Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কৈশোরের সুরক্ষা

দোষ কেবল প্রযুক্তির নহে। শিশুর প্রতি অপরাধের ক্ষেত্র সমাজ তৈরি করিয়াই রাখিয়াছে, ফলে দুষ্কৃতীদের কাজট

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

সম্প্রতি কলিকাতা ও শহরতলির লোকালয় হইতে পর পর কয়েকটি নাবালিকা উদ্ধার হইল। তাহাদের বন্দি করিয়া যৌন পেশায় নামিতে বাধ্য করিয়াছিল অপরাধীরা। পুলিশের মতে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করিয়া এই চক্রগুলি চলিতেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। ইতিপূর্বে সোনাগাছির ন্যায় পল্লিতে যৌনকর্মীদের নিজস্ব সংগঠনগুলি নাবালিকাদের প্রবেশ ঠেকাইত, পেশাকে অপরাধমুক্ত রাখিবার চেষ্টা করিত। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে সংযোগের সুযোগ লইয়া যৌনব্যবসা যত ছড়াইয়া পড়িতেছে, ততই সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ কমিতেছে। তাহাতে বালিকা ও কিশোরীরাই যে বিশেষ করিয়া বিপন্ন হইবে, তাহা আশ্চর্য নহে। চৌদ্দ-পনেরো বৎসরের কিশোরীরা কখনও কাজের সন্ধান করিতে, কখনও বন্ধুত্ব করিতে গিয়া প্রতারিত হইতেছে। নির্যাতন, বন্দিদশা ও অসহায় ভাবে যৌন কার্যে যোগদান, এই নকশায় অগণিত শৈশব-কৈশোর বাঁধা পড়িতেছে। অপরাধীরা মোবাইল ফোন ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে নানা স্তরে কাজে লাগাইতেছে। কিশোরীদের সহিত সংযোগ তৈরি করিতে, তাহাদের মিথ্যা আশ্বাসে ভুলাইয়া আকর্ষণ করিতে ব্যবহৃত হইতেছে সোশ্যাল মিডিয়া। একই ভাবে নাবালিকার সম্পর্কে বিবিধ তথ্য সরবরাহ করিয়া খরিদ্দারের সহিত সংযোগ, লেনদেন প্রভৃতিও চলিতেছে। বালিকার আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করিবার ভয় দেখাইয়া তাহাকে যৌন কার্যে বাধ্য করা হইতেছে।

দোষ কেবল প্রযুক্তির নহে। শিশুর প্রতি অপরাধের ক্ষেত্র সমাজ তৈরি করিয়াই রাখিয়াছে, ফলে দুষ্কৃতীদের কাজটি সহজ। অতি-শৈশব হইতে শিশুর আগ্রহের প্রায় সকল বস্তু তাহার জন্য নিষিদ্ধ করিয়া অভিভাবকেরা তাহাকে আগলাইতে চেষ্টা করেন। যৌনতা সম্পর্কিত সকল প্রশ্ন বড়দের নিকট আপত্তিকর, মোবাইলে বন্ধুত্ব পাতাইলেও তাহা গোপন রাখিতে হয়, কারণ বিপরীত লিঙ্গের সহিত মেলামেশা নিষিদ্ধ। ফলে নিজের সিদ্ধান্ত লইয়া সংশয় হইলেও সন্তান অভিভাবককে প্রশ্ন করিতে পারে না। পরামর্শ লইতে পারে না। উপরন্তু পরিবার ও প্রতিবেশীর নিকট নিন্দিত হইবার ভয়ে তাহারা এমনই সঙ্কুচিত হইয়া থাকে যে, অপরাধীরা সহজেই তাহার সুযোগ লইয়া তাহাদের আবদ্ধ করিতে পারে। অতএব প্রতিরোধের উপায় চিন্তা করিতে চাহিলে শৈশব-কৈশোর হইতেই সক্ষমতার শিক্ষা দিতে হইবে। তাহার একটি অবশ্যই প্রযুক্তি ব্যবহারের পাঠ। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করিয়া কী ধরনের প্রতারণা ঘটিয়া থাকে, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে কী ধরনের সতর্কতা প্রয়োজন, তাহার প্রশিক্ষণ স্কুলের শিক্ষার সহিত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। ‘ডিজিটাল সাক্ষরতা’র একটি আবশ্যক অঙ্গ ডিজিটাল সুরক্ষা। তাহা সকল শিশুর অধিকার। সেই সঙ্গে নিজের দেহ ও মর্যাদা সম্পর্কে শিশুদের মনে প্রত্যয় জাগাইবার শিক্ষা চাই। সম্প্রতি অনেক বেসরকারি স্কুলে ‘খারাপ স্পর্শ’ কী, এবং কী করিয়া তাহার মোকাবিলা করিতে হয়, সে সম্পর্কে পড়ুয়াদের সচেতন করিতেছেন শিক্ষকরা। এই শিক্ষা সব স্কুলেই দিতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে, নাবালিকা পাচার, বিক্রয় বা যৌনকর্মে নিয়োগের পেশা এমনই লাভজনক যে দুষ্কৃতীদের নির্মূল করা দুঃসাধ্য। সক্ষম করিতে হইবে শিশুকেই। শিশুর সঙ্কোচ ও ভয়ের সুযোগ লইয়াই তাহার নির্যাতন ঘটিতেছে। নিজের দেহ সম্পর্কে সঙ্কোচহীন, আত্মমর্যাদা সম্পর্কে সচেতন এবং সমাজ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক শিশুই সুরক্ষিত শিশু।

অন্য বিষয়গুলি:

Sex Racket Social Media Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy