Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
JNU VIOLENCE

আপনি আচরি

ছাত্রদের বিপন্নতার সম্মুখে উপাচার্যের নীরবতা এক ভয়ানক প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আক্রান্ত ছাত্র-ছাত্রীরা উপাচার্যকে সরাইবার দাবি তুলিয়াছেন। উত্তরে কেন্দ্রের উচ্চশিক্ষা সচিব বলিয়াছেন, ব্যক্তির পরিবর্তন জরুরি নহে। সরকারের কাজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরাইয়া আনা, এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাগুলির সমাধান। সত্য, এই দুইটি কর্তব্য প্রশাসকের জন্য জরুরি। কিন্তু শিক্ষার পরিবেশ এবং শিক্ষার সঙ্কট, এই দুইটি প্রসঙ্গেই আজ উপাচার্য জগদেশ কুমারের ভূমিকা লইয়া প্রশ্ন উঠিতে বাধ্য। প্রশ্নটি একটিমাত্র ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ নাই। ৫ জানুয়ারি জেএনইউ-তে ছাত্রছাত্রীদের উপর মারাত্মক আক্রমণের জেরে গোটা দেশেই আলোড়ন উঠিয়াছে, কারণ শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের প্রচলিত ধারণাটিকে আঘাত করিয়াছেন জগদেশ কুমার। যিনি নিজের আচরণ দিয়া অপরকে শিক্ষা দেন, তিনিই ‘আচার্য’। ছাত্রদের সহিত শিক্ষকদের মতান্তরের অজস্র দৃষ্টান্ত এ দেশ দেখিয়াছে। কিন্তু ইহাও দেখিয়াছে যে, ছাত্র আক্রান্ত হইলে শিক্ষকেরা তৎক্ষণাৎ তাহার পার্শ্বে দাঁড়াইয়াছেন, আক্রমণকারীদের নিন্দা করিয়াছেন। বহু শিক্ষক দীর্ঘ সময় ধরিয়া ঘেরাও হইয়াও পুলিশ ডাকেন নাই। ছাত্রদের নির্যাতন হইতে পারে, এই ভয়ে। ইহা এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়াছে। তাহা এই যে, মতবিরোধের মধ্যেও পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধতা, শ্রদ্ধা-সহানুভূতির সম্পর্ক বাঁচিয়া থাকিতে পারে। জগদেশ কুমারের আচরণে সেই আদর্শ খুঁজিয়া পাওয়া গেল না। মারাত্মক আহত ছাত্রছাত্রীরা হাসপাতালে ভর্তি হইবার পর তিন দিন কাটিয়া গেলেও উপাচার্য একটি বাক্যও বলেন নাই। কিছু দিন পূর্বে জামিয়া মিলিয়া এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর হামলার পরেই সেই সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা করিয়াছিলেন উপাচার্যেরা, কিন্তু জেএনইউয়ের উপাচার্য নীরব রহিলেন।

ছাত্রদের বিপন্নতার সম্মুখে উপাচার্যের নীরবতা এক ভয়ানক প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। বামপন্থী ছাত্রছাত্রীদের প্রতি, অথবা ফি-বৃদ্ধির প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের প্রতি জগদেশ কুমারের সমর্থন না-ই থাকিতে পারে। তাহাদের জন্য উদ্বেগ, তাহাদের প্রতি সহানুভূতি থাকিবে না কেন? মতামত-নির্বিশেষে প্রতিষ্ঠানের সকল ছাত্রের সুরক্ষা ও কল্যাণের প্রতি শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা রহিয়াছে, এ কথাটির সত্যতাকে কেহ এত দিন প্রশ্ন করেন নাই। জগদেশ কুমারের নীরবতা সে প্রশ্ন তুলিল। ছাত্রনেতা ঐশী ঘোষ ও তাঁহার সহপাঠীদের বিরুদ্ধে উপাচার্য যে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করিয়াছেন, সেই বিস্ময়কর কাজটি সে প্রশ্নকে আরও গাঢ় করিল। পূর্বতন ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার ও তাঁহার সঙ্গীদের বিরুদ্ধেও তিনিই অভিযোগ দায়ের করিয়াছিলেন। অতএব প্রশ্ন উঠিয়াছে, এখন কি তবে আক্রান্ত, বিপন্ন ছাত্রের পরিচয় দেখিয়া, তাহার রাজনৈতিক অবস্থান বিচার করিয়া শিক্ষক সরব, সক্রিয় হইবেন? তাহা হইলে ছাত্রের সহিত শিক্ষকের সম্পর্কটি কী দাঁড়াইল? প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রের সম্পর্কই বা কী হিসাবে নির্ধারিত হইবে?

এই প্রশ্নগুলি গোটা দেশকে ভাবাইয়া তুলিয়াছে। জেএনইউ ক্যাম্পাস ‘স্বাভাবিক’ করিলেই প্রশাসকের কাজ সম্পন্ন হইবে না। কেন্দ্রীয় সরকারকে সর্বসমক্ষে জানাইতে হইবে, জগদেশ কুমার কি উপযুক্ত শিক্ষক? সমাজ-সংসার সম্পর্কে ছাত্রের ধারণা শিক্ষকই গড়িয়া দেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক যে নূতন জ্ঞানের নির্মাণ করেন, তাহার সহ-নির্মাতা ছাত্র। এই উপলব্ধি পরস্পরের প্রতি আস্থা তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি শিক্ষক ও ছাত্রের দায়বদ্ধতার জন্ম দেয়। ছাত্রকে ‘প্রতিপক্ষ’ ঠাহর করিবার, ‘শিক্ষা’ দিবার প্রবণতা উচ্চশিক্ষার এই ভিত্তিকে নস্যাৎ করিয়া দেয়। যে শিক্ষকেরা সে কাজটি করিবেন, তাঁহারা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করিবেন কি না, সে প্রশ্নটি কোনও মতেই তুচ্ছ নহে।

অন্য বিষয়গুলি:

M Jagdish Kumar JNU JNU VIOLENCE JNU ATTACK
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy