পাঁচ বছরের একরত্তি শিশুটিকে ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি ১৭ বছরের ছেলেটি। শিশুটিকে আঁচড়ে, কামড়ে, থেঁতলে এমন দশা করেছে যে, চিকিৎসকেরা পর্যন্ত শিউরে উঠেছেন। গোপনাঙ্গে ২৮টি সেলাই, কোলোস্টমি, মাথা এবং সারা শরীরে ব্যান্ডেজ জড়ানো মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীর পাঁচ বছরের শিশুটি আপাতত গ্বালিয়রের হাসপাতালের আইসিইউয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
গ্বালিয়রের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জীব মুলে জানিয়েছেন, পাঁচ বছরের শিশুটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বেরোনোর পরে বেশ কিছু ক্ষণ তার খোঁজ মেলেনি। কয়েক ঘণ্টা পরে এলাকারই একটি বাড়ির বারান্দায় রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত এবং অচেতন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। প্রথমে স্থানীয় একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার অবস্থা দেখে ওই রাতেই শিশুটিকে আনা হয় গ্বালিয়রের কমলা রাজা হাসপাতালে। সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ডিন আর কে এস ঢাকর শিশুটির অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে নিজেই কেঁদে ফেলেছেন। তিনি জানান, যখন শিশুটিকে আনা হয়, তখন তার গোপনাঙ্গ, পায়ুদ্বার ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতবিক্ষত ছিল। দুই পা চিরে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ধর্ষক। তার গোপনাঙ্গে ভারী কিছু ঢোকানোর চেষ্টাও হয়েছিল বলে অনুমান। পাশাপাশি বারবার দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়ায় চোয়াল ভেঙে গিয়েছিল। এ ছাড়াও সারা শরীরে অজস্র আঁচড় ও কামড়ের দাগ ছিল, যা থেকে রক্তপাত হচ্ছিল।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল শিশুটির শরীরে ২৮টি সেলাই করে তার রক্তপাত বন্ধ করে। প্রবীণ ওই চিকিৎসক জানান, শিশুটিকে আনতে আর কিছু দেরি হলে তাকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ত। তিনি বলেন, ‘‘ভগবানের অনেক কৃপা যে, আমরা ওর চিকিৎসা করার মতো সময় পেয়েছি। তবে এখনও শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক।’’ এরই মধ্যে চিকিৎসকদের উদ্বেগ বেড়েছে, মাঝে সাময়িক জ্ঞান ফিরলেও শিশুটি কোনও কথা না বলায়। সেটা আতঙ্কে, না কি মাথায় বারবার আঘাতে কথা বলার ক্ষমতা নষ্ট হয়েছে, সেই ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নন চিকিৎসকেরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল সারাক্ষণ তার অবস্থার উপরে কড়া নজর রাখছে।
শিশুটিকে উদ্ধারের পরেই স্থানীয়দের প্রবল বিক্ষোভের মুখে তদন্তে নেমে ১৭ বছরের এক নাবালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জনতার ক্ষোভের মুখে তাকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে শিবপুরীর পুলিশ। একটি অংশের দাবি, সে মত্ত অবস্থায় ছিল। নাবালক হলেও তার নৃশংসতায় শিউরে উঠছেন পুলিশকর্তারা। ঘটনার ভয়াবহতার সঙ্গে দিল্লির নির্ভয়া এবং জম্মুর কাঠুয়া গণধর্ষণের মিল খুঁজে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। তবে সেই দু’টি ক্ষেত্রেই অপরাধী ছিল একাধিক ব্যক্তি, এ ক্ষেত্রে এক জন। সে কারণেই অত্যাচারের ভয়াবহতার নিরিখে এই ঘটনাটি পুলিশের কাছে অন্য রকম গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্তা।
দলমত নির্বিশেষে অপরাধীর চরম শাস্তি চেয়ে একাধিক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে শিবপুরী, গ্বালিয়র, ভোপাল-সহ নানা জায়গায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া শিশুটির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গড়ে দ্রুত অপরাধীকে সাজা দেওয়ার আবেদন জানিয়ে জেলাপ্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব।
নারী নির্যাতন এবং যৌন অত্যাচারের ঘটনায় বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশ গত কয়েক বছর ধরেই গোবলয়ের একাধিক রাজ্যকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বছরখানেক আগে গণধর্ষিতা এক কিশোরী প্রায় নগ্ন অবস্থায় উজ্জয়িনীর দরজায় দরজায় ঘুরলেও কেউ তাকে সাহায্য করেনি। সমাজমাধ্যমবাহিত হয়ে সেই ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়ার পরে পদক্ষেপ করেছিল রাজ্য প্রশাসন। সংবাদ সংস্থা
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)