ইহাই কি দেশের রাজধানী? প্রশ্নটি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি সুপ্রিম কোর্টের, দিল্লির বায়ুদূষণ সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে। প্রশ্নটির ভিতর শুধুমাত্র সরকারি অকর্মণ্যতার প্রতি তীব্র সমালোচনার ভাবই উপস্থিত নাই, একই সঙ্গে এক প্রবল আশঙ্কার সুরও শোনা যায়। আশঙ্কা, পরিবেশ লইয়া, দেশের ভবিষ্যৎ লইয়া। বাস্তবিক, খাস রাজধানী অঞ্চলেই যদি বায়ুদূষণের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ-সহ অফিসকাছারি, যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিতে হয়, বিশ্বের কাছে সামগ্রিক ভাবে দেশের পরিবেশ লইয়া কী বার্তা পৌঁছাইবে? তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে স্বভাবত দেখা যায় যে, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রাজধানীর পরিস্থিতি কিছু ভাল। ভারতের ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য— দেশের সিংহভাগ অঞ্চলের তুলনাতেই দিল্লির সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নততর। সেই রাজধানীই যদি প্রতি বৎসর একটি নির্দিষ্ট সময় বায়ুদূষণে ধুঁকিতে থাকে, এবং স্থানীয় পর্যায়ের দূষণ প্রতিরোধে সরকারকে নাজেহাল হইতে হয়, তবে সেই দেশের বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত যাবতীয় প্রতিশ্রুতি, আলোচনা মুহূর্তে অপ্রাসঙ্গিক হইয়া যায় না কি? গত কাল সুপ্রিম কোর্ট তিরস্কার করিয়া বলিয়াছে যে, যাবতীয় নির্দেশ সত্ত্বেও দিল্লির দূষণের ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতির পরিমাণ শূন্য। অবস্থাটি তীব্র উদ্বেগের।
দিল্লির ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা উদ্বেগের কারণ হইল, সবেমাত্র স্কুল-কলেজ খুলিবার সঙ্গে সঙ্গেই দূষণের কারণে তাহা ফের বন্ধ করিয়া দিতে হইল। ২৯ নভেম্বর তাহা পুনরায় চালু হইল বটে, কিন্তু ভবিষ্যতে এই মাত্রায় দূষণ হইলে যে তাহার দ্বার পুনরায় রুদ্ধ হইবে না, এমন ভাবিবার কোনও কারণ নাই। শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রাখিলে এই প্রবল দূষণে তাহাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাইবার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি থাকিয়া যায়। অথচ, দিল্লির বায়ুদূষণ অতিমারির ন্যায় আকস্মিক এবং অভূতপূর্ব নহে। তৎসত্ত্বেও এত দিনে সেই দূষণ প্রতিরোধে কোনও কার্যকর পরিকল্পনা কেন করা হইল না, ভাবিতে অবাক লাগে।
পরিবেশ আপৎকালীন বিষয় নহে যে, পরিস্থিতি অনুযায়ী মোকাবিলা করা হইবে। আগাম পদক্ষেপ করাই বাঁচিবার পথ। ফসলের গোড়া পোড়ানোই মুখ্য কারণ হইলে কেন্দ্রীয় সরকারকে তাহার ব্যবস্থা করিতে হইবে; কলকারখানার, যানবাহন, নির্মাণকার্যের দূষণও যদি ইহার পশ্চাতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করিয়া থাকে, তবে সারা বৎসর তাহা নিয়ন্ত্রণ করিতে হইবে। অতিমারির কারণে বিগত প্রায় দেড় বৎসর ধরিয়া শিক্ষার্থীরা অশেষ দুর্ভোগ ভোগ করিয়াছে। মাঝে স্কুল খুলিয়াও দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে বন্ধ করিয়া দিতে হইয়াছে। ভবিষ্যতে তৃতীয় ঢেউ উপস্থিত হইলে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াইবে, কেহ জানে না। এমতাবস্থায় যে কয়টি শিক্ষাদিবস পাওয়া যায়, তাহার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে শিক্ষা-সহ নানা বিষয়ে অনলাইনের পথে যে চলিতে হইবে, তাহা এক প্রকার স্পষ্ট। কিন্তু ভারত এখনও সম্পূর্ণ সেই পথে চলিবার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি লয় নাই। সেই কারণেই অতিমারি কালে শিক্ষা সর্বাপেক্ষা অবহেলিত হইয়াছে। যত দিন না দেশ প্রকৃত অর্থে ডিজিটাল হইতেছে, শিক্ষাঙ্গনের দ্বার উন্মুক্ত রাখিবার চেষ্টা করিতে হইবে। দূষণের কারণে যেন শিক্ষার্থীরা অশিক্ষার অন্ধকারে তলাইয়া না যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy