মাঙ্কিপক্সকে ‘বিশ্বের বিপর্যয়’ বলে ঘোষণা করে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বর্তমানে কেবল আর দু’টি রোগ এই চূড়ান্ত গুরুত্ব পায়— কোভিড-১৯ এবং পোলিয়ো। মাঙ্কিপক্সকে এখন তার সম-পর্যায়ের গুরুত্ব দেওয়ার ফলে বিভিন্ন দেশের সরকার আরও তৎপরতার সঙ্গে, আরও সমন্বয়-সহকারে কাজ করবে বলে আশা। যথেষ্ট টাকা বরাদ্দ করাও প্রয়োজন। তার প্রয়োজন নিয়ে বিতর্ক চলে না— এখনও অবধি পঁচাত্তরটি দেশ থেকে সতেরো হাজার সংক্রমিতের তথ্য মিলেছে। ভারতেও রোগীর সন্ধান মিলেছে। বিশেষত দিল্লিতে আক্রান্ত যুবকের যে বিদেশযাত্রার ইতিহাস নেই, তা থেকে আন্দাজ হয় যে, দেশের মধ্যেই এই রোগ ছড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, মাঙ্কিপক্স সম্পর্কে চূড়ান্ত সতর্কতার ঘোষণা করতে অনেকখানি দেরি হল। ফলে সচেতনতার প্রচার, যথেষ্ট টিকার ব্যবস্থা, আক্রান্তদের রোগ ছড়ানো থেকে নিবৃত্ত করা আরও কঠিন হবে। এই বিলম্বের মধ্যে অনেকে সামাজিক অন্যায়ের ছায়াও দেখছেন। যদিও সব রকমের ঘনিষ্ঠ সংযোগ থেকেই এই রোগ ছড়াতে পারে, তবু আফ্রিকার বাইরের দেশগুলিতে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়েছে প্রধানত সমকামী ব্যক্তিদের মধ্যে। ফলে আমেরিকা-সহ নানা দেশে ‘এলজিবিটিকিউ’ সম্প্রদায়ের মানুষরা দাবি করেছেন, নব্বইয়ের দশকে এইচআইভি-এডসের মোকাবিলায় যেমন দীর্ঘসূত্রতা, অবজ্ঞা ও বৈষম্য দেখা গিয়েছিল, মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও তারই ছায়া দেখা যাচ্ছে।
তবে স্বস্তি যে, এই নতুন মহামারি প্রতিরোধের উপায় জানা। কোভিড-১৯’এর টিকা আবিষ্কার করতে যে সময় ব্যয় হয়েছিল, মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে তা হবে না— গুটিবসন্তের টিকাই মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে কার্যকর। ভারতে প্রবীণ নাগরিকদের অধিকাংশেরই শৈশবে সেই টিকা নেওয়া রয়েছে বলে তাঁরা তুলনায় সুরক্ষিত, তরুণ প্রজন্মের ঝুঁকিই বেশি। তবে মাঙ্কিপক্সের ভাইরাসের অভ্যন্তরে কোনও পরিবর্তন হওয়ার ফলে নতুন করে তা ছড়িয়েছে, না কি গুটিবসন্ত ‘নির্মূল’ হওয়ার ঘোষণার পরে তার টিকাকরণ বন্ধ হতে ফের সমগোত্রের ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ পেয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা ভরসা দিচ্ছেন, মাঙ্কিপক্স ভাইরাস তুলনায় কম ছড়ায়, মৃত্যুহারও কম।
কিন্তু, অর্থব্যবস্থার আকাশে আশঙ্কার কালো মেঘ জমেছে। কোভিডের ক্ষয়ক্ষতি কেবল মৃত-আক্রান্তের সংখ্যা দিয়ে গোনা চলে না। এই অতিমারি সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্ববাজারে সঙ্কোচনের সতর্কতা জারি করেছেন। ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে আর্থিক সঙ্কট এখনই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমান দারিদ্র, অপুষ্টি, কর্মহীনতা, মজুরিহ্রাস, চিকিৎসার বাড়তি খরচ, জনকল্যাণ প্রকল্পগুলিতে সরকারের ব্যয়সঙ্কোচ দেশের মানুষকে পর্যুদস্ত করেছে। তার উপর রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের জেরে প্রায় সমস্ত আবশ্যক পণ্যের দাম বহু গুণ বেড়েছে। এই সময়ে আরও একটি মহামারিকে প্রতিরোধ করার মতো জনসম্পদ, অর্থবল জোগাড় করা কোনও দেশের পক্ষেই সহজ নয়। এই দুঃসময়ে প্রয়োজন যে প্রত্যয় ও পরিশ্রম, ভারতের মন্ত্রী-আধিকারিকরা তা জোগাতে কতটা তৎপর, সে দুশ্চিন্তা থেকেই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy