বাস্তবটাকে অস্বীকার করার আর কোনও উপায় নেই। তৃণমূলের বিপুল জয় হল দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রে ঠিকই। কিন্তু, এই উপনির্বাচনের ফলাফল এ-ও প্রমাণ করে দিল যে, এ রাজ্যে নজিরবিহীন দ্রুততায় সমর্থন বাড়ছে বিজেপি-র। একটি মাত্র বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল ঠিকই। কিন্তু দক্ষিণ কাঁথি কোনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়, সেখানে কোনও অভূতপূর্ব বা নজিরবিহীন পরিস্থিতির মধ্যেও ভোট হয়নি। তাই, তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে বিজেপি-র উত্থানের বাস্তবকে আর অস্বীকার করা যাবে না।
বিজেপিকে দীর্ঘ দিন অচ্ছুৎ তকমা দিয়ে রেখেছিলেন অনেকেই। বামপন্থী, মধ্যপন্থী, জাতীয়তাবাদী— সকলেই সেই তালিকায় ছিলেন। কেউ বলেছেন ‘সাম্প্রদায়িক’, কেউ বলেছেন ‘বর্বর দল’। সেই সব মন্তব্যের একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া যেন স্রোতের মতো আসতে শুরু করেছে এ বার। এ রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের বহু দিনের দুর্গ কাঁথি। এক বছর আগের নির্বাচনে সেখানে ৯ শতাংশের মতো ভোট পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। এ বারের উপনির্বাচনে বিজেপি-র তরফে তেমন জোরদার প্রচার ছিল না। তা সত্ত্বেও এক লাফে ৩১ শতাংশে পৌঁছে গেল ‘পদ্মফুল’। একে উত্থান ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে! যাঁরা অস্পৃশ্য বলতেন বিজেপিকে, তাঁরাই বা এখন কী বলবেন? বিপুল সংখ্যক মানুষ সমর্থন করছেন দলটাকে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই সমর্থন করছেন। এত মানুষকে একসঙ্গে কি ‘সাম্প্রদায়িক’ বা ‘বর্বর’ বলা যাবে? নাকি অস্পৃশ্য করে দেওয়া যাবে?
দক্ষিণ কাঁথির উপনির্বাচনে ভোট তৃণমূলেরও বেড়েছে। কিন্তু সে বৃদ্ধি খুব আশ্চর্যজনক নয়। দু’একটি নগণ্য ব্যতিক্রম বাদ দিলে, এ রাজ্য যে কোনও উপনির্বাচনেই শাসকের বিপুল জয় দেখতে অভ্যস্ত। তাই তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক অটুট থাকার চেয়ে বিজেপি-র ভোট শতাংশের উল্লম্ফনের রাজনৈতিক তাৎপর্যটা খানিকটা বেশিই।
প্রশ্ন হল, দক্ষিণ কাঁথির রায় কি হিমশৈলের চূড়া মাত্র? না কি এ এক সামগ্রিক ছবি? ছবিটা যদি সামগ্রিক হয়, তা হলে এ রাজ্যের শাসক দলের চিন্তিত হওয়ার সময় আসেনি। কিন্তু দক্ষিণ কাঁথি যদি কোনও নিমজ্জিত সুবিশাল হিমশৈলের অগ্রভাগ হিসেবে উঁকি দিয়ে থাকে, তা হলে বিজেপি চমকে দিতে পারে। চমকে দিতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসটা যে পথে হেঁটেছে, সেই পথ এ বার একটা অন্য রকম বাঁক নিতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy