Advertisement
E-Paper

ভবিষ্যৎ কুয়াশায়, তবু খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধেন নিরঞ্জনরা

ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার সোনামুড়ায় কাঠালিয়া ব্লক এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকাতেই আগে ছিল খেজুর গাছের রমরমা। এই অঞ্চলের গুড়ের খ্যাতি ছিল গোটা ত্রিপুরায়।

বাপী রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:০৭
Share
Save

শীত এলে ত্রিপুরার গ্রামে-গঞ্জে, এমনকি শহরেরও অনেকে এখনও খোঁজেন খেজুরের সুস্বাদু রস। সঙ্গে খেজুরের খাঁটি ঝোলা গুড়, স্থানীয় ভাষায়যাকে বলে ‘লালি’। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় কত দিন রসের এই জোগান অটুট থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠে গিয়েছে।

ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার সোনামুড়ায় কাঠালিয়া ব্লক এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকাতেই আগে ছিল খেজুর গাছের রমরমা। এই অঞ্চলের গুড়ের খ্যাতি ছিল গোটা ত্রিপুরায়। সংখ্যায় কমে এলেও এখনও সেখানে কিছু খেজুর গাছ রয়েছে। সেই সব গাছ থেকে রস সংগ্রহই জীবিকা স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের। রস ও গুড় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বাড়ি-বাড়ি ফেরি করে তাঁদের সংসার চলে। পশ্চিমবঙ্গে যেমন তাঁদের ‘শিউলি’ বলা হয়, ত্রিপুরাতে বলে ‘গাছিয়াল’। এই পেশা এক রকম তাঁদের পারিবারিক পরম্পরাই।

পুরনো গাছিয়াল নিরঞ্জন সরকার বলছিলেন, ‘‘শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের রস পরিষ্কার হবে। ফলে গুড় খেতে সুস্বাদু হবে।’’ হাতে গোনা গাছিয়ালদের অন্যতম নিরঞ্জন, ফরমোজ মিয়াঁ, ইসমাইল মিয়াঁ-রা। নিরঞ্জন জানালেন, সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় থাকা গোটা দশ-বারো খেজুর গাছ থেকেই এখন রস সংগ্রহ করেন তাঁরা। কিন্তু পরিশ্রমের দাম আজকাল আর ওঠে না। কেন? নিরঞ্জন বলেন, ‘‘বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। কিন্তু রসের দাম বেশি নেওয়া যায় না। কারণ রস আর তার ক্রেতা, দু’টোই আগের চেয়ে কমে গিয়েছে। এখনকার যুগের ছেলেমেয়েরা খেজুরের রস খেতে চায় না।’’

মকর সংক্রান্তিতে ঘরে-ঘরে পিঠেপুলি তৈর হয়। ‘লালি’-তে ডুবিয়ে সেই পিঠে খাওয়াই রেওয়াজ। সেই সময়ে বাজারে গুড়েরচাহিদাও বাড়ে। কিন্তু সরাসরি খাওয়ার খেজুর রসের দাম যেমন গাছিয়ালরা বাড়াতে পারেন না, তেমনই খাঁটি খেজুর গুড়ের ন্যায্য দাম রাখতে গিয়েও ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাঁদের। গাছিয়াল ফরমোজ মিয়াঁ বলেন, ‘‘এখন বাজারে কম দামে ভেজাল, চালানি গুড় বিক্রি হয়। তাই এখন মানুষ ভাল গুড় খেতে চায় না।’’ একই আক্ষেপ ইসমাইল মিয়াঁরও।

তবু পেশা ছাড়া যায় না। ইসমাইল বলেন, ‘‘বছরের এই সময়টায় খেজুর গাছ কাটা, রস নামানোর কাজ করে বড় হয়েছি। মজাও পেতাম, রোজগারও হত। এখন রসে, খরিদ্দারের টানে ভাটা পড়লেও খেজুর গাছের নেশা ছাড়তে পারি না। খেজুর গাছ কাটার লোকও কমে গিয়েছে।’’

তাই চিন্তা থাকছে। মহার্ঘ না হয়েও কি দুষ্প্রাপ্য হওয়ার দিকে এগোচ্ছে শীতের ভোরে ওঠা বাঙালির প্রিয় খেজুর গাছের হাঁড়ি?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

jaggery Tripura

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}