Advertisement
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Regional Politics

প্রতিনিধির কাজ

দুর্ভাগ্যের বিষয়। অতীতে বাঙালি সংসদীয় রাজনীতিকদের অসাধারণ কৃতিত্বের নস্টালজিয়া দিয়ে সমাধান হবে না। সময়ের সঙ্গে প্রতিনিধিত্বের ধরনে পরিবর্তন এসেছে, গণতন্ত্রের প্রসার ও ব্যাপ্তিই সেই পরিবর্তন সূচিত করেছে।

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১৩
Share: Save:

ভারতের মতো দেশে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ও আঞ্চলিক বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে গত্যন্তর নেই। শেষ জাতীয় নির্বাচনের পর এই সত্য আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, আঞ্চলিক দলগুলির হাতেই ধরা আছে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকারের মূল সুতোটি। তবে প্রশ্ন ওঠে, সংসদীয় রাজনীতিতে অর্থপূর্ণ ভাবে যোগদান করার জন্য কিংবা তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অঞ্চল থেকে আসা সংসদীয় প্রতিনিধিদের কী ভাবে নিজেদের চালনা করতে হবে। বিষয়টি শুনতে সহজ মনে হলেও তা নয়, কেননা সচরাচর দেখা যায় এই আঞ্চলিক রাজনীতির নেতারা তাঁদের নিজস্ব বাস্তবে এমন গ্রস্ত থাকেন যে তার বাইরে দেশের অন্যান্য সমস্যা নিয়ে ততখানি সচেতন বা সরব হন না। এতে শেষ অবধি জাতীয় রাজনীতির অভিমুখ অজানতে এমন ভাবে বদলায় যে আঞ্চলিক নেতারা হয়তো পরে তার দাম দিতে বাধ্য হন। অর্থাৎ এ হল প্রতিনিধিত্বের স্বরূপটির সমস্যা, ঠিক জায়গায় ঠিক ভাবে নিজেকে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করে জনস্বার্থের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার দক্ষতার প্রয়োজনীয়তার কথা।

এক সদ্য-প্রাক্তন বাঙালি সাংসদের আক্ষেপ এই জরুরি কথাটিকে আবার মনে করিয়ে দিল। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করার পর জহর সরকার মন্তব্য করেছেন, বাংলার শাসক দলের নেতারা যখন জাতীয় মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করেন, যথেষ্ট জাতীয় স্তরের সচেতনতা তাঁদের মধ্যে দেখা যায় না। তিনিই প্রথম নন, এই দুর্বলতাটির দিকে আঙুল তোলার জন্য অনেকেই আছেন। এবং কেবল শাসক দল নয়, অন্যান্য দলের প্রতিনিধিরাও তথৈবচ। রাজধানীতে কান পাতলেই শোনা যায়, কী ভাবে অন্য কিছু রাজ্যের প্রতিনিধিদের মতো পশ্চিমবঙ্গের সাংসদরাও জাতীয় স্তরের বিতর্কে হয় অংশগ্রহণ করেন না, নয়তো যথেষ্ট প্রশিক্ষিত ভাবে বিষয় উপস্থাপনা করতে পারেন না। এখানে রাজ্যের প্রধান নেতৃত্বের একটি বিশেষ দায়িত্ব থেকে যায়। কাকে সংসদের দুই কক্ষে পাঠানো হচ্ছে, তাঁরা কত দূর তাতে অংশ নিতে পারবেন, বিবেচনাগুলি কিন্তু দলীয় বিশ্বস্ততার থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। বিষয়ভিত্তিক ভাবেও ভাবা যেতে পারে, কে অর্থনীতি, কে সমাজ-রাজনীতি, কে বিদেশসমাচার বা কূটনীতি নিয়ে চর্চা করেন, ভাবার অবকাশ থাকা উচিত। আঞ্চলিক নেতাদের অনেকেই আঞ্চলিক ভাষার বাইরে অন্য ভাষায় সড়গড় নন— পশ্চিমবঙ্গের থেকে অন্যান্য রাজ্যে এই সমস্যা আরও হয়তো বেশি। কিন্তু ভাষাই একমাত্র প্রতিবন্ধকতা নয়, সঙ্কট আরও গভীর। বিষয়ের উপর অধিকারে, চর্চায়, ভাবনাচিন্তার আত্মপ্রত্যয় থাকলে ভাষার বাধা অনেকখানি দূর করা সম্ভব।

দুর্ভাগ্যের বিষয়। অতীতে বাঙালি সংসদীয় রাজনীতিকদের অসাধারণ কৃতিত্বের নস্টালজিয়া দিয়ে সমাধান হবে না। সময়ের সঙ্গে প্রতিনিধিত্বের ধরনে পরিবর্তন এসেছে, গণতন্ত্রের প্রসার ও ব্যাপ্তিই সেই পরিবর্তন সূচিত করেছে। তার সঙ্গে এসেছে জনপ্রিয়দের রাজনীতিতে এনে জনমনোরঞ্জনের চেষ্টা। তাতে ছোট (ভোট)রাজনীতির জয় হয়েছে, বড় রাজনীতির কাজটি অংশত অবহেলিত হতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনীতিকে সফল করতে হলে কেবল কেন্দ্রকেই রাজ্যের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে না, রাজ্যকেও কেন্দ্রের কাজে যথেষ্ট পরিমাণে অংশ নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Regional Parties India democratic system
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE