চিনের কৌশলী মারপ্যাঁচ বোঝা কঠিন। এবং প্রতিবেশী দেশ যখন সেই কৌশলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, তখন তার উদ্বেগ কঠিনতর। কয়েক সপ্তাহ আগেই পূর্ব লাদাখে সেনা অবস্থান নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার ফলে ভারত-চিন সীমান্ত বিবাদ পরিস্থিতি এখন তুলনামূলক ভাবে স্থিতিশীল হলেও সম্প্রতি চিন-নিয়ন্ত্রিত তিব্বতে ইয়ার্লুং সাংপো নদের নিম্ন উপত্যকায় বেজিং-এর বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত দিল্লির রক্তচাপ বাড়াচ্ছে। লক্ষণীয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারত-চিন বিতর্কিত সীমান্তের অনতিদূরে অরুণাচল প্রদেশে ঢোকার বাঁকের মুখে তৈরি হতে চলেছে বাঁধটি। প্রস্তাবিত বিশ্বের বৃহত্তম এই নদীবাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে বেজিং-এর তরফে যুক্তি দুই প্রকার— এক, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং দুই, আঞ্চলিক উন্নয়ন। ইয়ার্লুং সাংপো-র জলবিদ্যুৎ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব হবে যা চিনের পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অন্য দিকে, কর্মসংস্থান এবং পরিকাঠামোগত উন্নতির মাধ্যমে এই বাঁধ সাহায্য করবে তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও। এ দিকে ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে এই নদী দু’টি প্লেট-এর সংযোগস্থলে অবস্থিত। তাই এখানে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে কৃত্রিম উপায়ে বাধা দেওয়া হলে আশঙ্কা থাকে ভূমিকম্পের।
ফলে ভারতের উদ্বেগ যুক্তিসঙ্গত। ইয়ার্লুং সাংপো, যা ভারতে সিয়াং ও ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত, একাধিক রাজ্যের জীবনরেখা স্বরূপ। ভারত এই নদীর নিম্নতীরবর্তী রাষ্ট্র হওয়ায় নদীর জলকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে চিন। প্রবল বর্ষায় চিনের তরফে বাড়তি জল ছাড়া হলে তা অসম এবং অরুণাচল প্রদেশের বন্যা পরিস্থিতি ঘটাতে পারে। অন্য দিকে, শুখা মরসুমে বেজিং নদীর জল আটকে রাখলে প্রভাব পড়বে এই অঞ্চলের কৃষি, পানীয় জল সরবরাহ এবং জলবিদ্যুৎ শক্তির উপরে। শুধু তা-ই নয়, জলের প্রবাহ হ্রাসের ফলে নদীতে পলি জমবে, প্লাবনভূমির মাটির উর্বরতা কমাবে। ভারতের মোট মিষ্টি জলের ৩০ শতাংশ আসে ব্রহ্মপুত্র থেকে, যা এই অববাহিকা অঞ্চলের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীববৈচিত্রও। লক্ষণীয়, নদীর জলবণ্টন নিয়ে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিবাদ তত্ত্বগত ভাবে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব, যে-হেতু দুই দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি রয়েছে ভারতের। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের ক্ষেত্রে এখনও তা না থাকায়, বেজিং-এর বিরুদ্ধে কোনও কূটনৈতিক চাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ভারতের পক্ষে।
চিনের এ-হেন বাঁধের প্রভাব প্রতিহত করতে অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং নদীর উপরে ১০ গিগাওয়াট-এর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। যদিও স্থানীয় বিরোধিতা এবং পরিবেশগত সমস্যার জেরে এর বাস্তবায়ন জটিলতার সম্মুখীন। তবে চিনের এ-হেন আধিপত্য প্রশমিত করতে আরও জোরদার আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়ন গড়ে তুলতে হবে ভারতকে। চিনের এ-হেন পদক্ষেপের প্রভাব যে-হেতু বাংলাদেশেও পড়তে চলেছে, তাই পড়শি রাষ্ট্রটির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ব্রহ্মপুত্রের জলবণ্টন চুক্তি সম্পন্নে রাজি করানো ছাড়া গত্যন্তর নেই দিল্লির কাছে। ব্রহ্মপুত্রের জলসম্পদ তথ্য আদানপ্রদানের প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে চিনের উপরে কূটনৈতিক চাপও তৈরি করতে হবে। জটিল পরিস্থিতি বটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy