Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: তার চেয়ে বরং...

দু’হাতে দুটো ভারী ব্যাগ, মেয়েটার ব্রায়ের স্ট্র্যাপটা বেরিয়ে গেছে, হাঁ করে গিলছে চার-পাঁচ জন ‘শিক্ষিত’ ষাট।

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৮ ০৯:৫৫
Share: Save:

এই রে, ট্রেনটা তো প্রায় স্টেশনে ঢুকে গিয়েছে, লেডিস কামরা অবধি যেতে গেলে পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেরি হয়ে যাবে! ‘চল, আজ জেনারেলেই উঠে পড়ি’— এর পর ঘিরে ধরা জনতার ভিড়। ডান দিকের সানগ্লাস পরা আঠারোর ছেলেটা চোখ ছুড়বে মেয়েটার কোমরের খাঁজে, সাতান্নর প্রবীণ কনুই রাখার স্থায়ী জায়গা পাবে মেয়েটার বুকে, ‘শসা চাই, পেয়ারা চাই’-এর মালিক কোনও তোয়াক্কা ছাড়াই মেয়েটার কাঁধ থেকে বুক, বুক থেকে পিঠ স্পর্শ করে বলবে, ‘‘একটু সরে যান তো, দিদি!’’ ছেলেটার মাথায় তখন আগুন জ্বলছে। ইচ্ছে করছে দু’হাত দিয়ে আগলে নিতে মেয়েটাকে, ভিড় থেকে যেটুকু বাঁচানো যায়! উঁহু, সমাজ বলেছে এটা অপরাধ। এই আগলে রাখা ‘নোংরামি’ বলে পরিচিত।

দু’হাতে দুটো ভারী ব্যাগ, মেয়েটার ব্রায়ের স্ট্র্যাপটা বেরিয়ে গেছে, হাঁ করে গিলছে চার-পাঁচ জন ‘শিক্ষিত’ ষাট। ছেলেটা ভিড়ের মধ্যে চাইছে নিজের হাতের ব্যাগ দুটো এক হাতে নিয়ে মেয়েটার টি-শার্টটা দিয়ে ঢেকে দিতে স্ট্র্যাপটা। খবরদার! সমাজ বলেছে এটা অপরাধ। মার না খেতে চাইলে ওদের ব্রা দেখে আরাম পেতে দাও, তা তোমার যতই কষ্ট হোক।

তার চেয়ে বরং অসামাজিক হই, মেট্রোয় হ্যান্ডেলের নাগাল না পেয়ে ‘শিক্ষিতের’ গায়ে বার বার পড়ে না গিয়ে ধরে রাখি বন্ধুর জামাটা, দাগ দেখে ওদের হাসতে না দিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করি, ‘‘আমার পিরিয়ড হয়েছে, দাগ লেগে গিয়েছে, ও ভাবে দেখছেন, কিছু বলবেন?’’, সামনের লোকটাকে মেয়েটার দিকে অশ্লীল চোখে তাকাতে দেখে বলি, ‘‘ও দাদা, আরাম পাচ্ছেন?’’

যাঁরা বলছেন, ‘‘এখনকার যুগের ছেলেমেয়েরা সমাজটাকে নোংরা করে ছাড়ছে’’— সেই ‘শিক্ষিত’দের একটাই কথা, আপনাদের সমাজ আপনাদেরই দিয়ে গেলাম। সঙ্গে দুটো ফিনাইল। কাজে নেমে পড়ুন। আমরা বরং অসামাজিক হই!

স্মিতা ভট্টাচার্য ঘোলা, বাঁকুড়া

লাগাম দরকার

মেট্রোতে তরুণ যুগলের হেনস্থায় আমি ব্যথিত, এ কথা বার বার বলছি। কিন্তু তবুও বলছি, কিছুটা লাগাম দরকার। আমি বেশির ভাগ সময়ই প্রবীণ নাগরিকদের খোপগুলোতে যাত্রা করি, যেগুলো প্রতিটি কামরার কোনাতে অবস্থিত, দেখেছি এই খোপ এবং তার লাগোয়া দরজাগুলো প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে তরুণ যুগলদের অধিকারে চলে যায়। অনেক সময়েই এঁরা ওঠেন দল বেঁধে। অর্থাৎ বেশ কয়েকটি যুগল। এঁদের জার্নি টাইম দশ থেকে পনেরো মিনিট। এই সময়টায় অন্য যাত্রীদের তোয়াক্কা না করে, সিট থেকে দরজা পর্যন্ত যাতায়াতের জায়গাটুকু নিজেদের ইচ্ছেমতো দখল করে গল্প আলিঙ্গন খুনসুটি ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকেন। একটু বোঝার চেষ্টা করুন, বিশেষত সেই সমস্ত সৌভাগ্যবান যাঁদের মেট্রোতে উঠতে হয় না— পাশাপাশি হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়ালে অন্য যাত্রীদের যাতায়াত যতটা সহজ হয়, মুখোমুখি বেশ কয়েকটি যুগল যদি গোটা এলাকাটা, বিশেষ করে দরজা জুড়ে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে থাকেন, তবে কী বিপত্তিই না ঘটে! পনেরো মিনিট মেট্রোযাত্রার সময়টুকু যাত্রীদের কাছ থেকে একটু সংযম আশা করাটা কি প্রবীণ নাগরিকদের পক্ষে প্রবল অন্যায়?

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত কলকাতা-৪০

তখন কোথায়?

বাণী বসু (‘কেন এমন ঘটল, ভাবতে হবে সেটাও’, ৩-৫) লিখছেন, ‘‘হঠাৎ ওই দুই তরুণ-তরুণীর আচরণ কেন এত জনের খারাপ লাগল, সে ভাবনাটা এড়িয়ে যাওয়াও ঠিক নয়। মেট্রোর কামরায় ওই দু’জনের আলিঙ্গনও সমর্থনযোগ্য নয়।’’ হ্যাঁ, কেন ওই যুগলের আচরণ সকলের খারাপ লাগল সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া অনুচিত, কিন্তু প্রকাশ্যে দুটি মানুষের আলিঙ্গন বা চুম্বন কি সমাজবিরোধী কার্যকলাপ? এ তো কোনও দণ্ডনীয় অপরাধ নয়, তারা রীতিমতো সাবালক এবং তাদের ভালবাসার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু তাদের প্রহার করাটা দণ্ডনীয়, কারণ সে অধিকার কারও নেই। আশ্চর্য, এই ব্যক্তিদের সমাজচেতনা প্রকাশ্যে আলিঙ্গন দেখলে বৃহৎ আকার ধারণ করে; কিন্তু প্রকাশ্যে নারী-নির্যাতনের সময়, প্রকাশ্যে ধর্ষণের সময় এঁদের কাউকে তো দেখা যায় না!

শতদল সেনগুপ্ত কলকাতা-৫২

যা ইচ্ছে তা-ই

বাণী বসুর লেখা অত্যন্ত সুচিন্তিত এবং সময়োপযোগী। আজকাল তো ব্যক্তিস্বাধীনতা, আধুনিকতা আর প্রগতিশীলতার নামে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারা যায়। মেট্রোর যুগলকে মারধর করা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু একটি ট্রেনে বিভিন্ন বয়সের যাত্রীবোঝাই পরিবেশে কোনও তরুণ-তরুণী জড়াজড়ি করে অশ্লীল ভাবে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন— এটা কি কোনও সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে? আমার শরী‌র, আমার মন, অতএব এর উপর কারও অধিকার নেই— এই যুক্তিতে আমি যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারি? এই সমাজটা তোমার একার নয়। এখানে কিছু রীতি, নীতি, শৃঙ্খলা, শালীনতা আছে, যা সমাজের কাঠামোকে ধরে রেখে মানুষকে বন্য হয়ে ওঠার প্রবৃত্তি থেকে নিবৃত্তি দিতে সাহায্য করে। এই মূল্যবোধকে ধরে রাখার পক্ষে সওয়াল না করে, প্রগতিশীলতার নামে এর বাঁধনকে যদি আলগা করে দিই, তা হলে তো বন্য সমাজে ফিরে যাওয়ার পথকেই আমরা সুগম করছি। যে ব্যক্তিগত যৌনস্বাধীনতা বেডরুমের চার দেওয়ালের মধ্যে সুরক্ষিত রাখার কথা নিজ দায়িত্বে, তাকে প্রকাশ্যে রাস্তায়, বাসে, ট্রামে, ট্রেনে নিয়ে এসে সমাজকে কলুষিত করার অধিকার কারও নেই।

মিহির কানুনগো কলকাতা-৮১

বনাম নয়

যে ঘটনা স্থান, কাল, পাত্র ভেদে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বিভিন্নতা এবং শোভন-অশোভনের বিভাজনরেখা সম্পর্কে সম্যক আলোচনার সূত্রপাত করতে পারত, সেটাকে নবীনদের সঙ্গে প্রবীণদের সংঘাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এমন মনে করার কোনও কারণ নেই যে কেবল নবীনরাই অশোভন আচরণ করেন এবং প্রবীণরা করেন না। আবার, সে দিন যারা যুগলকে নিগ্রহ করেছিল তারা কি সবাই প্রবীণ? শারীরিক নিগ্রহ কখনওই আইনানুগ নয়, কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই রকম ঘটনা (গণপ্রহার) ঘটেই চলেছে। নবীনরা কি সেই সব গণপ্রহারে অংশগ্রহণ করছে না? মেট্রোর কামরায় অনুরূপ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এই পত্রলেখক। তাকে নিছক আলিঙ্গন বললে অতি-সরলীকরণ করা হয়। শ্লীলতা-অশ্লীলতার বিভাজনরেখা টানা কঠিন, কিন্তু যে সমাজে বাস করছি, তার দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে ধারণা থাকা দরকার। এমন ঘটনা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের বিরক্তি উত্পাদন করে না, কিশোর-কিশোরী মনে কুপ্রভাব বিস্তার করে।

বীরবিক্রম চৌধুরী কলকাতা-৮৪

এটাই সভ্যতা?

পাবলিক প্লেস এ ধরনের আচরণের জায়গা নয়। এমনিতেই তো রাস্তাঘাটে এ জন্য চোখে অাঙুল দিতে হয়। আজকাল নাকি এটাই সভ্যতা। এটা যারা সমর্থন করে না তারা নাকি মান্ধাতার আমলে পড়ে আছে। সে দিন যুবকটি পাল্টা রুখে দাঁড়িয়ে তর্কাতর্কি করে জনরোষ বাড়িয়ে দেয়। সে দুঃখ প্রকাশ করে নিলে অমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটত না।

মুস্তফী অমর নাথ কলকাতা-৮৪

ঋণস্বীকার

আমার লেখা ‘অন্দরের মেয়েদের আঁচলেই বাঁধা আছে বিপ্লবের মুক্তি’ নিবন্ধটির (রবিবাসরীয়, ৬-৫) অধিকাংশ তথ্য, উদ্ধৃতি-চিহ্নের মধ্যে রাখা বাক্যবন্ধ এবং ছবি (চারু মজুমদারের ছবিটি বাদে) নেওয়া হয়েছে ‘লীলাদি/এক অন্য রাজনৈতিক যাপন’ বই থেকে। যার সম্পাদক মৌসুমী ভৌমিক। প্রকাশক: ঋত প্রকাশন। এই কথা লেখার শেষে ঋণ স্বীকারে ছিল, ছাপার সময়ে বাদ পড়েছে। এই স্বীকৃতি ছাপার অক্ষরে থাকা জরুরি।

অশোককুমার মুখোপাধ্যায় কলকাতা-৯১

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

অন্য বিষয়গুলি:

couple assault indian society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE