Advertisement
০৯ অক্টোবর ২০২৪
Dengue

দেখনদারি

মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা চলে, কলকাতা-সহ পুরসভাগুলিতে বোর্ডের পরিবর্তন না হওয়া সত্ত্বেও ডেঙ্গি প্রতিরোধে সেগুলির এমন বেসামাল দশা কেন?

dengue

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৫১
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেছেন, পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন হয়নি বলে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। শুনে বিস্ময় জাগে।
পঞ্চায়েত সদস্যদের নির্দেশের জন্য কি বসে রয়েছেন সরকারি আধিকারিক ও কর্মীরা? ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের সরকারি রূপরেখা তো গ্রাম থেকে জেলা, সর্বস্তরের কর্মীদের কাছে থাকার কথা। মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা চলে, কলকাতা-সহ পুরসভাগুলিতে বোর্ডের পরিবর্তন না হওয়া সত্ত্বেও ডেঙ্গি প্রতিরোধে সেগুলির এমন বেসামাল দশা কেন? বিধানসভায় ৩১ জুলাই আট ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রায় ন’শো রোগীর পরিসংখ্যান পেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে মৃত্যু আরও বেড়েছে। পরিচিত নকশা অনুসারেই, উত্তরবঙ্গের তুলনায় দক্ষিণবঙ্গে, এবং উত্তর কলকাতার চাইতে দক্ষিণ কলকাতায় রোগের প্রকোপ বেশি। সরকারের প্রতিক্রিয়াও যথা পূর্বম্। নির্মাণের জন্য জমা জল, পরিত্যক্ত বাড়ি, উদাসীন গৃহস্থ— ডেঙ্গির প্রকোপের ব্যাখ্যায় সেই চর্বিতচর্বণ শোনা গিয়েছে পুরপ্রধান ফিরহাদ হাকিমের মুখে। মমতা বলেছেন, মেট্রো রেলের কাজের জন্য বিধাননগরে ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। এই ধরনের ব্যাখ্যা তথ্যগত ভাবে ঠিক, কিন্তু এগুলির মধ্যে বিষয়টিকে ‘স্বাভাবিক’ বলে দেখানোর একটা চেষ্টা আছে, যা আপত্তিকর। মেট্রো রেল অথবা আবাসন নির্মাণের কাজ হলে, তালাবন্ধ বাড়িতে জল জমলে, মশা হবে, রোগ ছড়াবে এবং কিছু মৃত্যু হবে, এটাই যেন প্রত্যাশিত। মৃত্যুগুলি দুঃখের, তবে বিস্ময়ের নয়— এমনই বার্তা মেলে এমন ব্যাখ্যা থেকে।

এখানেই প্রশ্ন তোলা দরকার নাগরিকের। কী কী কারণে কলকাতা বা জেলা শহরগুলিতে ডেঙ্গি ছড়ায়, অতীতের বহু অকালমৃত্যুর বিনিময়ে তা জানা গিয়েছে। সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মৃত্যু রোধ করাই কি পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নয়? কোথায় নির্মাণ হচ্ছে, কোথায় পরিত্যক্ত আবাস, অপরিষ্কৃত পুকুর, ফাঁকা জমি রয়েছে, তার তথ্য নিশ্চয়ই রয়েছে। পতঙ্গ বিশেষজ্ঞদের অতীত সমীক্ষা দেখিয়েছে, কোন এলাকাগুলিতে মশার প্রকোপ বেশি। ওয়র্ড স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, কোথায় মশার কীট বেশি মিলেছে। এই তথ্যগুলি থেকে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকির একটি সুসংহত মানচিত্র তৈরি করা, এবং তার ভিত্তিতে আগাম ব্যবস্থা করা কি এতই কঠিন কাজ? পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, শহরের অধিকাংশ টায়ারের দোকানের আশেপাশে পরিত্যক্ত টায়ারের মধ্যে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা মিলেছে। এই সংবাদে কোনও অভিনবত্ব নেই। প্রশ্ন হল, ওই টায়ারের দোকানগুলিকে বর্ষার আগেই পরিত্যক্ত টায়ার সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করা যায়নি কেন? প্রয়োজনে তাদের কঠোর জরিমানা করা যেত, অথবা পুরকর্মীরাই টায়ারগুলি বাজেয়াপ্ত করতে পারতেন। তেমনই, নির্মাণ সংস্থাগুলির কাছে জনস্বাস্থ্য বিধি লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি তলব করার অধিকারও পুরসভার রয়েছে। যখন ডেঙ্গি করাল রূপ ধারণ করেছে, তখন যদি পুরসভা নড়ে বসে টায়ারের দোকান কিংবা নির্মাণ সংস্থাগুলিকে নোটিস পাঠায়, তবে তা নিয়মপালনের অভিনয় বলে মনে হতে বাধ্য।

এমনই কুনাট্য প্রতি বছর চলে। এ বছর হাওড়া পুরসভা তিনশোটি ক্লাবকে অর্থ সাহায্য করছে, যা দিয়ে তারা ডেঙ্গি-সতর্কতা প্রচারে ফ্লেক্স ও ব্যানার টাঙাবে। এতে পরিবেশে আরও কিছু প্লাস্টিক যোগ হবে, এবং পরিত্যক্ত ফ্লেক্সে জল জমে মশা বংশবৃদ্ধি করবে। ডেঙ্গি যখন ঘরে ঘরে ছড়াচ্ছে, তখন ব্যানার টাঙিয়ে কী লাভ? বাংলায় ম্যালেরিয়া নিবারণের কাজে ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলি চিরকাল অগ্রণীর ভূমিকা নিয়েছে। অথচ সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত ক্লাবগুলি কার্যত নিষ্ক্রিয়। এলাকায় ডেঙ্গি-বিধি কারা লঙ্ঘন করছেন, ক্লাবের সদস্যরা তা চিহ্নিত করলে লাভ হত না কি? ডেঙ্গি প্রতিরোধে কার্যসূচি কেমন হওয়া দরকার, সে বিষয়ে প্রশাসন কতটা সচেতন, প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue West Bengal Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE