ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষের দিকে নজর এখন গোটা বিশ্বের। —ফাইল চিত্র।
আশ্বিনে পৌষমাসের দেখা পেতেই পারে মস্কো, রাশিয়া দেশটির জলবায়ুই সে রকম। কিন্তু তার মধ্যেও এই আশ্বিনে কি আলাদা কোনও স্বস্তির শ্বাস মিশে থাকছে সে দেশের শাসক-নেতাদের হাবেভাবে? ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে পুরোদমে, তার মধ্যেই এখন ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষের দিকে গোটা বিশ্বের নজর ঘুরে গেল। ইউরোপের যুদ্ধের পাশে এসে গেল এশিয়ার যুদ্ধ। কূটনীতির খাতায় যদি হিসাব কষা যায়, এতে রাশিয়ার লাভ হল না ক্ষতি, তা হলে বোঝা যাবে সাম্প্রতিক ঘটনায় রাশিয়ার খুশি হওয়ার বিস্তর কারণ আছে। এবং/ফলত ইউক্রেনীয়দের উদ্বেগ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। ইজ়রায়েলের যে কোনও সঙ্কটই আমেরিকা-সহ পশ্চিম ইউরোপের কাছেও সঙ্কট রূপে প্রতিভাত হয়, এই সহজ তথ্য মনে রাখলে বোঝা যায় যে এই মুহূর্তে নেটো-র সময় ও শক্তিতে কুলোবে না ইউক্রেনে বড় মাপের রাশিয়া-বিরোধিতায় মনোনিবেশ করার। রাশিয়া চাইলে এই সুযোগে ইউক্রেনে যু্দ্ধের বেগ বাড়াতে পারে, যদি তাদের সে রকম ইচ্ছে থাকে। নিন্দকে বলেন, আগে থেকে মস্কোর ‘ইচ্ছে’ বোঝা সহস্র না হলেও শত বর্ষের সাধনার ধন, সুতরাং ভবিষ্যৎই বলবে তারা কী করতে চায়। কয়েকটি ইঙ্গিত তবু চোখ এড়ায় না।
যেমন, এক, রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ নিজেই মুখ ফুটে ইতিমধ্যে বলেছেন যে, প্যালেস্টাইন সঙ্কটে ইজ়রায়েলের পাশে থাকতে গিয়ে আমেরিকার কিভকে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ না হলেও কমে যেতে পারে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলতে পারেন, ইউক্রেনকে যে ধরনের অস্ত্র দেওয়া হচ্ছিল, এবং ইজ়রায়েল যে অস্ত্রের সরবরাহ চায়, দুইয়ের মধ্যে বিরাট ফারাক, সুতরাং এই দুইয়ের সরবরাহের মধ্যে দ্বন্দ্বও সামান্য। ইজ়রায়েল চায় ‘আয়রন-ডোম’ মিসাইল, আর লক্ষ্যভেদী দূরপাল্লার অস্ত্র, এবং কামান-গোলা ইত্যাদি, ইউক্রেনের চাহিদা অন্য রকম। তবে এও ঠিক, ইজ়রায়েল যদি প্যালেস্টাইন ভূমি-যুদ্ধ শুরু করে তা হলে অস্ত্রের প্রয়োজন পাল্টাতে শুরু করবে। ইতিমধ্যেই ব্রাসেলস-এ নেটোর একটি বৈঠক হয়েছে, তাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির আশঙ্কার উত্তরে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব গ্রান্ট শ্যাপস আশ্বাস দিয়েছেন, ‘ইউরোপের যুদ্ধ’ তাঁদের কাছে কম জরুরি হতেই পারে না, তাঁদের মাথার একেবারে সামনেই আছে সে বিষয়টি।
দুই, অস্ত্র সরবরাহ বাদ দিলেও অবশ্য জ়েলেনস্কির চিন্তার কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না। যা-ই বলুন না কেন শ্যাপস, অন্তত আমেরিকা নামক বিশ্বশক্তির কাছে ইজ়রায়েলের সঙ্কটের পাশে বিশ্বদুনিয়ার আর কারও কোনও সঙ্কটই তুলনীয় হতে পারে না। এ কেবল অস্ত্রের প্রশ্ন নয়, তার থেকে অনেক বড় ‘এনগেজমেন্ট’-এর প্রশ্ন, যার মধ্যে মিশে আছে কূটনীতির প্রশ্ন, অর্থনীতির প্রশ্ন। প্রেসিডেন্ট পুতিন নাকি তাঁর ঘনিষ্ঠ বলয়ে ইতিমধ্যেই পশ্চিমি শক্তিগুলির মনোযোগ অন্য দিকে ধাবিত হওয়ায় তাঁর হৃষ্টতা জানিয়েছেন। সংশয়ের কারণ আছে যে পশ্চিম এশিয়ার সংঘর্ষের অবকাশে তার নিজের ইউক্রেনের উপর আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্য অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট পুতিন এই মুহূর্তে হামাস-ইজ়রায়েল ভয়াল সংঘর্ষকে আমেরিকার পশ্চিম এশিয়ার নীতির চূড়ান্ত ব্যর্থতা হিসাবেও দেখাতে চাইছেন। এতে তাঁর একটি পরোক্ষ কূটনৈতিক স্বার্থ আছে স্পষ্টতই— তিনি বলতে চান আমেরিকা ও তার সঙ্গী দেশগুলি যে অঞ্চলের রাজনীতিতে গিয়ে মাথা গলায়, তাদের সঙ্কটের মীমাংসা তো করতে পারেই না, উল্টে সেই সঙ্কট আরও বহু দিন বাড়িয়ে দেয়। গাজ়া ও ইজ়রায়েলের বর্তমান পরিস্থিতিতে সে কথা শত অনিচ্ছা থাকলেও স্বীকার করতে বাধ্য হবে বাকি দুনিয়া। ফলে বলতেই হবে, পুতিনের যুদ্ধপ্রিয় সাঙ্গোপাঙ্গরা পৌষমাসে পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁর দেশের জলবায়ু যা-ই বলুক না কেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy