E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ফ্যাসিবাদ ফিরছে

মানুষ বিশ্বাস করছে যে, এক জন শক্তিশালী নেতা তাদের সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমেরিকার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৫৫
Share
Save

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘যত বেশি জানে তত কম মানে’ (২৭-৩) প্রবন্ধটি আধিপত্যবাদের এক ভয়াবহ ছবি তুলে ধরেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রেই ফ্যাসিবাদের এক ভয়াল ছায়া নেমে আসছে আমেরিকায়। ফ্যাসিবাদী শাসকরা সর্বপ্রথম শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে চায়, কারণ শিক্ষা থাকলেই মানুষ প্রশ্ন করার সাহস পাবে। আমেরিকার সমাজে সাধারণ মানুষদের অধিকার সব দিক দিয়েই খর্ব করা হচ্ছে। অথচ এই সাধারণ মানুষরাই ট্রাম্পকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। বর্তমান বিশ্বে একটাই ধারা চলছে— আধিপত্যবাদ ও একনায়কতন্ত্রবাদ। গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা কি পিছু হটছে?

মানুষ বিশ্বাস করছে যে, এক জন শক্তিশালী নেতা তাদের সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমেরিকার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যা, অভিবাসী সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছে। আর তাঁর সঙ্গে জোট বেঁধেছেন ইলন মাস্ক। তাঁর অঙ্গুলিহেলনে আমেরিকার সমগ্র সমাজ পরিচালিত হচ্ছে। শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের সর্বত্র এর প্রভাব পড়তে বাধ্য, কারণ আমেরিকা বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ।

এই মুহূর্তে আমেরিকায় পুঁজিবাদের রুদ্ররূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। পুঁজিপতিরাই সব নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। এখন বিশ্বের কয়েকজন মাত্র পুঁজিপতির হাতে অধিকাংশ সম্পদ পুঞ্জীভূত। আমেরিকা এক সময় পরিচিত ছিল উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে, আমেরিকান সংবিধান হল অন্যতম কঠিন সংবিধান যা সহজে পরিবর্তন করা যায় না। ভারত-সহ বহু দেশের কাছে আমেরিকা একটি স্বপ্নের দেশ। কিন্তু সেই স্বপ্নের দেশ যদি কয়েকটা মানুষের স্বার্থের কারণে অন্ধকারের যুগে প্রবেশ করে তা হলে গোটা পৃথিবীর উদ্বেগ। লেখক একদম ঠিক কথা বলেছেন যে, গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর মতো সরাসরি হত্যার ঘটনা হয়তো ঘটবে না, কিন্তু পরোক্ষ ভাবে মানুষকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হবে। কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটবে জলবায়ু বিপর্যয়ে, ভয়ঙ্কর রোগে আর অনাহারে।

ভারতের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, ভারতেও আধিপত্যবাদ সর্বগ্রাসী রূপ নিচ্ছে। ধর্মীয় মেরুকরণ চরম রূপ ধারণ করছে, শিক্ষাব্যবস্থায় মুসলমান যুগকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, মানুষের মগজধোলাই করার চেষ্টা চলছে সব দিক থেকে। একই সঙ্গে অল্প সংখ্যক কিছু পুঁজিপতির হাতে অধিকাংশ সম্পদ জমা হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে?

দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৬

শিয়রে দুর্দিন

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘যত বেশি জানে তত কম মানে’ শীর্ষক প্রবন্ধে উঠে এসেছে রাষ্ট্রনায়কদের আমিত্ব, আস্ফালন আর দখলদারির স্পৃহা। সব দেশে সব যুগে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রনায়কদের এটাই স্বরূপ। তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনে ধর্ম বা বিজ্ঞানকে চালিত করার চেষ্টা করেন। ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে মিথ্যা ধর্মীয় পোশাক বা বিজ্ঞানের নামাবলি ধারণে কুণ্ঠিত নন। আর ক্ষমতাসীন হলেই বহুরূপীর মতো রং পাল্টান, জল্লাদের পোশাক গায়ে চাপান। হয়ে ওঠেন নতুন ইতিহাসের সৃষ্টিকর্তা। তাঁরা চান যুক্তি নয়, শিক্ষা নয়, প্রশ্ন নয়, শুধুই আনুগত্য। সকলকে আভূমি নত হয়ে বলতে বাধ্য করেন তিনিই ভগবান, তিনিই সর্বেসর্বা। এমন স্বৈরাচারী শাসকের কোপে পড়ে যান কবি-সাহিত্যিক, নাট্যকার, শিল্পী, সমাজ-সংস্কারক, বুদ্ধিজীবী ও বিরোধী রাজনীতিবিদরা। এর পরেও এমন শাসকদের কিছু উগ্র মৌলবাদীরা সমর্থন করে। তাদের সৌজন্যে বাকিরা আতঙ্কে শাসকের দাসরূপে নিজেদের সঁপে দিতেবাধ্য হয়।

বর্তমানে এমনই এক বিপজ্জনক শক্তির প্রতিনিধি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ঘোষিত ‘বাহুবল’ নীতিতে শঙ্কিত বিশ্ব। এই প্রতাপ অন্য কিছু রাষ্ট্রনেতা নতজানু হয়ে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি তাঁর নিজের দেশে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ, সরকারি জাদুঘর একের পর এক বন্ধ হতে চলেছে। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকা অসংখ্য পড়ুয়া, গবেষক, শিক্ষক, চাকরিজীবী রাতারাতি কর্মহীন হয়ে পড়বে। আসলে ট্রাম্পের উগ্র ভক্ত ‘হোয়াইট খ্রিস্টান ন্যাশনালিস্ট’রা কলা, বিজ্ঞান কোনওটাতেই বিশ্বাসী নন। মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগের জন্য প্রতিষেধক বা প্রতিরোধের জন্য গবেষণার প্রয়োজনও মনে করছেন না।

এমন স্বৈরাচারীরাও বেঁচে থাকেন ইতিহাসে, তবে মানুষের হৃদয় জুড়ে নয়। যেমন বেঁচে আছেন মুসোলিনি, হিটলার। বিরোধী শক্তি বা জাতিকে হিটলার তো রাস্তায় দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরেছেন। তবে আজ দিন বদলেছে, বদলেছে কৌশল। তাই অভিবাসীদের উপর নিষ্পেষণ, অত্যাচার, অর্থনৈতিক শোষণ, জলবায়ুর কৃত্রিম বিপর্যয় ঘটিয়ে রোগে-দুর্ভিক্ষে দেশের পর দেশ সমূলে উজাড় করতে বদ্ধপরিকর এঁরা। তারই নমুনা রেখে চলেছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আমেরিকার ট্রাম্প, বাংলাদেশের সরকার আর আমার ভারতের গদিতে আসীন ট্রাম্পের বন্ধুবর। এঁরা চান প্রশ্নহীন আনুগত্য। তবুও আমরা তিমির হননের গানে বিশ্বাস রেখেছি।

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

সমস্যার মূলে

‘অর্থমনর্থম্’ (১১-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয় পড়লাম। এটা নির্জলা সত্য যে, বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিতে গেলে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বহু টাকা খরচ করতে হয়। দিন দিন শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমার মতে সেটিই ফি বৃদ্ধির প্রধান কারণ নয়। মূল সমস্যা হল, এখনকার অধিকাংশ সরকারি স্কুলে তেমন ভাবে পড়াশোনা হয় না। অভিভাবকদের বক্তব্য একই, ওখানে প্রচুর ছুটি, পড়াশোনা হবে কোত্থেকে! অথচ গত শতকের শেষ দিকেও দেখেছি, পরিচিত ছেলেমেয়েরা নামী সরকারি স্কুলে পড়তে যাচ্ছে। আবার নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি অবধি দেখেছি, বেসরকারি স্কুলে প্রাপ্ত নম্বরের ১০% কমিয়ে তবে সেখানকার শিক্ষার্থীদের কলেজে বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্যে যোগ্য বলে ধরা হচ্ছে। অর্থাৎ সরকারি স্কুলে যে ৫০% নম্বর পাবে তার সঙ্গে লড়তে গেলে বেসরকারি স্কুলে অন্ততপক্ষে ৬০% নম্বর পেতে হবে।

আর এখন সরকারি স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েরা সমাজে কেমন অভ্যর্থনা পায়, স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অতএব সরকার যতই বেসরকারি স্কুলগুলিতে পড়ার খরচ বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, অন্য ভাবে তারা টাকা তুলবে, আর অভিভাবকরা দরকার হলে ঘটিবাটি বিক্রি করেও ছেলেমেয়েদের সেখানেই পড়াবেন।

বিকাশ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫০

কাগজের টিকিট

মেট্রোয় কিউআর কোড দেওয়া কাগজের টিকিট ব্যবহার করার ফলে সমস্ত স্টেশন অত্যন্ত অপরিষ্কার ও নোংরা হয়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা মেট্রো সফরের পরে এই কাগজের টিকিটগুলি স্টেশনের যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছেন, যার ফলে স্টেশনের সিঁড়ি ও প্রবেশপথ অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন দেখাচ্ছে। ‘কাগজবিহীন যুগে কেন মেট্রোয় কিউআর কোডের টিকিট, প্রশ্ন’ (১২-৪) প্রতিবেদনে এ বিষয়টির উল্লেখ পেলাম না।

এই সমস্যা এড়াতে কয়েকটি ব্যবস্থা করা যায়। যেমন, স্টেশনের স্বয়ংক্রিয় দরজাগুলির পাশে ডাস্টবিন রাখা যায়। সেখানে সম্ভব হলে মেট্রো কর্মীকে মোতায়েন করা যায়, যাঁরা যাত্রীদের নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে টিকিটগুলি ফেলতে অনুরোধ করবেন। স্টেশনের টেলিভিশনে, নিয়মিত ভাবে মেট্রোর কামরাতে এ নিয়ে ঘোষণা করা হতে থাকলে মানুষ সচেতন হবেন। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময় অন্তর, স্টেশন চত্বর ও সিঁড়িগুলি সাফাই করা হোক।

অমিত দাস, কলকাতা-৪৫

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump Fascism

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।