সংসদ। —ফাইল চিত্র।
সামনেই বেশ কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচন, এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন। ফলে এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুতপদে যে সমস্ত সংস্কারে এগিয়ে চলেছে, তাকে এই বৃহত্তর রাজনৈতিক পটভূমিকায় না দেখে উপায় নেই। সপ্তাহ দুই আগে নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রায় নাগরিক-সমাজের অন্তরালে একটি বিরাট অর্থময় সংস্কারের সূচনা করল, সংসদে ‘চিফ ইলেকশন কমিশনার এবং আদার ইলেকশন কমিশনার্স (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কন্ডিশনস অব সার্ভিস অ্যান্ড টার্মস অব অফিস) বিল, ২০২৩’ এনে। এর ফলে বর্তমানে চালু ব্যবস্থা পাল্টে একটি নতুন ব্যবস্থা হতে চলেছে: যাতে কলেজিয়াম পদ্ধতিতে একটি প্যানেল তৈরি হবে, যেখানে শাসনবিভাগের মনোনীত ব্যক্তিরা থাকবেন, এবং প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি-মতে চূড়ান্ত মনোনয়ন হবে। স্পষ্টতই এর ফলে প্রধান যে পরিবর্তনটি আসতে চলেছে— তা হল, মনোনয়ন কমিটি তথা নির্বাচন কমিশনের উপর শাসনবিভাগ ওরফে শাসক দলের একচ্ছত্র প্রভাব। মনোনয়ন কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নিজে, বিরোধী দলের প্রধান নেতা, এবং আর এক জন কোনও ক্যাবিনেট মন্ত্রী— অর্থাৎ শাসক দলের দুই জন প্রতিনিধি ও বিরোধী এক জন— আর বাদ পড়বেন প্রধান বিচারপতি। এই নতুন মনোনয়ন কমিটিকে এত দূর ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে যে তারা প্যানেলের বহির্ভূত যে কোনও কাউকে কমিশনে জায়গা দিতে পারবে, যদি তেমন সিদ্ধান্ত জরুরি বলে মনে হয়। অর্থাৎ সার্চ কমিটির রেকমেন্ডেশন উপেক্ষা করেই কাজ করতে পারবে সিলেকশন কমিটি, এবং যাকে ইচ্ছে নির্বাচন কমিশনের মতো একটি অত্যন্ত গুরুতর প্রতিষ্ঠানে নির্ণায়ক স্থান দিতে পারবে।
যে কোনও সংশোধন কিংবা সংস্কারের একটি লক্ষ্য থাকে। বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় কি, এই বিশেষ সংশোধনটির পিছনে কোন লক্ষ্য রয়েছে? বিচারবিভাগের সমস্ত অধিকার খর্ব করে শাসনবিভাগের প্রতিপত্তিকে একচ্ছত্র ভাবে কায়েম করে কার কোন উদ্দেশ্য সিদ্ধ হচ্ছে— বুঝতে বাকি থাকে কি? যেখানে শাসক দলের প্রভাব শাসনবিভাগের উপর এতই নিরঙ্কুশ যে বিরোধী দলের বক্তব্য লোকসভাতেই পেশ করতে দেওয়া হয় না, সেখানে বন্ধ দরজার পিছনে কমিটির বৈঠকে বিরোধী দলের মতামত আদৌ কোনও গুরুত্ব পাবে, ভাবার কোনও অবকাশ আছে কি? সব ক’টি প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যেই দেওয়া সম্ভব: নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমানায় ছিয়াত্তর বছর পূর্ণ করা গণতন্ত্রের অভিমুখ চলছে অবধারিত আত্মধ্বংসের পথে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন এর পর থেকে শাসক দলের একান্ত অনুরাগীদের বাসা হয়ে উঠবে— এবং সম্ভবত তাদের অঙ্গুলিহেলনেই চালিত হবে সমগ্র দেশব্যাপী নির্বাচনের পদ্ধতি।
লক্ষণীয়, গত মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ শোনা গিয়েছিল যে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার সঙ্গে প্রধান বিচারপতিকেও রাখতে হবে— যদি না সংসদে এ বিষয়ে নতুন বিল পাশ হয়। এই নির্দেশের মধ্যে বিচারবিভাগের বক্তব্যটি যথেষ্ট স্পষ্ট— আর সেই স্পষ্টতা যাঁরা ‘দেখতে পান না’, তাঁদের দৃষ্টিশক্তি বা বিবেচনাশক্তি বিশেষ কোনও রাজনীতি-রঙে রঞ্জিত। মোদী সরকার তাই মূল বক্তব্য এড়িয়ে গিয়ে শেষাংশটিতেই মনোনিবেশ করলেন, এবং ১০ অগস্ট বিল পেশ হল যাতে প্রধান বিচারপতির জায়গায় রাখা হল এক জন ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে, ও এই ভাবে ভারী করা হল শাসক দলের পাল্লাটিকে। পরিস্থিতি দেখে একাধিক বিচারপতির মত: শাসক দলের সামনে নতজানু সদস্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন চালানো গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। একের পর এক প্রতিষ্ঠানকে গণতান্ত্রিক পথ থেকে সরিয়ে এনে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যে দলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার কাজে সবলে অগ্রসর হচ্ছে, এ তারই শেষতম প্রমাণ। ভারতে গণতন্ত্রের শেষ ঘণ্টা বাজার কি তবে সময় হল?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy