ফাইল চিত্র।
যোগী আদিত্যনাথ মালদহ সফরে আসিয়া বলিয়াছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত ও চূড়ান্ত অপশাসক: গোটা রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার রকমসকম দেখিলেই তাহা বোঝা যায়। এই রাজ্যে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকিয়া আসে, গরু পাচারকারীরা সুরক্ষা পায়, অপরাধীরা আইনের হাত এড়াইয়া সদর্পে ঘুরিয়া বেড়ায়, ইত্যাদি। অভিযোগগুলি সঙ্গত কি না, সেই কূট রাজনৈতিক প্রশ্ন তোলা থাকুক, তাহার আগে আরও একটি জরুরি প্রশ্ন, প্রশ্নকারীর নৈতিক যোগ্যতা বিষয়ে। তিনি যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যে রাজ্যের নেতৃত্ব দিবার সুবাদে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সুনজরাভিষিক্ত হইয়া বিজেপির তারকা প্রচারক, সেই রাজ্যটি গত কয়েক বৎসর কেমন আছে? অপশাসন যদি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে থাকে, যোগীর মতো নেতার নেতৃত্বে তাহা শতগুণে বাড়িয়া যাইবার কথা। সুতরাং, প্রশ্নটি এখানে সহজ ও স্পষ্ট। কোন নৈতিক ভূমির উপর দাঁড়াইয়া তিনি পশ্চিমবঙ্গের দিকে দুর্নীতি ও অপশাসনের অভিযোগের আঙুল তোলেন?
লক্ষণীয়, ২০১৯ সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো বলিতেছে, সেই বৎসর উত্তরপ্রদেশে প্রায় ষাট হাজার অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে, গোটা দেশের ১৪ শতাংশেরও অধিক। তন্মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা ব্যতিক্রমী ভাবে ভয়ানক রকমের হিংস্রতার ‘দৌলত’-এ দেশের নজর কাড়িয়া লইয়াছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা শাস্তি পায় নাই, বরং প্রশাসনের কাছ হইতে সুরক্ষা ও আশ্রয় পাইয়াছে, আক্রান্ত পক্ষ কখনও বিপন্ন, কখনও শাস্তিপ্রাপ্ত হইয়াছে। মহিলাদের উপর ন্যক্কারজনক আক্রমণের পর উত্তরপ্রদেশ পুলিশ নির্দ্বিধায় আক্রান্ত মেয়েটির চরিত্র মন্দ বলিয়া রিপোর্ট দিয়াছে, এবং দুষ্কৃতী সমাজকে প্রশ্রয় দিয়াছে। উন্নাও এবং হাথরস-এর দেশ-কাঁপাইয়া-দেওয়া ঘটনার কথা বাদ দিলেও এই মার্চ মাসেই গত দুই সপ্তাহে একের পর এক ঘটনা তীব্র ধাক্কা দিয়া গিয়াছে— কানপুরের কাছে তেরো বৎসরের কন্যার গণধর্ষণ, ইলাহাবাদের নারী ইনস্পেক্টরের লাঞ্ছনা, আগরার কাছে মা ও মেয়েকে একত্রে অত্যাচার ও খুন, আজ়মগড়ে ১১ বৎসরের কন্যার ধর্ষণ, বদাউনে পুলিশ কর্তৃক অঙ্গনওয়াড়ি মহিলাকর্মীর গণধর্ষণ। মাত্র দশ দিনের ‘কৃতিত্ব’। প্রশাসনের অসক্রিয়তা রাজ্যের মধ্যে সমালোচনার ঢেউটুকুও তুলিতে পারে নাই— কেননা বিরোধীরা সেখানে আতঙ্ক ও আশঙ্কায় চুপ করিয়া থাকেন।
স্বাভাবিক। গত বৎসরের গোড়ায় সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় যোগী সরকার দেখাইয়া দিয়াছে, সরকারবিরোধী কথা বলিলে বা কাজ করিলে কী বিষম ফল ফলিতে পারে। সরাসরি বাড়ি হইতে তুলিয়া শিক্ষক-সমাজকর্মী-সাংবাদিকদের জেলে পোরা হইতে পারে। কেবল পথে নামিয়া বিরোধিতা করিবার দায়ে জামিনহীন ভাবে আটকাইয়া রাখা যাইতে পারে। বুঝাইয়া দিয়াছে, জাতপাতধর্মবৈষম্য-অধ্যুষিত সমাজে সরকার স্থিতাবস্থা আরও স্থিত করিতে চায়, অত্যাচার আরও তীব্র করিতে ও বৈষম্য আরও গভীরপ্রোথিত করিতে চায়। হিন্দু একতা সঙ্ঘের সদ্যপ্রকাশিত ভাইরাল হওয়া ভিডিয়ো দেখাইতেছে, জল খাইতে আসিয়া এক বারো-চোদ্দো বৎসরের বালক কী অমানুষিক ভাবে মার খাইতেছে, তাহার হাত মুচড়াইয়া, তলপেটে লাথির পর লাথি মারিয়া তাহাকে জল খাইতে চাহিবার দাম শিখানো হইতেছে। যে মন্দিরে এই ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহার কর্তৃপক্ষ অপরাধীর প্রকাশ্য সমর্থক, এবং কর্তৃপক্ষ যোগী প্রশাসনের প্রকাশ্য সমর্থক। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাঁহার বঙ্গীয় সমর্থকদের কথা দিয়াছেন যে, এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসিলেই লাভ জেহাদ চালু করিবেন, ভিন্ধর্মের বিবাহে শাস্তির ব্যবস্থা করিবেন। অর্থাৎ, তিনি পশ্চিমবঙ্গকে উত্তরপ্রদেশ বানাইতে চাহেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রতি তাঁহার প্রধান সমালোচনা— সে এখনও উত্তরপ্রদেশ হইতে পারে নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy