Advertisement
E-Paper

প্রচারের অন্তরালে

সত্যটা থাকে মাঝামাঝি কোনও এক স্থানে। অতি-ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকল্পগুলিকে সরকারি ঋণ দেওয়ার প্রকল্প অতীতেও ছিল, ‘মুদ্রা’ তার নতুন মোড়ক।

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৪:৪১
Share
Save

দেশের গ্রামাঞ্চলে মানুষের আয় বাড়াতে তাঁর সরকার কতটা তৎপর, এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি কতখানি কার্যকর হয়েছে, সম্প্রতি তার বিবরণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লিতে ভোট আসছে, ফলে এই প্রচার অস্বাভাবিক নয়। সমস্যা হল, প্রকল্পগুলি কতটা সফল, কিংবা আদৌ লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাকে রাজনৈতিক বিরোধিতা বলে সহজেই দাগিয়ে দেওয়া হয়। তবু গ্রামীণ ভারত মহোৎসবের উদ্বোধন সভায় মোদীর বক্তৃতা তথ্যনিষ্ঠ বিশ্লেষণ দাবি করে, কারণ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ— গ্রামীণ ভারতে কর্মসৃষ্টি ও রোজগারবৃদ্ধি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুদ্রা, স্টার্টআপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়ার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রভূত সহায়তা করেছে। সত্যিই কি তা-ই? মোদী কেবল একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নন, কেন্দ্রের সরকারেরও প্রধান। ওই প্রকল্পগুলির মূল্যায়নে কী পাওয়া গিয়েছে, তা-ও কি তাঁর দেশবাসীকে জানানোর কথা নয়? অতি-ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িক উদ্যোগের সহায়তার জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’ শুরু হয় ২০১৫ সালে, নতুন ধরনের বাণিজ্যিক উদ্যোগের (স্টার্টআপ) লালন-পালনের জন্য ‘স্টার্টআপ ইন্ডিয়া’ শুরু হয় ২০১৬ সালে। একই বছর শুরু হয় দলিত-জনজাতি এবং মহিলাদের উদ্যোগকে উৎসাহ দিতে শুরু হয় ‘স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া’ প্রকল্প। প্রায় এক দশক পার করার পরে প্রকল্পগুলি কী পেরেছে, কী পারেনি, সে সম্পর্কে আলোচনাই নীতি নির্ধারণের, তথা নির্বাচনী প্রচারের বিষয় হওয়া দরকার। দুর্ভাগ্য, সেই প্রাপ্তমনস্কতা ভারতের রাজনীতিতে দেখা যায় না। শাসক সম্পূর্ণ সাফল্যের দাবি করেন, বিরোধী তা সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেন।

সত্যটা থাকে মাঝামাঝি কোনও এক স্থানে। অতি-ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকল্পগুলিকে সরকারি ঋণ দেওয়ার প্রকল্প অতীতেও ছিল, ‘মুদ্রা’ তার নতুন মোড়ক। সরকার এবং ব্যাঙ্ক সূত্রে তথ্যের বিশ্লেষণ করে নীতি আয়োগই দেখিয়েছে, মুদ্রা ঋণের প্রায় ৮০% যায় অতি-ক্ষুদ্র উদ্যোগের কাছে। প্রধানত মহিলা, ওবিসি এবং দলিত-আদিবাসীরা অতি-ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলি চালান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলিতে যিনি উদ্যোগপতি তিনিই একমাত্র কর্মী। একটি আন্দাজ, মাত্র ২০% ক্ষেত্রে মুদ্রা ঋণ কাজ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে। নীতি আয়োগের মতে নতুন অ্যাকাউন্টের অনুপাতে হ্রাস, ঋণখেলাপি অ্যাকাউন্ট, ঋণ পেতে দীর্ঘসূত্রতা, এমন নানা সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। সরকার মুদ্রা ঋণের লক্ষ্য যা ধার্য করছে, ব্যাঙ্কগুলি অত দিতে অপারগ বা অনিচ্ছুক, সে সমস্যাও থাকছে। ‘স্টার্টআপ ইন্ডিয়া’ প্রধান শহরগুলির বাইরে উদ্যোগ ছড়িয়ে দিয়েছে, এ বিষয়ে আন্তঃরাজ্য বৈষম্যও কমিয়েছে। কিন্তু টাকার বরাদ্দ নিয়ে সমস্যা থেকেই গিয়েছে। স্টার্টআপগুলিকে অর্থ জোগানোর বিশেষ তহবিল (এফএফএস) তৈরির সাত বছর পরেও ঘোষিত বাজেটের মাত্র ৩৩% পৌঁছচ্ছে স্টার্টআপগুলির হাতে।

তেমনই, মহিলা এবং দলিত-জনজাতির উদ্যোগের সহায়তার জন্য বিশেষ প্রকল্পের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে, কিন্তু ন’বছরে ‘স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া’ মাত্র এক লক্ষ আশি হাজার অ্যাকাউন্টে ঋণ দিয়ে থাকলে তা দুশ্চিন্তার বিষয়, গৌরবের নয়। এ ভাবেই, গ্রামীণ রোজগার বৃদ্ধি, গ্রামীণ মহিলাদের কর্মনিযুক্তিতে বৃদ্ধির যে সব পরিসংখ্যান সরকার, বা সরকার-পোষিত সংস্থাগুলি মাঝেমাঝেই প্রকাশ করে, সেগুলি দেশের প্রকৃত অবস্থার উপরে আলোকপাত করার চাইতে ধোঁয়াশার সৃষ্টিই করে বেশি। সর্বোপরি, কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে গ্রামীণ ভারতে বিপুল, বিচিত্র জনগণের প্রয়োজন, চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষার বোধ তৈরি করা সম্ভব নয়। এক সময়ে রাজনীতির শক্তি ছিল এই মুখহীন, কণ্ঠহীন জনসমাজের সঙ্গে সংযোগ। আজ তার স্থান নিয়েছে কর্পোরেট-ধর্মী জনসংযোগ। তাই প্রকল্পের সাফল্যের আস্ফালন কানে এলে প্রশ্ন করতে হবে, ‘পাখিটাকে দেখেছেন কি?’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

PM Narendra Modi Delhi Assembly Election 2025 Rural India Employment Central Government schemes

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}