শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের পাঁচ শিক্ষিকার প্রাণসংশয় কাটিয়াছে, ইহা স্বস্তির খবর। তবে প্রতিবাদের যে পদ্ধতি তাঁহারা লইয়াছেন, তাহাতে অস্বস্তি জাগিতে বাধ্য। বঞ্চনা ও অবিচার হইতেছে ভাবিলে সরব হইবার অধিকার তাঁহাদের আছে। কিন্তু আপন সঙ্কটের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে আত্মহত্যার চেষ্টা কেন? শিক্ষকেরা এমন কাজ করিলে ছাত্রছাত্রীদের নিকট কী বার্তা পৌঁছায়, সে প্রশ্নটি গোটা সমাজকেই শঙ্কিত করিবে। অনতিঅতীতে বিবিধ দাবিতে আন্দোলনরত নানা শ্রেণির শিক্ষকদের প্রায়ই এমন চমকপ্রদ নানা কাণ্ড করিতে দেখা গিয়াছে— দীর্ঘ অবস্থান, অনশন, সাঁতরাইয়া আদিগঙ্গা পার, বিধানসভার প্রবেশপথে গেটে চড়িয়া পড়ার সংবাদ বাহির হইয়াছে। তাহাতে সমস্যা এই যে, উত্তরোত্তর নূতন চমক তৈরি করিতে হয়। তাহা সুস্থ সমাজের পথ নহে।
শিশু শিক্ষা কেন্দ্র এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলি লইয়া রাজ্য সরকার যে জট পাকাইয়াছে, সেই জট এমন চমকে খুলিবারও নহে। পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে স্কুলশিক্ষার যে ব্যবস্থা শুরু হইয়াছিল, সম্প্রতি তাহা আসিয়াছে শিক্ষা দফতরের অধীনে। তাহার পরেই ওই স্কুলগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত চল্লিশ হাজারের অধিক ‘সহায়িকা’ সমকাজে সমবেতনের দাবি তুলিয়াছেন। অপর পক্ষে, রাজ্য তাহাদের পার্শ্বশিক্ষকের সমগোত্রীয় পদে রাখিয়া, কিছু বেতন বাড়াইয়া তাহাদের ক্ষোভ প্রশমিত করিতে চায়। প্রশ্ন উঠিবে, শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে স্কুলের সমান মর্যাদা দিতে সম্মত থাকিলে শিক্ষকের সমমর্যাদার দাবি কি খারিজ করা চলে? প্রশ্নটি রাজ্যের পনেরো লক্ষেরও অধিক শিশুর ভবিষ্যতের সহিতও জড়িত। এই শিশুদের অধিকাংশই দলিত ও আদিবাসী, দরিদ্রতম ও সর্বাধিক প্রান্তিক পরিবারগুলির সন্তান। ইহাদের জন্য ‘দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষাব্যবস্থা’ কায়েম রাখিবার যে নীতি এত দিন ধরিয়া চলিতেছে, তাহা কি সমর্থনের যোগ্য? প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ— এবং, সুস্থ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাহার নিষ্পত্তি হওয়া বিধেয়।
প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাগুলিতে যথেষ্ট স্কুল নাই, এই উপলব্ধি হইতে ১৯৯৭ সালে রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রগুলির পত্তন করিয়াছিল। সেইগুলিতে পড়াইবার জন্য স্বল্প বেতনে নিয়োগ হইয়াছিলেন শিক্ষা সহায়িকা এবং সম্প্রসারকরা। সর্বশিক্ষা অভিযান (২০০১), এবং শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯) অনুসারে যে অবস্থানে যত স্কুল দেখানোর প্রয়োজন হইয়াছিল, তাহার শর্ত পূরণ করিতে রাজ্য সরকার বরাবর এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকেই দেখাইয়া আসিয়াছে। কিন্তু আইন অনুসারে স্কুলের যে পরিকাঠামো, অথবা শিক্ষক নিয়োগে যে শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন, তাহার সামান্যই হইয়াছে। গত ডিসেম্বরে শিক্ষা দফতরের অধীনে ওই কেন্দ্রগুলি আসিলেও, সেইগুলির প্রকৃত সংযুক্তি হয় নাই। এখনও কেন্দ্রগুলি পঞ্চায়েত দফতরের অধীনস্থ শিক্ষা মিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হইতেছে। চিরকাল উপেক্ষিত এই প্রতিষ্ঠানগুলি অতিমারি কালে বিশেষ ভাবে অবহেলিত হইয়াছে। অথচ, দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকিবার পরে এখন প্রত্যন্ত এলাকায় ওই বিদ্যালয়গুলির বিশেষ সক্রিয়তা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান যাঁহারা চালাইবেন, তাঁহাদের কেবল ভয় দেখাইয়া কাজ হইবে না। শিক্ষাকেন্দ্রগুলি লইয়া রাজ্যের পরিকল্পনা কী, তাহা জানাইতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy