ছবি: সংগৃহীত।
২০২৫-এর মাধ্যমিক শুরু হচ্ছে ১০ ফেব্রুয়ারি। অঙ্ক পরীক্ষা হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। অঙ্কের ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকা পড়ুয়াদের জন্য কিছু পরামর্শ রইল। কিন্তু তার আগে একটা গল্প বলা দরকার। স্বামী বিবেকানন্দ (বিলে) এবং তাঁর সতীর্থদের ছেলেমানুষির ঠেলায় রামরতনবাবু অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর বাগানের গাছে ব্রহ্মদৈত্যের ভয় দেখিয়েছিলেন। সেই ভয়ের অজানা আতঙ্কে বন্ধুরা বাগানে না গেলেও বিলে অন্ধকারের মধ্যেই একা একা সারারাত বাগানের গাছের ডালে চড়ে বসে ছিল। ছোট্ট বিলে সতীর্থদের কাছে প্রমাণ করেছিল, যে ব্রহ্মদৈত্য বলে ওই বাগানে ভয়ানক কিছুই নেই।
ঠিক এই গল্পের মতোই অঙ্ক নিয়েও ভয়ের কিছু নেই। রোজের চর্চা আর অভ্যাস থাকলেই এই ভয় কেটে যাবে সহজে। সুতরাং ভয় কাটানোর জন্য কী কী করতে হবে, সেটা বলি।
১) রাত না জাগাই ভাল। বরং ভোরবেলায় উঠে হালকা যোগ-ব্যায়াম করে পড়তে বসলে পড়াশোনায় মন বসবে বেশি। তা ছাড়াও অঙ্ক পরীক্ষার আগের রাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুম প্রয়োজন।
২) পরীক্ষার আগে রোজ ঘড়ি ধরে টেস্ট পেপার থেকে প্রশ্ন নিয়ে সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনে সেই সমাধান কোনও শিক্ষককে দিয়ে মূল্যায়ন করিয়ে নিতে পারলে ভুলভ্রান্তি শুধরে নেওয়া সম্ভব। তা না হলে নিজেরাই উত্তর মিলিয়ে দেখতে পারো।
৩) এই সময়ে সহজ হজম হয়, এমন হালকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৪) উপপাদ্য, সরল/চক্রবৃদ্ধি সুদ, সমহার বৃদ্ধি/হ্রাস, গড়, মধ্যমা, সংখ্যা গুরুমান, আয়তঘন, গোলক, চোঙ, শঙ্কুর আয়তন বা ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র লিখে এলেও নম্বর পাওয়া যায়। তাই রোজ ঘুম থেকে উঠে সূত্রগুলি লেখার অভ্যাস করতে হবে। তবে সূত্র অঙ্কে বার বার ব্যবহার করলে তা মনে থাকবে।
৫) উত্তরপত্রে কোনও অঙ্ক শেষ করতে না পারলেও আংশিক নম্বর পাওয়া যায়। তাই কোনও অঙ্ক যতটা কষা সম্ভব হয়েছে, ততটাই লিখে আসা উচিত। একই সঙ্গে অন্য কোনও বিকল্প প্রশ্নের উত্তর লিখতে শুরু করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প উত্তর দু’টির মধ্যে প্রাপ্ত বেশি নম্বরটি গ্রহণ করা হবে। তবে অসম্পূর্ণ অঙ্কে বেশি সময় নষ্ট না করে পরের অঙ্ক শুরু করাই ভাল।
৬) যে কোনও পদ্ধতিতে অঙ্ক সম্পূর্ণ করা সম্ভব, যদি না প্রশ্নপত্রে কোনও বিশেষ পদ্ধতির উল্লেখ থাকে।
৭) প্রতিটি সমাধানের শেষে প্রয়োজনীয় একক উল্লেখ করা থাকলে একক-সহ উত্তর লেখা বাঞ্ছনীয়।
৮) প্রতিটি স্তরে ‘বা’, ‘অথবা’ শব্দগুলি যথাযথ জায়গায় লিখতে হবে। এই চিহ্নগুলি না লেখা বা অপ্রয়োজনীয় স্থানে লেখার জন্য নম্বর বাদ দেওয়া হয়।
৯) উপপাদ্য সর্বদা বাঁদিকের পাতা থেকে লেখা শুরু করতে হবে, যাতে প্রমাণ লেখার জন্য পাতা বদলাতে না হয়। উপপাদ্যের ছবি আঁকা বাধ্যতামূলক। অনুশীলনের সময়ে উপপাদ্যের ছবি মিলিয়ে মিলিয়ে লেখার অভ্যাস করতে হবে।
১০) অজ্ঞাত রাশি সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ করতে হবে। দুই বা তার বেশি নম্বরের অঙ্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডান দিকে লাইন টেনে রাফ ওয়ার্ক দেখাতে হবে।
১১) অঙ্কের দাগের ক্রমানুসারে উত্তর লিখতে বলা হলেও যে অঙ্ক সহজে শেষ করতে পারবে, সেগুলি দাগ নম্বর-সহ আগে নিতে হবে। তবে, কোনও একটি দাগের সবক’টি অংশের উত্তর একসঙ্গে লিখতে হবে।
১২) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নের উত্তর সম্পূর্ণ বাক্যে না লিখে কেবলমাত্র সঠিক উত্তর লিখলেই হবে।
প্রশ্নপত্রের কোন বিষয়গুলির ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা:
১) ১ এর দাগের, ৬টি সঠিক উত্তর নির্বাচনের প্রশ্নের অপশন নম্বর-সহ উত্তর লিখতে হবে। কোনও প্রশ্ন বাদ দেওয়া চলবে না।
২) ২ এর দাগের, শূন্যস্থান পূরণের ৬টির মধ্যে যে কোনও ৫টি করতে বলা থাকলেও সবক’টির উত্তর লিখতে হবে। কারণ কোনও প্রশ্নের উত্তর ভুল হলেও অতিরিক্ত সঠিক উত্তরের নম্বর পাওয়া যায়।
৩) ৩ এর দাগের প্রশ্নে সত্য/মিথ্যা লেখার অঙ্কে সব উত্তর লিখতে পারলে ভাল। কোনও একটি প্রশ্নের সত্য/মিথ্যা-র উত্তর এক বারই লিখতে হবে। একাধিক বার আলাদা আলাদা উত্তর লিখলে প্রথমটিই গ্রহণ করা হবে।
৪) ১, ২ ও ৩ এর দাগের এক নম্বরের উত্তরের ক্ষেত্রে উত্তরপত্রে তিনটি কলাম টেনে প্রথম কলামে দাগ নম্বর, দ্বিতীয় কলামে উত্তর ও তৃতীয় কলামে রাফ ওয়ার্ক সাজিয়ে লেখা যাতে পারে। তবে রাফ ওয়ার্ক না থাকলেও চলবে। এক মার্কসের উত্তর সঠিক হলেই পুরো নম্বর পাওয়া যায়।
৪) একই ভাবে, ১২টি সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রতিটি ২ মার্কসের প্রশ্নে যে কোনও দশটি করতে বলা থাকলেও সব লেখার চেষ্টা করলে ভাল। এ ক্ষেত্রে পূর্ণ নম্বর পেতে হলে প্রয়োজনীয় রাফ ওয়ার্ক / ছবি থাকা আবশ্যক।
৫) পাটিগণিত থেকে অন্তত একটি অঙ্ক করতেই হয়। সরল / চক্রবৃদ্ধি সুদ, সমহার বৃদ্ধি / হ্রাসের অঙ্কে সঠিক সূত্র লেখার জন্য সাধারণত ১-২ নম্বর দেওয়া হয়ে থাকে।
৬) দ্বিঘাত সমীকরণ থেকে প্রশ্নের মধ্যে একটি করতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রে দ্বিঘাত সমীকরণ আকারে লেখার জন্য বা দু’টির মধ্যে একটি সমাধান লিখতে পারলেও আংশিক নম্বর মিলবে।
৭) একটি দ্বিঘাত করণী ও একটি ভেদ থেকে মোট দু’টির মধ্যে একটি ৩ নম্বরের অঙ্ক করতে হয়। প্রদত্ত ভেদ অশূন্য ভেদ ধ্রুবক আকারে লিখতে পারলে নম্বর পাওয়া যায়। আবার অশূন্য ভেদ ধ্রুবক না উল্লেখ করলে নম্বর বাদ যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আবার দু’টি পৃথক ভেদ প্রদত্ত হলে অবশ্যই দু’টি পৃথক ভেদ ধ্রুবক নিতে হবে।
৮) অনুপাত ও সমানুপাত থেকে অন্তত একটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। অশূন্য সমানুপাত ধ্রুবক লিখে আসতে না পারলে নম্বর বাদ যেতে পারে।
৯) পাঁচ নম্বরের উপপাদ্যের প্রশ্নের ক্ষেত্রে উপপাদ্যের প্রয়োগ, উচ্চতা ও দূরত্বের অঙ্কে ভুল ছবি বা ছবিহীন উত্তরের জন্য (উত্তর সঠিক হলেও) নম্বর দেওয়া হয় না। তাই সঠিক ছবি এঁকে আসতেই হবে।
১০) উপপাদ্যের প্রয়োগের অঙ্কের ক্ষেত্রে প্রদত্ত নাম দিয়েই ছবি আঁকতে হবে এবং তা প্রমাণও করতে হবে। কিছু প্রশ্নের ক্ষেত্রে উপপাদ্য ও উপপাদ্যের প্রয়োগ প্রমাণের সময়ে ত্রিভুজের সর্বসমতা দেখানোর সময়ে - সরের পরিবর্তে কোণ-বাহু-বাহু (ASS) ভুল সূত্রের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
১১) সম্পাদ্যের মধ্যে একটির অঙ্কন চিহ্ন-সহ আঁকতে হয়। লম্বভ্রমের কারণে দৈর্ঘ্য ছোট বড় না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জ্যামিতিক পদ্ধতিতে ৩৫-র বর্গমূল নির্ণয় অঙ্কে ৫.৯ (প্রায়) লিখতে হবে। শুধু ৫.৯ সেমি লিখলে নম্বর দেওয়া হবে না।
১২) আদর্শ কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের সঠিক মান বসাতে পারলেই আংশিক নম্বর হিসেবে এক নম্বর পাওয়া যাবে।
১৩) উচ্চতা ও দূরত্বের অন্তত একটি অঙ্ক করতে হয়। এখানে সঠিক ছবি আঁকতে হবে এবং উন্নতি কোণ ও অবণতি কোণ সঠিক ভাবে দেখাতে হবে। তা না হলে নম্বর মিলবে না।
১৪) পরিমিতির প্রশ্নের উত্তরে সঠিক একক লিখতেই হবে।
১৫) রাশিবিজ্ঞানের অঙ্কের ক্ষেত্রে গড়, মধ্যমা, ওজাইভ ও সংখ্যাগুরু মানের সঠিক সূত্র লেখার জন্য নম্বর দেওয়া হয়। তবে, পরিসংখ্যা বিভাজনের শ্রেণির যদি একক থাকে তবে উত্তরেও একক লিখতে হবে।
(লেখক যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের অঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy