Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Pathan Movie Controversy

নবনির্মাণ

বলিউডকে ভারতের অন্যতম, এমনকি বৃহত্তম সফট পাওয়ার বললে অত্যুক্তি হয় না। মনমোহন সিংহ থেকে নরেন্দ্র মোদী, এই বিষয়ে সকলেই একমত।

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:১৩
Share: Save:

মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র বলেই রেখেছেন, পঠান ছবির গানের দৃশ্যায়ন না বদলালে তাঁর রাজ্যে ছবির মুক্তি অনিশ্চিত। এ বার গুজরাতের বরোদায় ছবির পোস্টার ছেঁড়া শুরু হয়ে গেল। অনুমান করা কঠিন নয়, আগামী এক মাসে আরও নানা জায়গায় নানা রকম আপ্যায়ন ছবিটির জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। নতুন বছরে বলিউডের প্রথম বড় আকারের চলচ্চিত্রের মুক্তিকে ঘিরে ভক্তদের এবংবিধ উন্মাদনাই বর্ষশেষের উপহার হয়ে থাকছে। ২০২২ শেষ হতে চলেছে, নায়িকার জামার রং নিয়ে বাদানুবাদে মজে। শাহরুখ খান অনেক দিন ধরেই গেরুয়া শিবিরের প্রিয় চাঁদমারি। তবে অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খোলার কারণেই কেবল তাঁকে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে, এমন মনে করলে ভুল হবে। শাহরুখ-আমির খানরা নাহয় মুখ খুলেছিলেন, দীপিকা পাড়ুকোন নাহয় জেএনইউ গিয়েছিলেন, অনুরাগ কাশ্যপরিচা চড্ডা স্বরা ভাস্কর তাপসী পন্নু নাহয় লাগাতার সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা বিষয়ে সরব হয়ে থাকেন— কিন্তু এঁরা সবাই মুচলেকা লিখে মুখে কুলুপ দিলেই পার পেয়ে যাবেন বলে মনে হয় না। দু’চারটে অবাধ্য স্বরকে ধমকে চুপ করিয়ে দিয়েই কাজ শেষ হয় না। কখনও অবাধ্যতা, কখনও মাদক, কখনও গোমাংসভক্ষণ, কখনও ভিন ধর্মে বিয়ে, কখনও স্বজনপোষণের অভিযোগ— কোনও না কোনও তাস ঠিক বেরিয়ে আসে কট্টর হিন্দুত্ববাদের আস্তিন থেকে। ভক্তদের দৃষ্টি দূরপ্রসারী, লক্ষ্যও বৃহত্তর।তাঁরা বলিউডের ডিএনএ বদলাতে চান। সেটা করতে হলে বলিউডের বর্তমান খোলনলচে পাল্টে ফেলা দরকার। তাই, এক দিকে বিবেক অগ্নিহোত্রী, কঙ্গনা রানাউত, অক্ষয়কুমার, অনুপম খের প্রমুখকে নিয়ে বিশ্বস্ত সেনাদল গড়ে তোলা হচ্ছে, তেমনই বলিউডের বনেদি কাঠামোয় আঘাত হানা চলছে বারংবার।

বলিউডকে ভারতের অন্যতম, এমনকি বৃহত্তম সফট পাওয়ার বললে অত্যুক্তি হয় না। মনমোহন সিংহ থেকে নরেন্দ্র মোদী, এই বিষয়ে সকলেই একমত। সে ক্ষেত্রে বলিউডের সঙ্গে লাগাতার সংঘাত জারি রাখাটা গেরুয়া শিবিরের পক্ষে সত্যিই বুদ্ধি-বিবেচনার কাজ হচ্ছে কি না, এই প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সে-প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে এই সংঘাতের ক্রমান্বয়ী ধাপগুলো মিলিয়ে দেখা ভাল। তাতে বোঝা যায়, বেশ সুপরিকল্পিত ভাবেই এগোচ্ছে হিন্দুত্ববাদ। সংস্কারী সেন্সর বোর্ড এখন আর সে ভাবে দরকার হচ্ছে না, বয়কট বাহিনী অধিকতর ফলপ্রসূ। প্রাতিষ্ঠানিক হস্তক্ষেপের চেয়ে জনমতের নির্ঘোষ তৈরি করতে পারলে তার বৈধতা অনেক বেশি। পাকিস্তানি শিল্পীদের উপরে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এখন আর কোনও কথা হয় না, আক্রমণের অভিমুখ ঘুরে গিয়েছে দেশীয় শিল্পীদের দিকেই। যে শাহরুখ খানকে আন্তর্জাতিক মহলে বলিউডের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মনে করা হত, সেই শাহরুখকে ধারাবাহিক ভাবে উত্ত্যক্ত করে চলার উদ্যোগও কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং সুচিন্তিত পদক্ষেপ বলেই মনে হয়। দীপিকার জামার রংকে কেন্দ্র করে লাভ জেহাদের ধুয়ো তোলাও সম্ভবত উর্বর মস্তিষ্কের পরিশ্রমী প্রয়াস।

এ কথা মনে করলে ভুল হবে যে, হিন্দুত্ববাদী গৈরিক ভারত সফট পাওয়ারের গুরুত্ব বোঝে না, বা সফট পাওয়ার হিসেবে বলিউডের ওজন জানে না। তাঁরা শুধু চান, বলদর্পী সংখ্যাগুরুবাদী ভারতের প্রতিচ্ছবিটি বলিউডের পর্দায় ঠিকঠাক প্রতিভাত হোক। খানদানি বলিউডের হাত ধরে, অমর-আকবর-অ্যান্টনির গল্প বলার ঐতিহ্যবাহী বলিউডকে সঙ্গী করে সেই কাজটি হওয়ার নয়। খান সাম্রাজ্যে ভর করে তো নয়ই। ভক্তবাহিনী বলিউডকে আঘাত করছে নিজেদের ছাঁচে নতুন বলিউড গড়ে নেওয়ার তাগিদে। এই ‘আত্মা’ঘাতী প্রকল্প কত দূর সফল, নতুন বছরে তার একটা আভাস মিলতে পারে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy