Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Anjan Bandyopadhyay

এ বার ভরসা করব কাকে? বিশ্বাস রাখব কার উপরে?

বেশ কিছু কথা শুধু কথার কথা হয়। কারণ তারা কথার কথা হলেও কিছু আটকে থাকে না, তারা কথার কথা হলেও সমাজ এবং ব্যবস্থা আপন গতিতে চলতে পারে। গোময়ে পদ্মফুল— পদ্ম যদি না ফোটে গোময়ে, এ পৃথিবী কি গোময়ে আচ্ছাদিত হয়ে পড়বে, নাকি পদ্মের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে যাবে?

উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়।—নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়।—নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
Share: Save:

বেশ কিছু কথা শুধু কথার কথা হয়। কারণ তারা কথার কথা হলেও কিছু আটকে থাকে না, তারা কথার কথা হলেও সমাজ এবং ব্যবস্থা আপন গতিতে চলতে পারে। গোময়ে পদ্মফুল— পদ্ম যদি না ফোটে গোময়ে, এ পৃথিবী কি গোময়ে আচ্ছাদিত হয়ে পড়বে, নাকি পদ্মের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে যাবে? কোনওটাই হবে না বলাই বাহুল্য। অতএব গোময়ে পদ্মের প্রস্ফুটন শুধু কথার কথা হয়ে থাকলেও সমাজে খুব একটা ঘাটতি অনুভূত হয় না।

কিন্তু বেশ কিছু কথা আবার এমনও রয়েছে, শুধুমাত্র কথার কথা হলে যাদের চলে না। ভরসা, আস্থা, বিশ্বাস— এই শব্দগুলো অনেকটা তেমনই। এরা কথার কথা হয়ে উঠলে সামাজিক প্রবাহটাই বিপথগামী হয়ে পড়ে। গোময়ে পদ্মফুল তখন ফোটে তো না-ই, বরং পদ্মে গোময়ের উপস্থিতির আভাস মেলে। সেই আভাসটাই কয়েক দিন ধরে মিলছে, কখনও বাদুড়িয়া থেকে, কখনও মছলন্দপুর থেকে, কখনও ঠাকুরপুকুর, দুর্গানগর বা কলকাতা থেকে।

সদ্যোজাত শিশু পাচার হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। পাচার হয়ে যাচ্ছে বিস্কুটের বাক্সে করে, পাচার হয়ে যাচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্সে লুকিয়ে। গর্ভপাতের ব্যবসা হচ্ছে, আবার সেই আড়ালে চলা ব্যবসারও আড়ালে অনিচ্ছুক গর্ভবতীকে লোকলজ্জার ভয় দেখিয়ে লুকিয়ে সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেই সন্তানরা পাচার হয়ে যাচ্ছে। অযত্নে, অবহেলায় মৃত্যুও হচ্ছে। সদ্যোজাত সে সব দেহ ঝপাঝপ চাপা পড়ছে মাটির তলায়, নিঃশব্দে-নীরবে।

কারা রয়েছেন এ চক্রে? চিকিৎসক, নার্সিংহোম মালিক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার। অসহায় মুহূর্তে, দুর্বল মুহূর্তে, সঙ্কটের মুহূর্তে এঁদের শরণাপন্ন হয়ে থাকি আমরা। পরম নিশ্চিন্তে নিজেদের জীবনের ভার এঁদের হাতে সঁপে দিই। আস্থা রেখে, ভরসা রেখে, বিশ্বাস রেখে সঙ্কটমুক্তির প্রহর গুনি। এমন ভয়ঙ্কর, অমানবিক, নারকীয় কারবার এঁরাই চালিয়ে যাচ্ছিলেন দিনের পর দিন! এ বার কী করব? কী ভাবে ভরসা রাখব? কাকে বিশ্বাস করব?

কয়েক জন অসৎ এবং দুর্বৃত্ত বলে সকলেই তেমন, এ কথা বলা যায় না ঠিকই। কিন্তু কে তেমন, আর কে নন, সে বুঝব কী ভাবে? ভরসা রেখে তবেই যাচাই করতে পারি। যদি ঠকে যাই, কী হবে? যদি কোনও চরম বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে পড়ি, জীবন কি নরক হয়ে উঠবে না?

কোটি কোটি মনে আজ এই প্রশ্নগুলো জাগছে। বিশ্বাসের ভিত টলে যাচ্ছে। প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে দিনের পর দিন এমন ভয়ঙ্কর কারবার চলেছে কী উপায়ে, সেই প্রশ্নও উঠছে। অতএব, দায় শুধু দুর্বৃত্তের কিন্তু নয়, দায় ব্যবস্থারও। প্রশাসনিক ব্যবস্থার তো বটেই, কিয়দংশে আমাদের সামাজিক ব্যবস্থারও। নরকের এই কারবারিরা আমাদের সমাজেরই উৎপাদন, ভাবলেই ভারাক্রান্ত হচ্ছে অস্তিত্ব।

সামাজিক শিক্ষা কতটা সশক্ত আমাদের? একটু বিচার-বিশ্লেষণের সময় এসেছে সম্ভবত। সব সামাজিক শিক্ষাই কথার কথা যে নয়, অনেকাংশেই সে সব জীবনের মোদ্দা কথা— এই বোধ কোথাও কোথাও নতুন করে চারিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনটা বোধ হয় অনুভূত হচ্ছে আজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anjan Bandyopadhyay Newborns Skeletons
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE