Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

প্রত্যাখ্যানের সংস্কৃতি

প্রত্যাখ্যানই যেখানে সংস্কৃতি, সেখানে সাধারণ এবং অ-সাধারণে কার্যত কোনও পার্থক্য নাই। কথাটির যাথার্থ্য কলিকাতার ট্যাক্সি পরিষেবা বারংবারই প্রমাণ করিয়াছে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

প্রত্যাখ্যানই যেখানে সংস্কৃতি, সেখানে সাধারণ এবং অ-সাধারণে কার্যত কোনও পার্থক্য নাই। কথাটির যাথার্থ্য কলিকাতার ট্যাক্সি পরিষেবা বারংবারই প্রমাণ করিয়াছে। সম্প্রতি অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সির ক্ষেত্রেও যাত্রীসাধারণের অভিজ্ঞতা কিছু অন্য রকম হইল না। তবে প্রযুক্তি-নির্ভর বলিয়াই মুখের উপর ‘যাইব না’ বলা চলে না। তাই প্রত্যাখ্যান হইতেছে অন্য পথে। অধিক দূরত্ব এবং অপছন্দের গন্তব্য পড়িলেই নানাবিধ অজুহাতে চালক উপভোক্তাকেই সফর বাতিল করিতে চাপ দিতেছেন। এবং ক্ষতিপূরণ হিসাবে কিছু অতিরিক্ত অর্থও লাভ করিতেছেন। এই দেশে সততা বস্তুটি সহজলভ্য নহে। অ্যাপ-ক্যাবের ক্ষেত্রেও, অসৎ আসিয়া সতের উপস্থিতি ঢাকিয়া দিতেছে। এবং সেই অ-সততার শাস্তির উদাহরণও তেমন মিলে নাই, ঐতিহ্যগত ভাবেই।

অথচ, অ্যাপ-ক্যাব চালু হইবার পর আশা করা হইয়াছিল সাধারণ ট্যাক্সির প্রত্যাখ্যানের সংস্কৃতি এবং ভাড়া লইয়া চালকের কারচুপির নিরসন ঘটিবে। কিছু অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ট্যাক্সিসফরে আরাম এবং ভাড়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা পাওয়া যাইবে। নিঃসন্দেহে গোড়ার দিনগুলিতে সেই আশা পূরণ হইবার সম্ভাবনাও দেখা গিয়াছিল। তীব্র গরম, দূষণে নাজেহাল হইবার হাত হইতে মুক্তি, ভাড়া লইয়া চালকের সহিত বচসা নাই। উপরন্তু শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যানে প্রায় গৃহের দরজা হইতে গন্তব্যস্থলে ভ্রমণ। এবং তাহাও সাধারণ ট্যাক্সির তুলনায় সামান্য কিছু বেশি অর্থের বিনিময়ে। অ্যাপ-ক্যাব প্রকৃত অর্থেই গাড়িবিহীনদের ব্যক্তিগত যানসফরের সুখ আনিয়া দিয়াছিল। কিন্তু এই সুখসফরগুলি এখন অনেক ক্ষেত্রেই অ-সুখ সফরে পর্যবসিত। ঝড়-ঝঞ্ঝার রাত্রে, মেট্রো বিপর্যয়ে অথবা উৎসবের দিনে অ্যাপ-ক্যাবের দেখা মিলে না। মিলিলেও ভাড়ায় অঙ্গুলি স্পর্শ করা যায় না। এক সময় গভীর রাত্রে রেলস্টেশন, এয়ারপোর্ট কিংবা হাসপাতালে ছুটিতে হইলে ট্যাক্সির দেখা মিলিত না, কিন্তু অ্যাপ-ক্যাব ঠিক সময় দুয়ারে হাজির হইত। এখন যে মিলে না, তাহা নহে, তবে সংখ্যা যথেষ্ট কমিয়াছে। এবং দূরত্ব বুঝিয়া প্রত্যাখ্যানও চলিতেছে। এক কথায়, যে পারস্পরিক বিশ্বাস লইয়া অ্যাপ-ক্যাব কলিকাতায় যাত্রা শুরু করিয়াছিল, সেই বিশ্বাস অনেকাংশে ভাঙ্গিয়াছে। হয়তো নির্ভরতায় এখনও সরাসরি বড় কোপ পড়ে নাই, তবে যাত্রীদের মধ্যে অ্যাপ-ক্যাবকে ঘিরিয়া ক্ষোভ বাড়িতেছে।

বিশ্বাসভঙ্গের আরও বড় কারণ, প্রতারণা। দূরত্ব এবং অপছন্দের গন্তব্যের কারণে ট্যাক্সির যাত্রী প্রত্যাখ্যানে কলিকাতার মানুষ এত দিনে অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছেন। কিন্তু ট্যাক্সিও মিলিল না, অথচ সফর বাতিলের ক্ষতিপূরণ উপভোক্তাকেই গনিতে হইল, এই নূতন বেনিয়মের সঙ্গে তাঁহারা এযাবৎকাল পরিচিত ছিলেন না। ইহা প্রতারণারই নামান্তর। এবং যে ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে লোক ঠকাইবার এই প্রবণতা প্রবেশ করিয়াছে, তাহাকে শুদ্ধ করিবার কাজটি সহজ নহে। কাঠামো যতই অত্যাধুনিক হউক না কেন, ভিতরের পচন ঢাকা পড়িবে না। নিত্যনূতন পন্থায় তাহা পুনরায় আত্মপ্রকাশ করিবে। এবং যে হেতু এই দেশে উপভোক্তার অধিকারগুলি এখনও যথেষ্ট সুরক্ষিত নহে, এবং তাহা আদায় করিতে উপভোক্তারাও যথেষ্ট সচেতন নহেন, সেই হেতু তাঁহারাই বারংবার এই হয়রানির, প্রতারণার শিকার হইতে থাকিবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Taxi App Cab Kolkata Refusal No Refusal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE