—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ভেবে করা আর করে ভাবা, এই দুইয়ের মধ্যে ফারাকটা দূরদর্শিতার। প্রস্তুতিরও। এই দুই ক্ষেত্রেই যে পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রশাসন পিছিয়ে, বোঝা গেল সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্তে। রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু করেছিল দু’টি আলাদা পাঠ্য বিষয়: ডেটা সায়েন্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এখন জানা যাচ্ছে, আগামী বছর থেকে তৃতীয় সিমেস্টারে এই দু’টি বিষয়কে মিলিয়ে দিয়ে পড়ানো হবে একটি বিষয় হিসাবে: কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ডেটা অ্যানালিটিক্স। শুধু ডেটা সায়েন্স বিষয়টিতে নাকি বেশি ছাত্রছাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না, উপরন্তু এআই ও ডেটা সায়েন্স দু’টি বিষয়ের অনেক জায়গায় মিলও রয়েছে, তাই তাদের জুড়ে দিলেও অসুবিধা নেই— এমনই বলা হচ্ছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অপ্রতুলতাও একটা বড় কারণ।
সংসদ তথা শিক্ষা প্রশাসনের সিদ্ধান্তই যখন চূড়ান্ত, তখন তা যে নড়চড় হওয়ার নয়, ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই এ-হেন ‘পরিবর্তন’ অনেকগুলি প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীন স্কুলগুলিতে সদ্য সিমেস্টার পদ্ধতি চালু হয়েছে, ছাত্রছাত্রীরাও কিছু দিন হল নতুন পাঠ-ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, এই সময়েই তৃতীয় সিমেস্টারে এসে দু’টি বিষয়ের এই জুড়ে যাওয়া অনভিপ্রেত সমস্যার সৃষ্টি করতেই পারে। ডেটা সায়েন্স ও এআই, একুশ শতকে জীবনযাপন ও জ্ঞানচর্চার পরিসরে এই দু’টি ক্ষেত্রই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিষয় হিসাবে এদের অন্তর্ভুক্তি এর একটা বড় কারণ। আইএসসি বোর্ড-ও এই বিষয়গুলিতে জোর দিয়েছে, তবে মনে রাখা দরকার, তার জন্য তারা প্রস্তুতিও নিয়েছে জোরকদমে; দু’বছর আগেই আইআইটি দিল্লি-র মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোট বেঁধেছে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এআই, মেশিন লার্নিং, ডেটা সায়েন্স ইত্যাদির পাঠ্যক্রম তৈরিতে। একই প্রস্তুতি কি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদেরও নেওয়া উচিত ছিল না? এক বছর না পেরোতেই দু’টি বিষয়কে মিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি কি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে, সব দিক ভেবেচিন্তে করা হয়েছে?
শিক্ষকের অভাবও তুলে ধরা হচ্ছে একটা বড় কারণ হিসাবে। যে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির জেরে স্কুলে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটি এখনও চূড়ান্ত অনিয়মিত ও দিশাহারা, সেখানে উচ্চ মাধ্যমিকে এ-হেন নতুন বিষয়ের অন্তর্ভুক্তিতেই তাজ্জব বনতে হয়: এআই বা ডেটা সায়েন্স পড়ানোর শিক্ষক স্কুলগুলি পাবে কোথায়? এখনও পর্যন্ত এই বিষয়গুলি তাদের সিলেবাসে ঢুকিয়েছে কলকাতা বা তার কাছেপিঠের স্কুলগুলিই। ভয় হয়, গ্রাম-মফস্সলের হাজার হাজার স্কুলের ছেলেমেয়েদের কাছে এই অতি জরুরি বিষয়গুলি স্রেফ শিক্ষক ও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে অধরা রয়ে যাবে। আবার দেখা যাচ্ছে, যে স্কুলগুলিতে এই বিষয় আছে সেখানেও তা পড়াচ্ছেন কম্পিউটার সায়েন্স বা কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন-এর শিক্ষক, অনেক ক্ষেত্রে স্রেফ কম্পিউটার-প্রশিক্ষকেরা— বিষয়-বিশেষজ্ঞেরা নন। সংসদ এই বাস্তবচিত্রটি জানে না তা হতে পারে না। আসলে সবটাই চলছে উপর উপর কিংবা খেয়ালখুশির নীতিতে: প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো— সবই নড়বড়ে। ফলাফল তো চোখের সামনেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy