প্রতীকী ছবি।
সর্বত্রই একই রকম ছবিটা। দেশ বদলে যায়, ভূ-ভাগ বদলে যায়, ভাষা-সংস্কৃতি বদলে যায়, কিন্তু আত্মঘাতী বর্বরতার ছবিটা একই রকম থাকে। সুদূর পশ্চিম থেকে প্রান্তবর্তী পূর্ব— সর্বত্রই রাজনীতি সমান ভাবে পটু সংবাদমাধ্যমের উপর হামলা করার প্রশ্নে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংবাদমাধ্যমের উপর প্রবল ভাবে বিরূপ। ভারতের শাসকদের কণ্ঠেও প্রয়োজন পড়লেই তেমন সুর শোনা যায়। আফগানিস্তানে জঙ্গিরা অপহরণ করে সাংবাদিককে। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর রোষ সাংবাদিককে বিপন্ন করে তোলে। সুবিশাল রাশিয়ায় সংবাদমাধ্যমের উপর কঠোর নজরদারি পুতিন প্রশাসনের। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মলদ্বীপেও সাংবাদিকদের গ্রেফতার করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে ইয়ামিন সরকার। অদ্ভুত বৈপরীত্য হল এই যে, যাঁরা সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধে এতটা তত্পর, তাঁরাই আবার সংবাদমাধ্যমকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে আখ্যা দেন।
সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত হয় যাঁদের হাতে, প্রতিবারই তাঁদের প্রতিপক্ষ বলেন— জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। আবার সময় বা পরিস্থিতি ঘুরে গেলেই সমালোচক হামলাকারী হয়ে ওঠেন আর হামলাকারী হয়ে ওঠেন সমালোচক। বদলায় না শুধু সংবাদমাধ্যমের অবস্থান। সব জমানাতেই তাকে আক্রান্ত হতে হয়, কারণ সব জমানাতেই ন্যূনতম নিরপেক্ষতাটুকু বহাল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায় সংবাদমাধ্যম। তাই রাজনীতিকরা মুখে যা-ই বলুন, বাস্তবে তাঁদের অধিকাংশের কাছেই নিরপেক্ষতা সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়।
আরও পড়ুন: ধর্মতলায় সভা ধর্ম বদলের, সঙ্গে গুন্ডামি
ধর্মতলায় ধর্মান্তরণ চলছিল। হিন্দু সংহতি নামে এক প্রতিষ্ঠানের জমায়েত ছিল রাজপথে। সেই জমায়েতকে সাক্ষী রেখে সদর্পে জানানো হচ্ছিল ধর্মান্তরণের কথা।
ধর্মান্তরণ ঘটানো উচিত কি না, যে ভাবে ধর্মান্তরণের কথা ঘোষণা করা হচ্ছিল, তা যথার্থ কি না, সে নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে সে বিতর্কে যাচ্ছি না আজ। কারণ সংবাদমাধ্যমও গত কাল সে বিতর্কে ঢুকতে চায়নি। যাঁরা ধর্মান্তরিত হলেন, সংবাদমাধ্যম শুধু তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। তাতেই নামল আক্রমণ। ঝাঁপিয়ে পড়ল হিন্দু সংহতি, নিগৃহীত হলেন সাংবাদিকরা, হুমকি-শাসানি চলল অবাধে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এ বর্বর হামলার একটাই কারণ থাকতে পারে— নৈতিক দুর্বলতা। নীতিগত ভাবে যদি সশক্ত অবস্থানে থাকত হিন্দু সংহতি নামের ওই সংগঠন, তা হলে কোনও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে অস্বস্তি অনুভূত হত না। অতএব হামলা করে সংবাদমাধ্যমকে আটকানোর চেষ্টাও করতে হত না।
আজ হিন্দু সংহতি নৈতিক ভাবে দুর্বল, কাল দুর্বল অবস্থানে থাকবে অন্য কেউ। কিন্তু হামলার লক্ষ্যবস্তু বদলাবে না। আজও আক্রান্ত হল সংবাদমাধ্যম, কালও লাঠিটা সাংবাদিকের মাথাতেই পড়বে।
আবারও বলছি, এই বর্বরতা আত্মঘাতী। যে সংবাদমাধ্যমকে জন-অধিকারের প্রহরী হিসাবে বিবেচনা করা হয়, সেই সংবাদমাধ্যমকেই প্রয়োজনমতো জনবিরোধী আখ্যা দেওয়া এবং আক্রমণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিশ্বাসের ভিত টলিয়ে দেবে এক দিন। সে দিন কিন্তু বড় দেরি হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy