Advertisement
E-Paper

কতটা পথ পেরোলে

দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির ৭৫তম বর্ষ উদ্‌যাপন কালে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত জি২০ বিদেশমন্ত্রীদের সম্মেলনের মাঝে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে পার্শ্ববৈঠকে দেখা গেল ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীকে।

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫ ০৪:৫৩
Share
Save

বরফ কি গলছে, না যেটুকু গলছে, অচিরেই তা আবার জমে যাবে? ভারত-চিন সম্পর্ক দেখেশুনে ধন্দ স্বাভাবিক। দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির ৭৫তম বর্ষ উদ্‌যাপন কালে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত জি২০ বিদেশমন্ত্রীদের সম্মেলনের মাঝে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে পার্শ্ববৈঠকে দেখা গেল ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীকে। বিবৃতিতে সীমান্ত এলাকায় শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা-সহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিবিধ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতির কথা বলা হল। গত বছর নভেম্বরে পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছনোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে দুই বিদেশমন্ত্রীর দ্বিতীয় বারের এই সাক্ষাৎ ভারত এবং চিনের জটিল কূটনৈতিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, সন্দেহ নেই।

কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপাতত গুরুত্ব পাচ্ছে তিনটি বিষয়। প্রথমত, অর্থনৈতিক ভাবে দুই দেশেরই একে অপরকে প্রয়োজন। বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যের যা অবস্থা, তাতে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি আনতে রীতিমতো কসরত করতে হচ্ছে দুই রাষ্ট্রকে। এমতাবস্থায় কয়েকটি ক্ষেত্রে, বিশেষত ফার্মাসিউটিক্যালস, ইলেকট্রনিক্স এবং পরিকাঠামোয় ব্যবসা বাড়াতে চিনা পণ্যের প্রয়োজন ভারতের। অন্য দিকে, চিনকেও ভাবতে হচ্ছে তাদের পণ্যের বিরুদ্ধে পশ্চিমি রক্ষণবাদ বাড়ায় নিজের দেশের বাণিজ্য সংস্থাগুলিকে বহুমুখী করার কথা। সে ক্ষেত্রে ভারতের বৃহৎ বাজার তাদের কাছে জরুরি। এর মাঝে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া শুল্ক নীতি ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আরও দৃঢ় করবে বলে আশা। দ্বিতীয়ত, সামরিক স্তরে ২০২০-র গলওয়ান সংঘর্ষ এবং পরবর্তী কালে লাদাখে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অচলাবস্থার জেরে দু’তরফেই লোকবল, সামরিক সরঞ্জাম এবং অর্থের উপরে যে প্রভাব পড়েছে, তার পুনরাবৃত্তি আপাতত চাইবে না কোনও তরফই। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক স্তরে দিল্লি ও বেজিং-এর চিন্তা বাড়িয়েছে ওয়াশিংটন। আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে অভিবাসন, বাণিজ্য-সহ আমেরিকার মাটিতে ভারতের তরফে হত্যার প্রচেষ্টার মতো বিবিধ কূটনৈতিক বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠছে মাঝেমধ্যেই। অন্য দিকে, চিনের ক্ষেত্রে আমেরিকার বাণিজ্য এবং প্রযুক্তির বিস্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকতে চলেছে ট্রাম্পের আমলেও। শুধু তা-ই নয়, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকার অবস্থান পরিবর্তনের পরে, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে চিন বিষয়ে ওয়াশিংটনের নীতিতে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে চলেছে কি না, প্রশ্ন থাকছেই।

তবে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অনাস্থা এখনও বদ্ধমূল। এমনিতেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তার ক্রমবর্ধমান প্রভাবে উদ্বিগ্ন দিল্লি। এর মাঝে ভারতের জমি নিয়ে উত্তর-পশ্চিম চিনে দু’টি প্রদেশ গঠন-সহ ব্রহ্মপুত্রের উচ্চ অববাহিকায় বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা তিক্ততা বাড়াচ্ছে। অন্য দিকে, এ-যাবৎ কোয়াড গোষ্ঠীর সঙ্গে জোটের পাশাপাশি আমেরিকা, ইউরোপ, পশ্চিম ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশের সঙ্গে যে ভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ভারত, তাতেও চিনের অস্বস্তি বেড়েছে। ইতিহাস মনে রাখলে পড়শি রাষ্ট্রটিকে বিশ্বাস করা সহজ নয়, তবে সুসম্পর্ক রাখার প্রচেষ্টা জারি রাখাও অত্যন্ত জরুরি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

S jaishankar Wang Yi

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}