ছবি: সংগৃহীত
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে এসেছেন যুবসমাজ। অফুরান প্রাণশক্তি, বুকভরা সাহস নিয়ে যে ভাবে ছাত্রছাত্রীরা সারা দেশে গর্জে উঠেছে, তা দেখে ভরসা জাগে। মনে হয়, মানুষের মধ্যে এখনও শুভবুদ্ধি বেঁচে আছে। শুধু তাই নয়, কবিগুরুর “অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী/ হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খৃস্টানী…”— এই ভাবনাও প্রতিধ্বনিত হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদে।
নাগরিকত্ব আইন কার পক্ষে কতটা লাভজনক হবে, কে কতটা বঞ্চিত হবেন, কোনও অভিসন্ধি নিয়ে আইন সংশোধন হল কি না বা এই আইনকে ‘একুশে আইন’ বলা যাবে কি না, তার উত্তর ভবিষ্যৎ দেবে। কিন্তু যে ভাবে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা ধারা লঙ্ঘন করে সুস্পষ্ট বিভাজন রেখা টেনে আইন সংশোধন করা হল, তা নিয়েই আপত্তি ছাত্রসমাজ ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দেশবাসীর। ভারতবর্ষ কোটি কোটি মানুষের মিলনক্ষেত্র। ভারতের বহুত্ববাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতাকে উপেক্ষা করে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। সেই আশঙ্কায় রুখে দাঁড়িয়েছে ছাত্রসমাজ। দেশের খ্যাতনামা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা পথে নেমেছেন। দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশে ছাত্রছাত্রীদের উপর পুলিশের অত্যাচার তাঁদের দমিয়ে দিতে পারেনি। বরং প্রতিবাদের আগুনে ঘি পড়েছে। শেষ কবে ছাত্রসমাজ এমন করে গর্জে উঠেছিল বলা কঠিন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের প্রতিবাদকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, কী ভাবে রাষ্ট্রের কর্তাদের মাথা নত করিয়ে ছাড়ে, আমরা তার সাক্ষী থেকেছি বহু বার। কিন্তু এবার অনন্য নজির গড়ল হেরিটেজ কলেজ, সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যামিটি ইউনিভার্সিটি, অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরাও সামিল হয়েছে এই আন্দোলনে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের কথায়, “দেশের ঐক্য অটুট রাখতে নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে কখনও স্লোগান দিয়ে, কখনও ‘সারে জঁহাসে অচ্ছা’ বা ‘সকল দেশের রানি’ গেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল পড়ুয়াদের মিছিল। রাস্তার ধারে মসজিদ থেকে ভেসে আসল সন্ধ্যার আজান। মিছিলে নেমে এল নীরবতা। যতক্ষণ আজান চলল ছাত্রছাত্রীরা একে অন্যের হাত শক্ত করে ধরে থাকল। তখন আমার মনে হচ্ছিল, সত্যিই আমরা ‘একই বৃন্তের দুটি কুসুম’।”
এটাই তো ভারতের প্রকৃত চিত্র। এঁরা যে স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি, গাঁধীজি, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের দেশের মানুষ। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কথায় ‘রুখে দাঁড়াবার সেই ভঙ্গিটা আজও/ চোখে পড়ে বলেই/ আমাদের মনে হয় যে, না,/ ঠিক এখুনি/ হাল ছেড়ে দেবার কারণ ঘটেনি।’ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলন, তাঁদের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। কোনও রাজনৈতিক দলের নির্দেশে নয়, কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়াতেও নয়। তাঁদের সংকল্প, প্রতিবাদের গর্জন কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে আইন সংশোধনকারীদের। কুর্নিশ জানাতেই হয় দেশের যুবসমাজকে। এ ভাবেই তাঁদের হাত ধরে দেশে রচিত হোক ভালবাসার স্বর্গ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy