Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
farmer's movement

ছল, বল ও কৌশল

২৬ জানুয়ারি কৃষকদের প্রস্তাবিত সমাবেশকে অশান্তির উপলক্ষ না ভাবিয়া ‘প্রজাতন্ত্র’-এর একটি রূপ বলিয়া চিনিবার চেষ্টা কি করিবেন শাসকরা?

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০০:১৮
Share: Save:

কেন্দ্রীয় সরকার অব্যাহতি চাহিয়াছিল। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সেই চাহিদা পূরণের সুযোগ আছে। কিন্তু অতি বড় কুশলী খেলোয়াড়ও অনেক সময়েই গোল করিবার সুবর্ণসুযোগ পাইয়া জালে বল ঠেলিতে ব্যর্থ হন। আর, নরেন্দ্র মোদী ও তাঁহার সহ-খেলোয়াড়দের কুশলী বলিলে বড় রকমের মিথ্যাচার হইবে। তাঁহাদের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক অপদার্থতা অবিশ্বাস্য। কার্যত ক্ষমতায় আসিবার সূচনা হইতে, বিশেষত নোটবন্দির মুহূর্ত হইতে তাঁহারা ধারাবাহিক ভাবে কাণ্ডজ্ঞানহীন, দায়িত্ববোধরহিত এবং আত্মম্ভরী অপদার্থতার নব নব নজির সৃষ্টি করিয়া আসিতেছেন। কৃষক আন্দোলনের মোকাবিলায় তাঁহাদের দম্ভ এবং নির্বুদ্ধিতা নিজেদের সমস্ত রেকর্ড ভাঙিয়া দিয়াছে। অতিমারির অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সংসদে কার্যত জবরদস্তি করিয়া তিনটি বিল পাশ করাইয়া লইবার পরে তাঁহারা যে প্রতিরোধ ও প্রতিস্পর্ধার সম্মুখীন, তাহা ইতিমধ্যেই তাঁহাদের সম্পূর্ণ নাজেহাল করিয়া দিয়াছে। স্বভাবসিদ্ধ ছল, বল ও কৌশল প্রয়োগ করিতে গিয়া তাঁহারা ক্রমাগত পর্যুদস্ত হইয়াছেন, প্রতিবাদী কৃষকদের তীক্ষ্ণ ও সচেতন প্রশ্নবাণ তাঁহাদের সমস্ত ছলনাজাল ছিন্ন করিয়াছে, শেষ অবধি পরাক্রমী শাসকরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হইয়াছেন। সমাধানের জন্য নহে, আত্মরক্ষার জন্য।

আদালতের ব্যবস্থাপত্রে শাসকদের আত্মরক্ষার জন্য একাধিক ঢালের বন্দোবস্ত আছে। এক, কৃষি আইনের প্রয়োগ স্থগিত রাখিবার বিধান। দুই, কৃষকদের সহিত আলোচনার জন্য চার সদস্যের কমিটি। দুইটি ব্যবস্থা লইয়াই প্রশ্ন উঠিতে পারে। প্রথমত, আইনের সাংবিধানিক ত্রুটিবিচ্যুতি বিচারের অধিকার অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের আছে, কিন্তু আদালত নিজেই স্পষ্ট বলিয়াছে, তাহারা সেই বিচারে যাইবে না। তবে আইনের প্রয়োগ স্থগিত করিবার যৌক্তিকতা ঠিক কোথায়? আইনসভা ও প্রশাসনের সহিত বিচারবিভাগের এক্তিয়ারের সীমারেখাটি মান্য হইল কি? ‘অচলাবস্থা’ দূর করিবার ব্যবহারিক লক্ষ্য এই সংশয় নিরসন করে না, কারণ সাংবিধানিক সীমারেখার গুরুত্ব ব্যবহারিকতার ঊর্ধ্বে। দ্বিতীয়ত, ব্যবহারিকতার মাপকাঠিতেও স্থগিতাদেশের কার্যকারিতা প্রশ্নাতীত নহে। প্রতিবাদীরা আইন রদ করিবার দাবি জানাইতেছেন, স্থগিত করিবার নহে। ঠিক তেমনই, তাঁহারা আগেই জানাইয়াছেন যে, সরকারের সহিত ‘অর্থহীন’ আলোচনা চালাইয়া যাইতে তাঁহাদের আগ্রহ নাই। সুপ্রিম কোর্টের নির্মিত কমিটির সদস্যরা সকলেই ঘোষিত ভাবে কৃষি আইনের সমর্থক, তাঁহারা কী ভাবে আন্দোলনরত কৃষকদের অনাগ্রহ দূর করিবেন? মহামান্য আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখিয়াও প্রশ্নগুলি তোলা জরুরি।

কেন্দ্রীয় সরকার যদি নির্বোধ দম্ভ ছাড়িয়া সমস্যা সমাধানের ব্যবহারিক যুক্তি মানিতে চাহে, তবে প্রথম কাজ, আন্দোলনকারী কৃষকদের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসাবে না দেখিয়া এবং যাবতীয় সস্তা অহংবোধ বিসর্জন দিয়া তাঁহাদের কথা শোনা। ইহা জয় পরাজয়ের লড়াই নহে, গণতান্ত্রিক মানসিকতার পরীক্ষা। সেই মানসিকতার ঘাটতি নির্বাচনী সাফল্যে পূরণ হইবার নহে। গত সাড়ে ছয় বছরে মোদী সরকারের চালকরা সেই পরীক্ষায় ডাহা ফেল করিয়াছেন। প্রতিবাদী কৃষকরা তাঁহাদের সেই ব্যর্থতাকেই চিহ্নিত করিয়া সংগঠিত, সরব ও সক্রিয়। তাঁহাদের আন্দোলন ইতিমধ্যেই তাহার নির্দিষ্ট দাবিদাওয়ার সীমা ছাড়াইয়া এক বৃহত্তর ও গভীরতর প্রতিস্পর্ধার প্রতীক হইয়া উঠিয়াছে। শাসকরা এই সত্য অনুধাবন করিয়া তাহাকে সম্মান জানাইতে পারিবেন কি? ২৬ জানুয়ারি কৃষকদের প্রস্তাবিত সমাবেশকে অশান্তির উপলক্ষ না ভাবিয়া ‘প্রজাতন্ত্র’-এর একটি রূপ বলিয়া চিনিবার চেষ্টা করিবেন কি? এই সঙ্কট তাঁহাদের আত্মশুদ্ধির এক সুবর্ণসুযোগ আনিয়া দিয়াছে, কিন্তু সুযোগ থাকিলেই হয় না। সব রত্নাকর বাল্মীকি হন না।

অন্য বিষয়গুলি:

farmer's movement BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy