এসএসকেএম হাসপাতালকে ‘প্রভাবশালীদের নিরাপদ স্থান’ বলল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি বিবেক চৌধুরী তাঁর রায়ে লিখেছেন, এ রাজ্যের একাধিক নেতা নানা মামলায় তদন্তকারীদের তলব পেয়ে এসএসকেএম-এ ভর্তি হয়েছেন, এবং জিজ্ঞাসাবাদের কবল থেকে ছাড় মেলা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আদালতের এই অবস্থান ‘বাংলার অপমান’। তিক্ত বাস্তব এই যে, বিচারপতির বক্তব্যের সপক্ষে দৃষ্টান্ত কম নেই। মদন মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় থেকে আরাবুল ইসলাম বা অনুব্রত মণ্ডল, শাসক দলের বহু নেতাই জেল হেফাজত হলে, অথবা জেরার মুখে পড়লে অসুস্থ হয়ে এসএসকেএম-এ ভর্তি হয়েছেন। এগুলিকে কাকতালীয় মনে করা কঠিন। শাসক দলের প্রভাবশালী চিকিৎসক-নেতারা যে ভাবে সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, বদলির খাঁড়া ঝুলিয়ে রাখেন চিকিৎসকদের মাথার উপরে, তার বহু নিদর্শন বার বার এসেছে সংবাদে। বাংলার অবমাননার শুরু সরকারি হাসপাতালের স্বাতন্ত্র্যের অবমাননায়। তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে থাকার মতো সুস্থ আছেন কি না পার্থ, কেবল এইটুকু জানার জন্য তাঁকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যেতে হল, রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি এই গভীর অনাস্থা আসলে পরিস্থিতির ফল।
এ রাজ্যের মন্ত্রীকে পড়শি রাজ্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য পাঠানোর অর্থ, পশ্চিমবঙ্গের কোনও সরকারি হাসপাতালকেই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত মনে করেনি কলকাতা হাই কোর্ট। পার্থবাবুর স্বাস্থ্যপরীক্ষার যে সব ফলের ভিত্তিতে এসএসকেএম তাঁকে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছিল, সেগুলিরই ভিত্তিতে ভুবনেশ্বর এমস তাঁর ভর্তির প্রয়োজন খারিজ করেছে, এতে সন্দেহ আরও ঘন হয়েছে। সমালোচনার মুখে পড়ে এসএসকেএম-এর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পার্থবাবুর রোগের লক্ষণগুলি থাকলে যে কোনও রোগীকে ভর্তি হতে বলতেন তাঁরা, তাই তাঁদের পরামর্শে ভুল নেই। এই দাবির সত্যতা বিচার করার ক্ষমতা সাধারণ নাগরিকের নেই। কিন্তু রোগী যেখানে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী ও রাজ্যের শাসক দলের মহাসচিব, সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ কেবল রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকবে না, শাসক-চিকিৎসকের প্রেক্ষিতেও বিষয়টি আলোচিত হবে, তা অবধারিত।
সেই বৃহত্তর প্রেক্ষিত সরকারি হাসপাতালের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে না। তৃণমূল আমলে মেডিক্যাল ছাত্রদের সঙ্গে শাসক-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক-নেতাদের একাধিক সংঘাত ঘটেছে, তার অনেকটাই ওই নেতাদের অকারণ ছড়ি ঘোরানোর প্রতিবাদে। এসএসকেএম হাসপাতালেই প্রভাবশালী নেতার কুকুরের ডায়ালিসিস করার তোড়জোড়ের কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়েছে। এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের অধ্যাপক-চিকিৎসকদের অনেকে জ্ঞান-দক্ষতা-অভিজ্ঞতায় দেশের সেরাদের মধ্যে গণ্য হন। কিন্তু এ-ও সত্য যে, পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা এবং স্বমর্যাদার সঙ্গে কাজ করতে গেলে তাঁরা বার বার শাসক দলের রোষের শিকার হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে অনেকেই আনুগত্যকে কাজের শর্ত বলে মেনে নিয়েছেন। আজ আদালতের অনাস্থা বস্তুত চিকিৎসক তথা হাসপাতালের আদর্শচ্যুতির ‘শাস্তি’। বশংবদ কর্মী চাকরি টিকিয়ে রাখতে পারে, প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা করতে পারে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy