Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
State Goverment

দ্বৈরথ

রাজ্যপাল কেন্দ্র তথা শাসক দলের হয়ে, তাদেরই স্বার্থে কাজ করছেন, সাংবিধানিক সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে রাজ্যকে ঝামেলায় ফেলছেন, এ অভিযোগ নতুন নয়।

রাজ্য-রাজ্যপাল দ্বৈরথ।

রাজ্য-রাজ্যপাল দ্বৈরথ। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২২ ০৪:৫৬
Share: Save:

নানা রাজ্যে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরোধ ভারতে প্রায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের অম্লমধুর প্রশাসনিক সম্পর্কে মাধুর্য কম, অম্ল এমনকি তিক্ত ভাবই প্রকাশ পেত বেশি। এ বার খবরে কেরল, পিনারাই বিজয়ন সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের সংঘাত। রাজ্যপাল সম্প্রতি কেরলের ন’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নির্দেশ পাঠিয়ে, বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে পদত্যাগ করতে বললেন, তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নাকি অনিয়ম ছিল। উপাচার্যরা কেরল হাই কোর্টে গেলেন, ইতিমধ্যে রাজ্যপালের শো-কজ়ের নোটিস, কেন তাঁদের পদ থেকে সরানো হবে না তার কারণ দর্শাতে হবে। বিজয়ন সরকারের অভিযোগ, রাজ্যপাল নিজেই উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি করতে নেমে পড়েছেন, এ আসলে বিজেপি-আরএসএস’এর তাঁবেদারি করে রাজ্যকে চাপে ফেলার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। আবার এই সমস্যা না মিটতেই ফের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে বলেছেন রাজ্যপাল, মন্ত্রীর উপর থেকে সাংবিধানিক ‘প্লেজার অব দ্য গভর্নর’ তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন, এই যুক্তিতে।

রাজ্যপাল কেন্দ্র তথা শাসক দলের হয়ে, তাদেরই স্বার্থে কাজ করছেন, সাংবিধানিক সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে রাজ্যকে ঝামেলায় ফেলছেন, এ অভিযোগ নতুন নয়। কংগ্রেস তথা ইউপিএ আমলেও অকংগ্রেসি রাজ্য সরকারের এই ক্ষুব্ধ স্বর ছিল। কিন্তু বিজেপি আমলে অ-বিজেপি রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালদের দলদাসত্ব যেমন দ্বিধাহীন ও দৃষ্টিকটু হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই পরিস্থিতিটি চমকপ্রদ। ভারতের সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপালের জন্য স্থিরীকৃত ভূমিকাটি স্পষ্ট, তিনি হবেন সংবিধান ও আইনের ধারক ও রক্ষক; তাঁর ‘কাজ’ নেই, ‘কর্তব্য’ আছে, সংবিধান রাজ্যপালের ক্ষমতাধর রূপ নয়, কর্তব্যপরায়ণ রূপটি দেখতে চেয়েছে। আশির দশকে সরকারিয়া কমিশন রাজ্যপাল হিসেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বাইরের কাউকে, সাম্প্রতিক কালে সক্রিয় রাজনীতির বাইরে থাকা কাউকে নিয়োগের কথা বলেছিল, যাতে পক্ষপাতহীনতা অটুট থাকে। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চ্যান্সেলর হিসেবে রাজ্যপালের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা ‘কাঙ্ক্ষিত’। এই আলোচনার পরিসরটিই এখন ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে, রাজ্যপালের তীব্র মন্তব্য সরাসরি রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছে, বা রাজ্য সরকারকে চাপে রাখতে রাজ্যপাল হাতিয়ার করছেন সংবিধানের ১৬৪ অনুচ্ছেদকে, যেমন দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে। রাজ্যপাল প্রকাশ্যে সরব হলে রাজ্য সরকারের মন্ত্রী থেকে স্থানীয় নেতারাও পাল্টা ব্যঙ্গ ও বিষোদ্গার করছেন, তা প্রভাব ফেলছে জনমনেও। এতে যেমন রাজ্যপাল পদের মর্যাদা ও ভাবমূর্তির হানি, তেমনই ক্ষতি রাজ্যের প্রশাসনিক ভারসাম্যেরও। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভায় সম্প্রতি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চ্যান্সেলর হয়ে ওঠার বিল পাশ, বা কেরলে উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে সংঘাত আসলে এই প্রশাসনিক ভারসাম্যেরই দোলাচল। সংবিধানটি ফিরে পড়া দরকার, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর স্বার্থেই।

অন্য বিষয়গুলি:

State Goverment Governor conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy