কলকাতা পৌরসংস্থা। —ফাইল চিত্র।
চলতি বছরে কলকাতা পুরসভা থেকে অবসর নিয়েছেন তাঁরা। অথচ, গত জানুয়ারিতে সেই
অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র ৬০ শতাংশ কর্মী পেনশনের পাশাপাশি গ্র্যাচুইটি এবং কমিউটেশন (পেনশনের একাংশের বদলে এককালীন থোক টাকা) পেয়েছিলেন। কিন্তু বাকি ৪০ শতাংশ কর্মী এবং চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁরা প্রায় সকলেই সেই টাকা থেকে বঞ্চিত। এ বছর পুরসভার কর আদায়ের হার আশানুরূপ না হওয়ায় কোষাগারের অবস্থাও সঙ্গিন। ফলে, অবসরপ্রাপ্ত এই বিপুল সংখ্যক কর্মীর গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশনের টাকা কী ভাবে পরিশোধ করা হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এমনকি, আগামী দিনে পুরকর্মীদের বেতন দেওয়া নিয়েও সংশয় ঘনাচ্ছে পুর অন্দরে। যদিও পুরসভার এক কর্তা বলছেন, ‘‘ধাপে ধাপে অবসরকালীন টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’
পুরসভার পেনশন বিভাগ সূত্রের খবর, ২০২৪ সালে অবসর নেওয়া কর্মীদের পেনশন মেটাতে প্রয়োজন প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। গত দু’বছর ধরে ঠিকাদারদেরও পুরসভার থেকে পাওনা রয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এ বার পুরসভার রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় কম হওয়ায় চিন্তা বেড়েছে। একাধিক বিভাগে সম্পত্তিকর-সহ বিভিন্ন কর আদায়ের পরিমাণ কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের পয়লা এপ্রিল থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজস্ব আদায়ের তুলনায় চলতি বছরে ওই একই সময়ে রাজস্ব আদায় কমেছে প্রায় ৭ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। গত মাসে এ নিয়ে বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুর কর্তৃপক্ষ। এ দিকে পুর অর্থ দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ভাঁড়ারের অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় ভবিষ্যতে পুরকর্মীদের
বেতন কী ভাবে হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
কেন এই পরিস্থিতি? পুর আধিকারিকদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, আয়ের তুলনায় ব্যয়ের বহর বেশি হওয়ায় বকেয়া পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে পুরসভা। গত বছরের পুরসভার বাজেটে দেখা গিয়েছে, আয়ের তুলনায় খরচ বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এখনও পর্যন্ত ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দু’হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে!
ফলে গত তিন বছর ধরে পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা তাঁদের প্রাপ্য টাকা (গ্র্যাচুইটি ও
কমিউটেশন) নিয়মিত পাচ্ছেন না। মাঝে বকেয়ার পরিমাণ কিছুটা কমানো গেলেও ফের যে-কে-সেই! ফেব্রুয়ারিতে অবসর নেওয়া এক কর্মী সোমবার পুর পেনশন দফতরে বসে বলেন, ‘‘স্ত্রী অসুস্থ। মাস গেলে মোটা টাকার ওষুধ লাগে। মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। অবসরকালীন থোক টাকাটা ভীষণ প্রয়োজন। কবে পাব জানি না।’’ মার্চে অবসর নেওয়া আর এক পুরকর্মীর অভিযোগ, ‘‘অবসরকালীন মোটা টাকাটা খুব প্রয়োজন। বাড়ি তৈরি করব। কিন্তু কবে পাব?’’
পুরকর্মীদের বকেয়া পাওনা মেটানোর দাবিতে একাধিক বার আন্দোলনে শামিল হয়েছে বিরোধী কর্মী সংগঠন। কলকাতা পুরসভার
ক্লার্কস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘পুরকর্মীরা প্রতারণার শিকার। এক বছর আগে অবসর নেওয়া কর্মীরা গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশনের টাকা পাচ্ছেন না। অথচ ওঁদের তো সুদে-আসলে পরিশোধ করা হবে না। এই টাকা শীঘ্রই না দিলে
আন্দোলনে নামব।’’ বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘সরকার পুজোর সময়ে ক্লাবগুলিকে মোটা টাকা দিচ্ছে। কিন্তু সরকারি কর্মীদের অবসরের পরে হকের টাকা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার উৎসব, দান-খয়রাতি নিয়ে মেতে রয়েছে। ফলে খেটে খাওয়া সরকারি কর্মীরা হকের টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy