্ধি জরুরি ছিল। কিন্তু বিলম্বে হলেও, ভারতীয় কূটনীতি যে অবশেষে সঠিক পথে, তাতেই আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস।

অন্য বিষয়গুলি:

modi china g 20 news letter anjan bandopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE