Advertisement
১১ জানুয়ারি ২০২৫
West Bengal Politics

উত্তরের জমি আদৌ চষতে পারছেন গুরু-শিষ্য জুড়ি? সিপিএম এত খারাপ ছিল না! সজল-জবাবে আক্ষেপ

তাপস রায়ের মতো পোড়খাওয়া নেতা তা হলে নিজের পাড়ায় সীমাবদ্ধ হয়ে গেলেন? সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের মঞ্চ মানে তো ৫০ নম্বর ওয়ার্ড। ঠিক পাশের ওয়ার্ড ৪৮-এর বাসিন্দা তাপস।

Fertile land for Lotus in North Kolkata, BJP’s duo failing party’s prospects?

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:০২
Share: Save:

অনেকে বলেন ‘মানিকজোড়’। অনেকে বলেন ‘গুরু-শিষ্য’। তো সেই গুরু-শিষ্যের কাছে উত্তর কলকাতা দাপিয়ে বেড়ানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু কংগ্রেসি ঘরানা থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তাঁরা এখনও যেন খানিকটা মিইয়ে। ঈষৎ লক্ষ্যহীন। ‘শিষ্য’ যদি বা ক্ষেত্রবিশেষে শক্তি প্রদর্শন করে নজরে, ‘গুরু’কে প্রায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে।

শিষ্য সজল ঘোষ অবশ্য তা মানতে রাজি নন। ছাত্র রাজনীতির কাল থেকেই তাপস রায় তাঁর ‘গুরু’। তাপস যখন ছাত্র পরিষদ সভাপতি, সজল তখন সেই সংগঠনের জেলা প্রধান। ‘শিষ্যত্ব’ সেই সূত্রেই। তদুপরি দু’জনেই ‘ছোড়দা’র (সোমেন মিত্র) চেলা। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেও সে কথা গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেন সজল। তাই তাপসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বললে সজলের এখনও গায়ে লাগে। বলেন, ‘‘তাপসদা আর আমি উত্তর কলকাতা জুড়ে কী ভাবে কাজ করছি, তা যদি কারও নজরে না পড়ে, তা হলে আমার কিছু বলার নেই। তাপসদা সমস্ত বৈঠকে থাকেন। একটা বৈঠকে যদি চারটে লোকও থাকে, তার মধ্যে তাপসদা একজন।’’ কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের পর (আসলে লোকসভা নির্বাচনে হারের পর) তাপসকে কি আদৌ দেখা যাচ্ছে? সজল বলছেন, ‘‘১২ জানুযারি সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে খাদ্যমেলার শেষ দিন। সে দিনও আমাদের মঞ্চে তাপসদাকে দেখতে পাবেন।’’

সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের মঞ্চ অর্থাৎ ৫০ নম্বর ওয়ার্ড। ঠিক পাশের ওয়ার্ড ৪৮-এর বাসিন্দা তাপস। লোকসভা ভোটে তাপস এই ৪৮, ৪৯ এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেয়ে। কারণ, এই এলাকা তাপসের ‘পাড়া’। তার মানে কি তাপস আপাতত নিজের পাড়া বা আশপাশের গলিতেই সীমাবদ্ধ?

উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপকে লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতার পদও সামলাতে হয়। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে সারা বছর পড়ে থাকার সময় স্বভাবতই তাঁর নেই। সেই ‘অনুপস্থিতি’ কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল তাপসের সামনে। তাপস আদৌ পারছেন? প্রশ্নের জবাবে তাপস বলছেন, ‘‘আমার লড়াই তো ছিল মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। লোকসভার ফল প্রকাশের পর মুখ্যমন্ত্রী দলের সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বলেছিলেন, তিনি নিজে ৩০০ ফোন না করলে উত্তর কলকাতা ধরে রাখা যেত না। ওই ফোনগুলো তিনি কাদের করেছিলেন?’’ তাপসের দাবি, ‘‘লালবাজারের কর্তা আর দুষ্কৃতীদের। তার পরেও ২৪টা ওয়ার্ড আর দু’টো বিধানসভায় লিড পেয়েছি। আরও দু’টোয় খুব অল্প ব্যবধানে হেরেছি।’’

প্রশ্ন তো সেটাই। এত ‘ভাল’ লড়াই দিয়েও এখন ‘আড়ালে’ কেন? উত্তর কলকাতায় তো তাঁর দাপিয়ে বেড়ানোর কথা! তাপস বলেন, ‘‘দাপিয়ে বেড়াব মানে কী? আমি তো আর লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে চার দিকে ঘুরে বেড়াব না। সব দলের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি থাকে। সেই পদ্ধতি মেনেই কাজ করছি। বর্ষীয়ান রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, সব পালন করছি।’’

অর্থাৎ, দল বললে তবেই ‘সক্রিয়’ হবেন গুরু-শিষ্য? শিষ্য সজলের জবাব, ‘‘উত্তর কলকাতায় বিজেপির ভোট বাড়ছে কি না পরিসংখ্যান দেখে নিন।’’ পরিসংখ্যান ‘সম্ভাবনাময়’ হলে তো আরও জোরকদমে মাঠে নামা উচিত! সজলের ব্যাখ্যা, ‘‘বিজেপি দলটা তৃণমূলের মতো নয়। এখানে দলে যোগ দিয়েই সব নিজের হাতে নেওয়া যায় না। জয়প্রকাশ মজুমদার বিজেপিতেও রাজ্য সহ-সভাপতি ছিলেন, তৃণমূলে গিয়েও তাই। সৌরভ চক্রবর্তী কংগ্রেসে থাকাকালীনও ছাত্র পরিষদ সভাপতি, তৃণমূলে গিয়েও তাই। বিজেপিতে ওটা হয় না।’’ তবে দলের প্রতি ‘কৃতজ্ঞ’ সজল। কারণ, দল খুব অল্প সময়েই তাঁকে অনেক দিয়েছে। কাউন্সিলর করেছে, নিরাপত্তা দিয়েছে, সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছে, বিধানসভা উপনির্বাচনে টিকিটও দিয়েছে। যেমন তাপস দলে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লোকসভার প্রার্থী হয়েছেন। এখন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। কিন্তু, সজলের বক্তব্য, ‘‘এখনই উত্তর কলকাতায় দল চালানোর সব ক্ষমতা আমাদের হাতে দিয়ে দিতে হবে, সেটা সম্ভব নয়।’’

দলের সব ক্ষমতা হাতে না দিলেও উত্তর কলকাতা জুড়ে জনসংযোগ বাড়াতে বাধা কোথায়? এই প্রশ্নের জবাবে কিছুটা অসহায় শোনাল সজলের গলা, ‘‘সিপিএম খারাপ ছিল। কিন্তু তৃণমূল তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি খারাপ। সিপিএমের সময়ে তা-ও গোটা এলাকা জুড়ে রাজনীতি করা যেত। এখন আর ওই ভাবে রাজনীতি হয় না। রাজনীতিটাই বদলে গিয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Politics TMC BJP CPIM Tapas Roy Sajal ghosh Sudip Bandyopadhyay North Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy