Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

পলাতক

দেশকে রক্ষা করিবার যে শপথ লইয়াছিলেন প্রধানমন্ত্রী, এখন তাহা পালন করুন। দেশবাসী নেতৃত্বের অপেক্ষায় পথ চাহিয়া আছে।

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২১ ০৪:৪৫
Share: Save:

মন্ত্রীর অভাব নাই, জনপ্রতিনিধির সংখ্যাও কম নহে। অভাব নেতার। কোভিড-পরিস্থিতি সম্পর্কিত মামলায় শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্যে তাহাই স্পষ্ট হইল। কেন্দ্র জানাইল, করোনা অতিমারির তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলার কোনও পরিকল্পনা কেন্দ্রের নাই। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতের নিকট এই অপ্রস্তুতি স্বীকার করিয়া লইয়াছেন। দেশবাসী অবশ্য বিস্মিত হন নাই। কেন্দ্রীয় সরকার যে স্বাধীন ভারতের বৃহত্তম বিপর্যয়ের মোকাবিলায় সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত, ভারতের শহর ও গ্রামে গণচিতার ধুম তাহার সাক্ষ্য দিতেছে। হাসপাতালে শয্যা নাই, অক্সিজেন নাই, টিকা নাই, এমনকি মৃতদেহ বহিবার গাড়ি, সৎকারের চুল্লি নাই— অব্যবস্থার চিত্র চতুর্দিকে প্রকট হইতেছে। নানা রাজ্যের হাই কোর্টে নাগরিকের জীবন রক্ষা করিতে সরকারের ব্যর্থতার বিচার হইতেছে। রোগী বাঁচাইবার, সংক্রমণ প্রতিরোধের খুঁটিনাটি নির্দেশ আদালত দিতেছে সরকারকে। আপৎকালে আদালত পরিচালনা করিতেছে প্রশাসনকে— ইহার অপেক্ষা বড় ব্যর্থতা আর কী হইতে পারে? আগামী দিনে কোভিড মোকাবিলায় সরকারের সম্ভাব্য কর্মসূচি কী, বিচারপতিরা তাহা জানিতে চাহিলে তুষার মেহতা তাঁহাদেই প্রশ্ন করিয়াছেন, কী করা উচিত। এই নির্লজ্জতা দেশবাসীকে ব্যথিত করিবে।

অথচ, এই বিপদ অপ্রত্যাশিত নহে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসিবার সতর্কবার্তা পূর্বেই মিলিয়াছিল। পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে তাহার নকশাও দেখা গিয়াছে। তৎসত্ত্বেও কেন্দ্র আগাম প্রস্তুতির কাজ উপেক্ষা করিয়াছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা টিকার অভাবের অভিযোগকে ‘বিরোধীদের অপপ্রচার’ বলিয়া উড়াইয়াছেন। ‘অনাগতবিধাতা’ হইবার— অর্থাৎ বিপদ আসন্ন বুঝিয়া আগাম প্রতিকারের ব্যবস্থা করিবার পথটি উপেক্ষা করিয়াছে কেন্দ্র। অথচ তাহাই যে কার্যকর পথ, মহারাষ্ট্রের একটি প্রান্তিক, আদিবাসী-অধ্যুষিত জেলা নন্দুরবার তাহা দেখাইয়াছে। জেলাশাসক রাজেন্দ্র ভারুদ দ্বিতীয় ঢেউয়ের অনিবার্যতা বুঝিয়া অক্সিজেন উৎপাদনের তিনটি কারখানা নির্মাণ করিয়াছেন, যথেষ্ট শয্যা ও অ্যাম্বুল্যান্স, পর্যাপ্ত ঔষধের ব্যবস্থা রাখিয়াছিলেন। ফলে মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্রের সকল জনপদ কোভিডে বিধ্বস্ত হইলেও, এই জেলায় সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুহার, উভয়েই দ্রুত নিয়ন্ত্রিত হইয়াছে। ইহাই প্রকৃত নেতৃত্ব। গত বৎসর কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা এই রূপ প্রস্তুতি এবং তৎপরতা দেখাইয়া অতিমারিকে নিয়ন্ত্রণ করিয়াছিলেন, বহু মৃত্যু এড়াইয়াছিলেন। কেবল ভারতে নহে, সারা বিশ্বে তাঁহার নেতৃত্ব-ক্ষমতা প্রশংসিত হইয়াছিল। আক্ষেপ, দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল হইবার পূর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁহার ‘প্রতিষেধক কূটনীতি’র সাফল্য প্রচারে যত উৎসাহ দেখাইয়াছেন, সকল ভারতবাসীর জন্য প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করিতে অত তৎপর হন নাই।

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব-ক্ষমতায় আস্থা রাখিয়াই দেশ তাঁহাকে ২০১৯ সালে ক্ষমতায় ফিরাইয়াছে। বৎসর না ঘুরিতে দেশবাসী দেখিল পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্কটে তাঁহার সরকারের উদাসীনতা, কর্মহীনের খাদ্যসুরক্ষায় ব্যর্থতা, দরিদ্রের অর্থসহায়তায় অনিচ্ছা। অতঃপর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা জানিয়াও কুম্ভমেলার অনুমোদন, নির্বাচনী জনসভায় তাঁহার যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ। শীর্ষ নেতার এই অপরিণামদর্শিতা কত লক্ষ প্রাণ লইল, কে বলিতে পারে? সর্বোপরি টিকা সরবরাহ ও চিকিৎসার দায় রাজ্যের উপর চাপাইবার কেন্দ্রের চেষ্টা মোদী ও তাঁহার সরকারের নেতৃত্বের ক্ষমতা ও ইচ্ছার প্রতি প্রশ্ন তুলিয়াছে। অতিমারি সারা দেশে হাহাকার ফেলিয়াছে। দেশকে রক্ষা করিবার যে শপথ লইয়াছিলেন প্রধানমন্ত্রী, এখন তাহা পালন করুন। দেশবাসী নেতৃত্বের অপেক্ষায় পথ চাহিয়া আছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy