Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Primary Education

প্রাথমিকে প্রথম

অতিমারি পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যে চিত্রটি সচরাচর উঠিয়া আসে, সমীক্ষার চিত্রটি তাহার সঙ্গে যেন মেলে না।

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০৪
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গ প্রথম হইল। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পর্ষদের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলিতেছে যে, প্রাথমিক শিক্ষায় দেশের বৃহৎ রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষ স্থানে। বুনিয়াদি শিক্ষার ভিতটি পাকা হইলে তবেই তাহার উপর উচ্চশিক্ষার ইমারত নির্মাণ সম্ভব। সুতরাং, বুনিয়াদি শিক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ প্রথম হওয়ায় রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার ছবিটি কিঞ্চিৎ উজ্জ্বল হইল। ‘ফাউন্ডেশনাল লিটারেসি অ্যান্ড নিউমেরেসি’ সূচক অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের এ-হেন কৃতিত্ব। মূল্যায়নের মানদণ্ড ধরা হইয়াছিল— শিক্ষার পরিকাঠামো, শিক্ষার সুযোগ, পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য, তাহারা কতটা শিখিয়াছে, এবং বিদ্যালয় পরিচালনা— এই পাঁচটি মূল বিষয়কে। প্রসঙ্গত, যে সকল ক্ষেত্রে বাংলা লক্ষণীয় ভাবে ভাল করিয়াছে সেগুলি হইল— পানীয় জল, শৌচাগার-সহ বিদ্যালয়ের সংখ্যাবৃদ্ধি, প্রাথমিক শিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকের শতকরা হার, প্রাথমিকে মেয়েদের নাম নথিভুক্তকরণের হার ইত্যাদি। এই ক্ষেত্রগুলিতে যে বাংলা ভাল করিয়াছে, তাহা প্রশংসার্হ।

তবে, অতিমারি পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যে চিত্রটি সচরাচর উঠিয়া আসে, সমীক্ষার চিত্রটি তাহার সঙ্গে যেন মেলে না। পশ্চিমবঙ্গ ভাল করিতেই পারে, কিন্তু তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, কর্নাটকের ন্যায় রাজ্যগুলিকেও সে পিছনে ফেলিয়াছে, ইহাতে ধন্দ জাগে। প্রসঙ্গত, দেশে সর্বাপেক্ষা ‘শিক্ষিত’ রাজ্য কেরলও প্রাথমিক শিক্ষায় প্রথম হইয়াছে। কিন্তু ক্ষুদ্রায়তন রাজ্যগুলির মধ্যে। এই সমীক্ষায় রাজ্যগুলিকে চারটি ভাগে ভাগ করা হইয়াছিল। এই ভাগ যদি না থাকিত, প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রটি যদি উন্মুক্ত হইত, তবে ফল কী দাঁড়াইত, প্রশ্ন থাকিয়া গেল। সর্বোপরি, পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিকের জন্য বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ এখনও উন্মুক্ত হয় নাই। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিকল্প শিক্ষা লইয়া সরকারের যথেষ্ট ভাবনাচিন্তার প্রকাশও দেখা যায় নাই। কেরলের মতো রাজ্যে যেখানে প্রথম হইতেই নির্দিষ্ট পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা হইয়াছিল, পশ্চিমবঙ্গে তাহা আগাগোড়াই অনুপস্থিত। লকডাউন-কালে মিড-ডে মিলের সঙ্গে কর্মপত্র বণ্টন করা হইয়াছিল বটে, কিন্তু যে সব পরিবারে শিক্ষার্থীরা প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া, তাহাদের শিক্ষাদানের কাজটি কী ভাবে অগ্রসর হইবে, সেই বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি দেখা যায় নাই। সুতরাং, সংশয় অমূলক নহে।

তবে সংশয় সত্ত্বেও বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গ যে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ঠিক পথে অগ্রসর হইতেছে, ইহা তাহারই প্রমাণ। কিন্তু বহু কাজ এখনও বাকি। প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা, ইন্টারনেট এবং কম্পিউটারের সুবিধাযুক্ত বিদ্যালয়— প্রভৃতি বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ এখনও পিছাইয়া। এই দিকে দ্রুত নজর দিতে হইবে, বিশেষত যেখানে ভবিষ্যতে অনলাইন পাঠের প্রয়োজনীয়তা সমস্ত বিশেষজ্ঞই স্বীকার করিয়া লইয়াছেন। সর্বোপরি সমীক্ষাতেই প্রকাশ, প্রাথমিকে স্কুলছুটের ছবিটিও বাংলায় বিশেষ উজ্জ্বল নহে। ইহাও দুশ্চিন্তার বইকি। সুতরাং, আত্মতুষ্ট হইবার উপায় নাই। বরং, এই সাফল্যকে আরও বিস্তৃত করিবার শপথ লইতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে, ইহা শিক্ষার অধিকারের প্রশ্ন। একটি শিশুও সেই অধিকার হইতে বঞ্চিত থাকিলে সাফল্যের রং মিলাইয়া যাইতে সময় লাগিবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Primary Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy