মানুষের বিবেচনাহীন আগ্রাসী কাজকর্মের কারণেই যে বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে কথা বহু আলোচিত। এই বিষয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় এক নতুন দিকে আলোকপাত করা হয়েছে। আন্টার্কটিকার বরফের উপর কার্বন ডাইঅক্সাইডের ছাপ ইঙ্গিত করছে যে, এত দিন বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে শিল্পবিপ্লব-পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, তা ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছে। ইংল্যান্ডের দুই পরিবেশ-গবেষকের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বের মানুষের কাজকর্মজনিত কারণে অষ্টাদশ শতকের তুলনায় গড় তাপমাত্রা ২০২৩ সালের শেষের দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে ১.৪৯ ডিগ্রি। এই বছর তা আরও খানিক বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, অষ্টাদশ শতকের তাপমাত্রাকে যদি ভিত্তি হিসাবে ধরা হয়, তা হলে বিপদসীমা ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। অত্যধিক গরমে, খামখেয়ালি বৃষ্টিপাতে, ঘন ঘন শক্তিশালী সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যে বিপদসীমা পার হওয়ার কুপ্রভাব ইতিমধ্যেই টের পাচ্ছে মানবসভ্যতা।
২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি শিল্পবিপ্লব-পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রির নীচে আটকে রাখার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল। এই চুক্তিতে ১৮৫০-১৯০০ সালকে ভিত্তি হিসাবে ধরা হয়। অথচ গবেষকরা লক্ষ করেছেন, তার আগেও শিল্পায়ন ঘটেছিল। কিন্তু ১৮৫০-১৯০০ সালকে ভিত্তি হিসাবে ধরার মধ্যে সেই বিষয়টি প্রতিফলিত হয়নি। এই প্রথাগত পদ্ধতিতে উষ্ণায়নকে বিচার করার সমস্যা হল, তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণকে খানিক কম মনে হয়। তবে, এই পথেও যে আগামী এক দশকের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির লক্ষ্যমাত্রাকে ছাপিয়ে যাবে, সেই বিষয়ে গবেষকরা নিশ্চিত। বাকু-তে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম দিনে ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজ়েশন প্রকাশিত রিপোর্টেও জোর দিয়ে বলা হয়েছে, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা প্রবল বিপদের সম্মুখীন। এটাও জানানো হয়েছে, এই বছরটি উষ্ণতম বছর হিসাবে রেকর্ড গড়তে চলেছে এবং গত এক দশক শেষ হতে চলেছে ইতিহাসে সর্বাধিক উষ্ণ দশক হিসাবে।
প্রশ্ন হল, পরিস্থিতি শোধরানোর দায়িত্ব নেবে কে? এবং কবে? বাকু-তে এখন চলছে ২৯তম জলবায়ু সম্মেলন। প্রতি বছরই জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয় আশা জাগিয়ে, অথচ শেষ পর্যন্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলে না। গত বছরও জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসা-র মতো বিষয়ে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। সহমত হয়েছিল পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতাকে তিন গুণ এবং শক্তি কুশলতার হারকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করার কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেও। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থসাহায্যের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত উদ্যোগ দেখা গিয়েছে কি? সর্বোপরি, আমেরিকার মাটিতে এমন এক জন নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় বসতে চলেছেন, যিনি উষ্ণায়নের অস্তিত্বকেই আগাগোড়া অস্বীকার করে এসেছেন। বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণে স্পষ্ট যে, জলবায়ুর ক্ষেত্রে বিশ্ব এখন চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে দ্রুত ধাবমান। এমন এক পর্যায়, যেখানে এক বার পৌঁছলে ফিরে আসার পথটি প্রায় বন্ধ। সাম্প্রতিক সম্মেলন সেই গতি হ্রাসে কোনও ‘কার্যকর’ পদক্ষেপ করতে পারে কি না, সেই দিকে চোখ থাকবে বিশ্বের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy