Advertisement
২৩ অক্টোবর ২০২৪
Contractual Worker

নিয়োগের নিয়ম

অতীতের আইনের মতো নতুন আইনেও বলা হয়েছে যে, কোনও প্রতিষ্ঠানের যা মৌলিক বা প্রধান কাজ, অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে ওই প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তা স্থায়ী কর্মীদের দিয়েই করাতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪২
Share: Save:

দায়িত্বপূর্ণ সরকারি কাজেও চুক্তিতে কর্মী নিয়োগ করার জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করল কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের পেশকার পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম বলেন, আদালত থেকে কোনও গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে গেলে তার দায় চুক্তি-কর্মীর উপরে ন্যস্ত করা যাবে কী করে? তাঁর পর্যবেক্ষণ, এ রাজ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের যেমন ব্যাপকতা, তা সচরাচর দেখা যায় না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন বৈষম্য নিয়েও। প্রধান বিচারপতি বলেন, যথাযথ পারিশ্রমিকের দাবি করলে তাঁদের কাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আদালতের অতি আবশ্যক কাজগুলি করার পদগুলিতে দীর্ঘ দিন নিয়োগ না করা, সে কাজগুলির জন্যে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা, এবং ওই কর্মীদের বেতনে অসমতা, এই বিষয়ে অন্যায্যতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রধান বিচারপতি। এই পর্যবেক্ষণটিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ মানেই অন্যায্য, এমন নয়। আধুনিক শিল্প, ব্যবসা এবং পরিষেবার ধরন যত বদলেছে, কর্মী বা শ্রমিক নিয়োগের ধরনও তত বদলেছে। পুরো সময়ের কর্মী, স্থায়ী চাকরির পরিবর্তে চুক্তিভিত্তিক কাজের চাহিদা কর্মীদের তরফেও যথেষ্ট রয়েছে নানা ক্ষেত্রে। এতে নিয়োগক্ষেত্রে নমনীয়তা বাড়ে, কাজের সংখ্যা বাড়ে, কাজে পেশাদারিত্বও দেখা যায়। বাঁধা ‘স্কেল’-এর বেতনের চাকরির চেয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজের নিয়মে কর্মীরও কিছু সুবিধা আছে। স্থায়ী চাকরির নিশ্চয়তার তুলনায় প্রতিযোগিতা-ভিত্তিক রোজগারের সুযোগ আধুনিক উচ্চাকাঙ্ক্ষী কর্মপ্রার্থীর কাছে অধিকতর আকর্ষণীয় হতেই পারে।

প্রয়োজন আইনের শাসন। চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় ভারতে আইন প্রণয়ন হয় ১৯৭০ সালে। সম্প্রতি চারটি শ্রমবিধির একটি (অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশনস কোড, ২০২০) সেই আইনে কিছু পরিবর্তন করে চুক্তিতে নিয়োগের পরিধি বাড়িয়েছে। যেমন, ছোট উৎপাদকেরা কত চুক্তি-কর্মী নিয়োগ করতে পারেন, তার ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সংজ্ঞায় আনা হয়েছে ‘সুপারভাইজ়র’ পদের কর্মীদের, এবং আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিকদেরও। তবে অতীতের আইনের মতো নতুন আইনেও বলা হয়েছে যে, কোনও প্রতিষ্ঠানের যা মৌলিক বা প্রধান কাজ, অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে ওই প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, তা স্থায়ী কর্মীদের দিয়েই করাতে হবে। যে ধরনের কাজগুলি প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু মৌলিক নয়— যেমন সাফাই, ক্যান্টিন, নিরাপত্তা, মাল ওঠানো-নামানো, প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য শিক্ষা বা স্বাস্থ্য পরিষেবা, নির্মাণ— সেগুলির জন্য চুক্তি-কর্মী ব্যবহার করা যেতে পারে। কিছু শর্তের অধীনে মূল কাজের জন্য সাময়িক চুক্তি-কর্মী নিয়োগ করা যায়। যেমন, যদি হঠাৎ বেশি কাজ এসে পড়ে। তবে এমন ধরনের ক্ষেত্রেও চুক্তি-কর্মীর প্রাপ্য পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধার কথা স্পষ্ট করেছে আইন।

মূল কথাটি হল, স্থায়ী কর্মীর বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান এড়ানোই চুক্তি-কর্মী নিয়োগের উদ্দেশ্য হতে পারে না। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, স্থায়ী কর্মীদের সমান কাজ যে অস্থায়ী কর্মীরা করছেন, তাঁদের সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আক্ষেপ, সরকারই আইনের নির্দেশ লঙ্ঘন করে নানা দফতরের মৌলিক কাজে চুক্তি-কর্মী নিয়োগ করছে। অনেক ক্ষেত্রে চুক্তিতে এক ধরনের কাজের উল্লেখ থাকে, কিন্তু কর্মীকে দিয়ে আসলে মৌলিক কাজগুলি করানো হয়। স্থায়ী কর্মীর মতো একই কাজ, অথচ বেতনে অত্যন্ত অসমতা, এই অন্যায্য পরিস্থিতিতে সম্ভবত লক্ষাধিক কর্মী এ রাজ্যের নানা সরকারি দফতরে, স্কুল-হাসপাতালে কাজ করছেন। প্রধান বিচারপতির বিস্ময় ও বিরক্তিতে শামিল রাজ্যবাসীও।

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE