এক পদ এক পেনশন নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। ফাইল চিত্র।
সে রাম নেই, সে অযোধ্যাও নেই। নেই রামমন্দির নির্মাণের সেই তুমুল গৈরিক আবেগও। সরযূ-গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেকটা জল গড়িয়ে গিয়েছে। দিল্লির মসনদ আজ গৈরিক শিবিরের দখলেই। কিন্তু রামজন্মভূমির আবেগে ভেসে নয়, বরং অচ্ছে দিনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে। দেশজোড়া বিপুল প্রত্যাশা ছিল স্বাভাবিক কারণেই। প্রত্যাশাভঙ্গের বেদনাটা আজ তাই বিপুলতর। দেশের প্রান্তে প্রান্তে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ আজ।
ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল স্ফুলিঙ্গটাকে। সম্ভবত খেয়াল ছিল না, ফুৎকারে আগুন বেড়েও ওঠে অনেক সময়। দিল্লি সেই রকম এক আগুনেরই সাক্ষী হল। আর স্ফুলিঙ্গ থেকে বেড়ে ওঠা সেই আগুনটাতে মুখ পুড়ল বিজেপির, মুখ পুড়ল নরেন্দ্র মোদীর, মুখ পুড়ল গোটা সরকারের।
অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের জন্য ‘এক পদ, এক পেনশন’ নীতি সাফল্যের সঙ্গে কার্যকর করেছে তাঁর সরকার, বুক ঠুকে দাবি করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পূর্ববর্তী সরকারের জানাই ছিল না, এই নীতি আসলে কী, এমনও বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের এক সীমান্তে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মাঝে দীপাবলি উদযাপন করতে গিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কয়েকটা মাত্র দিন কেটেছে প্রধানমন্ত্রীর সেই সদর্প উচ্চারণের পর। ব্যুমেরাং হয়ে ফিরল পূর্বসূরিকে দেওয়া ‘এক পদ, এক পেনশন’-এর খোঁচা। এ নীতি আদৌ কার্যকর হয়নি— এমনই অভিযোগ তুলে দেশের রাজধানীতে হাজির হয়ে আত্মহত্যা করলেন এক প্রাক্তন সেনাকর্মী।
উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন সমাসন্ন। উগ্র জাতীয়তাবাদ গৈরিক শিবিরের সম্বল এখন। গো-বলয়ের হৃদয়পুরকে হস্তগত করতে সবে তূণীর থেকে সেই মোক্ষম অস্ত্রটা বার করেছিল বিজেপি। কিন্তু অস্ত্রে শান দেওয়ার মুহূর্তেই এল বড় ধাক্কা। ভোট টানতে যে সেনাবাহিনীকে নিয়ে এখন তুমুল টানাটানি গৈরিক শিবিরের, সেই বৃহত্তর সেনা পরিবারেরই এক সদস্য আত্মহত্যা করে বলে গেলেন, সরকার সত্য বলছে না।
অতএব, দেশ দেখল একটি মৃত্যুকে ঘিরে দিনভর রাজনীতি। উত্তাল হল রাজধানী, আগুন হয়ে উঠল রাজনৈতিক মহল। দিল্লির রাজপথ দিনভর রাহুল গাঁধী-অরবিন্দ কেজরীবালদের দখলে রইল।
মৃত্যুকে ঘিরে এমন রাজনৈতিক তৎপরতা কি আদৌ ইতিবাচক? প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু এই প্রশ্নের বিপ্রতীপে অবস্থান করছে অন্য অনেকগুলো প্রশ্ন। দিল্লির রাজপথে রাহুল-অরবিন্দদের দাপিয়ে বেড়ানোর সুযোগটা কে করে দিল? নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার এক সদস্য কোন বুদ্ধিতে আত্মঘাতী প্রাক্তন সেনাকর্মীর মানসিক ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন? বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা অথবা কোনও এক মুখ্যমন্ত্রী যদি দেশের একটি শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চান, তা হলে তাঁদের বাধা দেওয়ার অধিকার এবং নির্দেশ পুলিশ কোথা থেকে পেল? আত্মঘাতী ব্যক্তির পরিজনকেই বা কোন অপরাধে দিনভর থানায় আটকে রাখা হল?
এক দিনে এতগুলো প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছে সরকার। এই প্রশ্নগুলোর জবাব চাওয়া আজ খুব জরুরি। আজ যদি জবাব না চাই, তা হলে এ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটাই অদূর ভবিষ্যতে বেশ কয়েকটা প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy