গ্রেফতার উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপি সভাপতি। নিজস্ব চিত্র।
অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপির সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী। খুব বিপজ্জনক এবং প্ররোচনাত্মক ভাষণ দিয়েছেন তিনি। যেখানে গিয়ে বিজেপি নেতা এই ভাষণ দিয়েছেন, সেই দাড়িভিট এমনিতেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে হিংসাত্মক ঘটনায় দুই ছাত্রের মৃত্যুর জেরে। অশান্তির সেই পৃষ্ঠভূমিতে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা পুলিশ সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করেছেন, তা আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
পুলিশ এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। জনসাধারণকে প্ররোচিত করা বা হিংসায় ইন্ধন জোগানো অপারধমূলক কাজ। তাই উস্কানিমূলক মন্তব্যের পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ যে তত্পরতা দেখিয়েছে, তার প্রশংসা করতে হচ্ছে।
পুলিশের এই তত্পরতা সত্ত্বেও কিন্তু বিতর্ক থামছে না। বরং এই তত্পরতাকে ঘিরেই এখন সবচেয়ে বেশি বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, তা কিন্তু মোটেই অবান্তর নয়। এ কথা শুনে কারও মনে হয়তো ধন্দ জাগতে পারে। পুলিশের তত্পরতাকে প্রথমে আমরা ইতিবাচক আখ্যা দিচ্ছি। তার পরে আমরাই বলছি যে, পুলিশি তত্পরতাকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কটি অবান্তর নয়। এ আবার কেমন বিচার! প্রশ্ন জাগতে পারে। এই প্রশ্নটি যে জাগছে তার দায়ও কিন্তু পুলিশের তথা রাজ্য প্রশাসনের। দায় অন্য কারও নয়।
বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল কখনও বলেছেন পুলিশকে বোমা মারতে, কখনও নির্দল প্রার্থীর বাড়ি উড়িয়ে দেওয়ার নিদান দিয়েছেন। গত সাত-আট বছরে অনুব্রত মণ্ডল এমন আরও অজস্র ‘মণিমুক্তময়’ মন্তব্য করেছেন। অনুব্রতর জেলারই আর এক তৃণমূল নেতা তথা লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম প্রকাশ্য জনসভার মঞ্চ থেকে বলেছেন জনৈক ব্যক্তিকে পায়ে দলে মেরে দেওয়ার কথা, বলেছেন কারও মুণ্ড নেওয়ার কথা। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক প্রকাশ্যে বলেছেন, বিষধর সাপের সঙ্গে যেমন আচরণ করা উচিত, সিপিএম নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও তেমন আচরণই করতে হবে। তালিকা এখানেই শেষ নয়। কখনও কোচবিহারের রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, কখনও উত্তর ২৪ পরগনার অর্জুন সিংহ, কখনও দক্ষিণ ২৪ পরগনার রেজ্জাক মোল্লা বা শওকত মোল্লা বা আরাবুল ইসলাম— বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের উস্কানিমূলক মন্তব্য বা হিংসাত্মক আচরণ করে শিরোনামে এসেছেন এঁরা। কিন্তু পুলিশ এঁদের কারও কেশাগ্রটিও স্পর্শ করার চেষ্টা করেনি। তাই উত্তর দিনাজপুরে বিজেপির নেতার গ্রেফতার হতেই পুলিশের নির্লজ্জ দু’মুখো নীতি প্রকট হয়ে পড়েছে। শঙ্কর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পুলিশি তত্পরতা নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক কেন অবান্তর নয়, নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে এ বার।
আরও পড়ুন: শঙ্কর গ্রেফতার হলে কেষ্ট-জ্যোতিপ্রিয় নয় কেন? নিশানায় পুলিশ
দু’মুখো নীতিটা কি আসলে পুলিশের? না কি প্রশাসনের উচ্চ মহলের অঙ্গুলিহেলনে পুলিশের অমেরুদণ্ডি অবস্থান? দ্বিতীয়টি সত্য বলেই অধিকাংশের মত। কলেজে ঢুকে অধ্যাপিকাকে জলের জগ ছুড়ে মারছেন যিনি, তিনি ‘তাজা নেতা’ আখ্যা পাচ্ছেন। অনুব্রত মণ্ডলের মাথায় অক্সিজেন কম যায়, তাই তাঁর ভুল-ত্রুটি মাফ। আর যাঁরা যাঁরা একটু আধটু অপরাধ করে ফেলেন, তাঁরা কেউ বাচ্চা ছেলে, কেউ দামাল ছেলে, কেউ সামান্য দুষ্টুমি করে ফেলেছেন। অতএব তাঁদের দিকেও পুলিশের ফিরে তাকানো বারণ। দু’মুখো নীতির উত্সটা কোথায়, বুঝতে অসুবিধা হয় না নিশ্চয়ই।
আরও পড়ুন: পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ বিজেপির জেলা সভাপতি, জেল হেফাজতে পাঠাল আদালত
প্রশাসন যখনই এ রকম পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে ওঠে, যখনই প্রশাসক নিজের গোষ্ঠী আর পরের গোষ্ঠীর মধ্যে এ ভাবে ভেদাভেদ করেন, তখনই শুরু হয় মাত্স্যন্যায়। জাঁকিয়ে বসতে থাকে অরাজকতা। এই মাত্স্যন্যায়, এই অরাজকতাই কিন্তু নতুন আলোড়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy