Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Home Ministry

ভয়ঙ্কর

অর্থাৎ, ভলান্টিয়াররাই ঠিক করিবেন, অ্যান্টি-ন্যাশনাল বক্তব্য কী ও কেন, এবং তাহার উপযুক্ত ব্যবস্থা করিবেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:৪২
Share: Save:

গত কয়েক বৎসর ধরিয়াই ‘নাগরিক অধিকার’ বস্তুটির মুণ্ডপাত করিতে ব্যস্ত কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তন্মধ্যেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাম্প্রতিক ঘোষণাটি সুস্থ নাগরিকের চিত্ত বিকল করিয়া দিবার মতো। দুইটি রাজ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কে ‘হিংসাত্মক’ কথা বলিতেছেন, কে-ই বা ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ মত প্রকাশ করিতেছেন, পোস্ট দিতেছেন, তাহার জন্য তদারকি করিতে বলা হইল অন্যান্য নাগরিককেই। বলা হইল, ভলান্টিয়াররা যেন খোঁজখবর রাখেন, এবং তেমন তেমন পোস্ট দেখিলেই ‘যথাক্ষেত্রে’ জানাইয়া দেন। অর্থাৎ, ভলান্টিয়াররাই ঠিক করিবেন, অ্যান্টি-ন্যাশনাল বক্তব্য কী ও কেন, এবং তাহার উপযুক্ত ব্যবস্থা করিবেন। ইহা, এক কথায়— ভয়ঙ্কর। বাস্তবিক, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র বলিয়া যাহারা বিশ্ব-ইতিহাসে পরিচিত, তাহারা এই ধরনের কাজকর্মের দৃষ্টান্ত রাখিয়া গিয়াছে— নাগরিকের বিরুদ্ধে নাগরিককে হিংসায় প্ররোচনা দিবার দৃষ্টান্ত। সাত দশক গণতন্ত্রে বসবাস করিবার পর এহেন বাস্তবে ভারতীয় নাগরিক নিক্ষিপ্ত হইতেছেন, ভাবিলে হৃৎকম্প হয়। তুরস্কের সাংবাদিক-লেখক এচে টেমালকুরান তাঁহার বিশ্বখ্যাত বই হাউ টু লুজ় আ কান্ট্রি-তে নিজের দেশে রাষ্ট্রের ঠিক এমন কার্যবিধির বর্ণনা দিয়াই সতর্ক করিয়াছিলেন। সন্দেহ হয়, ভারতেও গণতন্ত্র ইতিমধ্যেই হৃত হইয়াছে। নতুবা অবশিষ্ট দেশের বিনা প্রতিবাদে, বিনা শোরগোলে, জম্মু ও কাশ্মীর কিংবা ত্রিপুরায় এহেন ভয়ঙ্কর নির্দেশ কার্যকর করিতে পারিত না কেন্দ্রীয় সরকার।

একাধিক গুরুতর আপত্তি এই নির্দেশের বিরুদ্ধে। প্রথমত, এখন অবধি কাহাকে যে ঠিক অ্যান্টি-ন্যাশনাল বলা যায়, তাহাই নিশ্চিত নহে। আদৌ শব্দটির কোনও আইনগত ভিত্তি আছে কি না, কেহ যদি মূলস্রোতের ন্যাশনাল না হইয়া থাকেন, তিনিই অ্যান্টি-ন্যাশনাল হিসাবে গণ্য হইবার যোগ্য কি না, এই সব এখনও স্পষ্ট নহে। ভারতীয় সংবিধান যে হেতু এখনও মুক্তচিন্তার অধিকারের সহিত বাক্‌স্বাধীনতার কথাও বলিয়া থাকে, দেশের সুপ্রিম কোর্টের পক্ষেও অ্যান্টি-ন্যাশনাল বিচার করা সহজ কথা হইতে পারে না। স্মরণ করা যায়, ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট ২০০০-এর ৬৬(এ) ধারা বিলোপের সময় সুপ্রিম কোর্টেরই নির্দেশিকা ছিল, যে কোনও আক্রমণাত্মক কিংবা বিরক্তি-উৎপাদক মন্তব্যই হিংসায় ইন্ধনদায়ক মন্তব্য হিসাবে গ্রাহ্য হইতে পারে না। অর্থাৎ, ইহা সূক্ষ্ম বিচারের প্রশ্ন। অর্বাচীন নাগরিকের পছন্দ-অপছন্দের বিষয় নহে।

সাধারণ মানুষ সচেতন হউন বা না হউন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানে যে, দেশবিরোধিতা কিংবা রাষ্ট্রবিরোধিতাই বিবেচ্য হইলে তাহা কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মতাধীন নহে, তাহার ভিত্তি একান্ত ভাবেই আইনের উপর। সে ক্ষেত্রে নূতন নির্দেশিকা কেবল নাগরিককে নাগরিকের বিরুদ্ধে লেলাইয়া দিবার অস্ত্র। দেশের বিজেপি সরকার তাহা হইলে এই গুরুতর অস্ত্র তুলিয়া দিতেছে মানুষের হাতে, স্বনিযুক্ত সমাজপুলিশদের হাতে— যাঁহারা সহজেই গোমাংস ভক্ষণ হইতে শুরু করিয়া কৃষক-আন্দোলনের প্রতি সমর্থন, যে কোনও কিছুকেই অ্যান্টি-ন্যাশনাল দাগাইয়া দিতে প্রস্তুত। সমাজবিরোধী, অপরাধী কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তিও যে কোনও অপছন্দের লোককে অবলীলায় এই অছিলায় অভিযুক্ত করিতে পারিবেন, বিপদে ফেলিতে পারিবেন। কী চাহিতেছেন সরকারি কর্তা-নেতা-মন্ত্রীরা— জঙ্গলরাজ?

অন্য বিষয়গুলি:

Fascism Home Ministry Amit Mishra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy