প্রতীকী ছবি।
দেশের সর্বাপেক্ষা দূষিত রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান সর্বশেষে, এমনই জানা গেল। ২১টি রাজ্যের মধ্যে কোন রাজ্যে আবর্জনার স্তূপ জমিয়া থাকা কতগুলি দূষিত অঞ্চল আছে, তাহা লইয়া সমীক্ষা করিয়াছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদ। দেখা গিয়াছে, এই সকল স্থানে মানুষেরই কারণে যে বিষাক্ত পদার্থ সঞ্চিত হইতেছে, তাহা ক্রমে জীবনধারণের পক্ষে বিপজ্জনক হইয়া উঠিতেছে। এই তালিকার সর্বনিম্নে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান খানিক স্বস্তিদায়ক। যেমন স্বস্তি দিতেছে আরও একটি সংবাদ। আগামী ১৭ মার্চ, কলিকাতার রামলীলা ময়দানে রাজ্যের নদী এবং জলাশয় রক্ষার দাবিতে একটি জনসভা আয়োজিত হইবে। যোগ দিবেন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের পরিবেশকর্মী, পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। আলোচনা হইবে, গঙ্গা-সহ বড় নদীগুলির পাশাপাশি ছোট নদী, খালবিলের পরিস্থিতি লইয়াও।
তবে কি পরিবেশ-সচেতনতা জাগ্রত হইতেছে? উপরের সংবাদ দুইটিতে আশাবাদী হইবার কারণ আছে, কিন্তু নিশ্চিন্ত হইবার কারণ নাই। এখনও বহু পথ চলা বাকি। এই রাজ্যে পরিবেশ সংক্রান্ত আইন আছে। কিন্তু আড়ালে যে সীমাহীন দুর্নীতি চলিতেছে, তাহা বন্ধের কোনও ইঙ্গিত নাই। যেমন, জলাভূমি লইয়া সুস্পষ্ট আইন আছে। কিন্তু পূর্ব কলিকাতার জলাভূমি যে ভাবে বুজাইয়া ফেলা হইতেছে, এবং সেখানে প্রোমোটার-রাজ চলিতেছে, তাহা তো পুলিশ-প্রশাসনের অজানা নহে। এই ভয়ঙ্কর অপরাধে কত জন শাস্তি পাইয়াছেন? পুলিশ-প্রশাসনের কাজটি শুধুমাত্র অপরাধ নথিভুক্ত করিবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রহিয়াছে। এই জলাভূমি কলিকাতার দূষিত জলের প্রাকৃতিক উপায়ে পরিশোধনের কাজটি করে। ফলে, পরিবেশগত দিক হইতে ইহার গুরুত্ব অসামান্য। অথচ, কী নিদারুণ অবহেলায় সেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হইতেছে, বিপন্ন হইতেছে বাস্তুতন্ত্র। নদীর চিত্রটিও অনুরূপ। বেআইনি বালিখাদান বন্ধ করা যায় নাই, নদীগর্ভ দখল করিয়া নির্ভয়ে চলিতেছে বেআইনি নির্মাণ, তৈরি হইয়াছে ইটভাটা, ভেড়ি। বস্তুত, আর্থিক এবং রাজনৈতিক দুর্নীতি অপেক্ষা এই পরিবেশ-সংক্রান্ত দুর্নীতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের পরিমাণ অনেক ব্যাপক এবং মানবজীবনে ইহার ক্ষতিকর প্রভাবও বহু গুণ বেশি। তথাপি, এই দুর্নীতি চলিতেছে, দল-নির্বিশেষে নেতানেত্রীরা অসীম প্রশ্রয় দিতেছেন নির্বাচনী স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে।
সমস্যা হইল, পরিবেশের ক্ষতি তো শুধুমাত্র পরিবেশেই আবদ্ধ থাকে না, তাহার প্রত্যক্ষ প্রভাব মানুষের জীবন এবং জীবিকার উপরে পড়ে। নদী, পুকুর, জলাভূমির উপর নির্ভরশীল বহু মানুষ। সুতরাং, জলাশয় সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা না হইলে এই মানুষগুলির অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়িবে। আবর্জনার স্তূপের ব্যবস্থাপনা যথাযথ না হইলে ইহার বিষাক্ত রাসায়নিক স্থানীয়দের স্বাস্থ্যহানির কারণ হইবে। কলিকাতার ধাপার মাঠ সংলগ্ন এলাকায় এই স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের প্রসঙ্গটি লইয়া বিশেষজ্ঞেরা বহু বার সতর্ক করিয়াছেন। অথচ, উপযুক্ত বিকল্প ব্যবস্থা এখনও করা যায় নাই, উৎসে আবর্জনা ভাগ করিবার কাজটিও সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় নাই। তবে, সর্বাগ্রে প্রয়োজন দুর্নীতির মূলে আঘাত এবং পরিবেশের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্রটি ছিন্ন করা। অন্যথায়, বিক্ষিপ্ত ভাবে দুই-একটি ‘সু-সংবাদ’ আশা জাগাইবে, কিন্তু পরিবেশ বাঁচিবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy