যখন যেখানে থাকেন, অথবা দেশ-বিদেশে যখন যা নিয়ে কথা হয়, সেই স্থান বা প্রসঙ্গকে নিজের কথায় টেনে আনতে পারার এক অলৌকিক প্রতিভা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আছে। অবশ্য, কুম্ভমেলায় পদপৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর মতো অপ্রিয় প্রসঙ্গ নয়; প্রধানমন্ত্রী পছন্দ করেন সেই সব প্রসঙ্গ, তরুণ প্রজন্মের কাছে যা ‘কুল’। তিনি মুম্বই ও আমদাবাদে ‘কোল্ডপ্লে’ নামক ব্যান্ডের তুমুল জনপ্রিয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের পর রাজ্যগুলিকে ‘কনসার্ট ইকনমি’র গুরুত্বের কথা মনে করিয়েছেন। কথাটি যে তিনি ভুল বলেছেন, তা নয়। গত এক-দেড় দশকে সঙ্গীতজগতের ব্যবসার চরিত্র পাল্টেছে। রেকর্ড-ক্যাসেট-সিডি’র যুগ অতিক্রম করে অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের জমানায় এখন ব্যবসার সিংহভাগ গান বিক্রি করে হয় না, কনসার্ট বা সঙ্গীতানুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে হয়। শ্রোতারা গান শোনার পাশাপাশি অনুষ্ঠানের উন্মাদনার অংশীদার হতে চান। ভারতে ‘কোল্ডপ্লে’র দু’টি অনুষ্ঠানে মোট সওয়া দু’লক্ষ শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় অবিশ্বাস্য একটি সংখ্যা। ১৩০ কোটি টাকারও বেশি প্রত্যক্ষ বাণিজ্য হয়েছে দু’টি অনুষ্ঠানে। বিদেশি শিল্পীর প্রয়োজন নেই, সম্প্রতি ভারতে পঞ্জাবি গায়ক দিলজিৎ দোসাঞ্জ-এর সঙ্গীতসফরে প্রত্যক্ষ ব্যবসা হয়েছে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকার। পাশাপাশি, শহরে বড় মাপের শিল্পীর অনুষ্ঠান আয়োজিত হলে পর্যটন, পরিবহণ, খাদ্য ইত্যাদি পরিষেবা ক্ষেত্রেও চাহিদা তৈরি হয়। তার হিসাব আলাদা। বর্তমান সঙ্গীতদুনিয়ার সফলতম শিল্পী টেলর সুইফট-এর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শহরের অর্থনীতির চেহারা বদলে গিয়েছে, এমন উদাহরণ একাধিক। ‘কনসার্ট ইকনমি’ বস্তুটি চরিত্রে জুমলা নয়। অনুমান, আগামী বছরের মধ্যে ভারতের ‘কনসার্ট ইকনমি’র আয়তন হবে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা।
প্রশ্নটি, অতএব, ‘কনসার্ট ইকনমি’র সম্ভাবনা নিয়ে নয়— প্রশ্ন বিবিধ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক অতিবৃহৎ অর্থব্যবস্থার কর্ণধারের হঠাৎ এই ‘কনসার্ট ইকনমি’র গুরুত্ব বিষয়ে অন্যদের সচেতন করার অতি-তৎপরতায়। প্রধানমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন যে, বাজার তার স্বধর্মে চালিত হবে, তিনি বলুন আর না-ই বলুন। যদি আর্থিক লাভের সম্ভাবনা থাকে, বাজার ‘কনসার্ট ইকনমি’ গুরুত্ব নিজেই বুঝবে। আর, রাজ্য সরকারগুলির সামনে জরুরিতর কাজ রয়েছে। যেমন, কেন্দ্রীয় সরকারেরও রয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনক রকম কম। চাহিদার গতিভঙ্গ অব্যাহত; অর্থপূর্ণ কর্মসংস্থানও দীর্ঘমেয়াদি চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। কৃষির অবস্থাও তথৈবচ। এই দিকগুলিতে নজর দেওয়া সরকারেরও কর্তব্য। ঘটনা হল, ভারতের মতো অতি-জনবহুল এবং প্রবল আর্থিক বৈষম্যের দেশে শুধুমাত্র জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশের হাতে বিপুল পরিমাণ টাকা থাকলেও, সংখ্যার বিচারে তা বহু উন্নত দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। ফলে, ‘কনসার্ট ইকনমি’র চাহিদা বজায় রাখার জন্য আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন ন্যূনতম যে লোকসংখ্যা প্রয়োজন, ভারতের তা আছে। কিন্তু, শুধু সেই জনগোষ্ঠীর কথা ভাবলেই সরকারের চলবে না। কাদের কথা ভাবা প্রয়োজন, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তাঁরা কুম্ভমেলার দিকে তাকাতে পারেন— সেই জনগোষ্ঠী ‘কোল্ডপ্লে’ বোঝেন না; ‘কনসার্ট ইকনমি’র সুফল তাঁদের কাছে চুইয়ে আসবে, সেই পথও অতি বন্ধুর। প্রধানমন্ত্রী এই মানুষগুলোর কথা ভাবুন, বাকিটা বাজার বুঝে নেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy