ছবি এপি।
পরিবর্তনই একমাত্র ধ্রুবক— এই মন্ত্রটি বহুব্যবহারে ঈষৎ জীর্ণ বটে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাহা সত্য। যেমন বর্তমান দুনিয়ার কূটনৈতিক চালচিত্র। বিভিন্ন দেশ ও দেশগোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্কে এতটা অস্থিরতা এবং বিভিন্ন সমীকরণের এমন দ্রুত পুনর্বিন্যাস বাস্তবিকই চমকপ্রদ। স্বভাবতই, ভারতকেও বিভিন্ন পরিসরে তাহার সহিত তাল মিলাইয়া চলিতে হইতেছে। যেমন ইউরোপের সহিত কূটনৈতিক ক্ষেত্রে। গত মাসে জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে ফ্রান্সের বিয়ারিৎজ় শহরে বিশেষ অতিথি রূপে উপস্থিত হইয়াছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই মাসে আবার রাশিয়া পৌঁছাইয়াছেন। দুই ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চল ইউরেশিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের ভিতর দ্বন্দ্বের তত্ত্ব কূটনৈতিক মহলে সুবিদিত। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারত নৌশক্তি, আবার মহাদেশীয় ইউরেশিয়াতেও তাহার স্বার্থ পূর্ণমাত্রায় বর্তমান। দ্বন্দ্ব যাহা আছে, তাহা প্রশমিত করিতে ভারতের পক্ষে উপকারী বন্ধু হইতে পারে ইউরোপ। শব্দপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী ফরাসি প্রেসিডেন্টের সহিত মুখোমুখি বৈঠকে যে ‘ইন-ফ্রা’ (ইন্ডিয়া-ফ্রান্স) শব্দবন্ধ সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহা কেবল জনপ্রিয়তাবাদের তাগিদে নহে, ইহার পিছনে স্থল ও নৌশক্তি বৃদ্ধি করিবার ইচ্ছাটিই অধিক খাঁটি।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক চতুর্দেশীয় সফরও এই যুক্তিকেই জোরদার ভাবে প্রতিষ্ঠা করে। ইউরোপ লইয়া ভারতের কূটনৈতিক মহল কতখানি ঐকান্তিক, ইহা বুঝাইবার ভিত্তি ছিল উক্ত সফর। মস্কো, বুদাপেস্ট, ওয়ারস’ এবং ব্রাসেলসকে বাছিবার সিদ্ধান্ত হইতে বুঝিতে হয়, ইউরোপের মধ্যভাগই এখন নয়াদিল্লির লক্ষ্য। ১৯৭৯ সালে মোরারজি দেশাইয়ের পোল্যান্ড সফর এবং ১৯৮৮ সালে রাজীব গাঁধীর হাঙ্গেরি সফরের পরে আর কোনও প্রধানমন্ত্রী ওই দুই দেশে যান নাই, প্রায় তিন দশক ধরিয়া ভারতের বিদেশনীতিতে অবহেলিতই ছিল মধ্য ইউরোপ। বিশ্ব রাজনীতিতে যত তাহাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাইয়াছে, তত যোগাযোগ বাড়াইতে উৎসাহী হইয়াছে ভারত ও অন্য শক্তিগুলি। এবং, নিঃসন্দেহে, এই মিত্রতাকে যথাসম্ভব সফল করিয়া তুলিবার চেষ্টা হইতেছে।
আলোচ্য সংযোগে ফ্রান্সের গুরুত্বই সর্বাধিক। প্রথমত, মার্কিন-চিন বাণিজ্য যুদ্ধের আবহে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া-সহ বৃহৎ শক্তিগুলির সহিত সম্পর্ক দৃঢ়তর করিতে আগ্রহী প্যারিস। ইহার ফলে ইউরেশিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিক দুই অঞ্চলেই তাহার প্রভাব বৃদ্ধি পাইবে। বিপরীতে, এই বাণিজ্য যুদ্ধে বড় দেশগুলির ন্যায় ভারতের অর্থনীতিও প্রভাবিত হইতেছে, অতএব ফ্রান্সের উদ্যোগ সমর্থন করিতেছে নয়াদিল্লি। জাপানের ন্যায় দেশকে শামিল করিতে পারিলে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় গতি আসিবে। দ্বিতীয়ত, বহুপাক্ষিক জোটের যে জার্মান উদ্যোগে ভারত যুক্ত হইতে উৎসাহী, উহাও ফ্রান্স-সমর্থিত। যূথবদ্ধ অঙ্গীকারের সেই কার্যকলাপে জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে বৈশ্বিক স্বার্থরক্ষাই মুখ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা চিনের ন্যায় শক্তিগুলি না থাকিলেও জাপান বা কানাডা উহাতে আগ্রহী। এবং তৃতীয়ত, বরিস জনসনের নেতৃত্ব ও ব্রেক্সিটের ঘোলা জলে ব্রিটেন নাজেহাল, এবং অস্থির ও ক্রমপরিবর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাহার উপর ভরসা রাখা কঠিন। অতএব, নূতন ইউরোপ এবং নূতন অক্ষের গণিতে নরেন্দ্র মোদীর ফ্রান্স সফরের তাৎপর্য বহুমুখী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy