ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি চুয়াত্তর জন সরকারি আমলা এবং উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি বিষয়ে একটি খোলা চিঠি লিখিয়াছেন, তাহাতে স্বাক্ষর করিয়াছেন দুই শতাধিক নাগরিক। চিঠিটিকে হয়তো এত গুরুত্ব দিতে হইত না, যদি না তাহার পাশাপাশিই মাননীয় নরেন্দ্র মোদী তাঁহার আসন হইতে ঠিক বিপরীত কথাটি জোর গলায় বলিতেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী দুই দিন আগে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে একটি বড় মাপের বাহবা দিয়াছেন তাঁহার প্রদেশের সুপরিচালনার জন্য— প্রধানত কোভিড-নিয়ন্ত্রণ, এবং গৌণত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি— সেই বাহবার লক্ষ্য। বাস্তবিক, গত কয়েক মাস ধরিয়া ক্রমাগত উত্তরপ্রদেশের যে সকল সংবাদ সমগ্র দেশের সচেতন নাগরিককে বিস্মিত, এমনকি পীড়িত করিয়াছে— সেই সকল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর আদিত্যনাথকে এই প্রশংসার পিঠ-চাপড়ানি।
প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় অবগত, আদিত্যনাথের রাজ্যে একের পর এক সাংবাদিক কেবলমাত্র সংবাদ পরিবেশনের দায়ে হেনস্থার একশেষ হইতেছেন। লাভ জেহাদ-এ অভিযুক্ত হইয়া প্রত্যহ মুসলিম যুবকদের কারাগারে টানিয়া আনা হইতেছে। জেল ভরিয়া গিয়াছে বন্দিতে বন্দিতে, বিশেষত নারী বন্দিতে। বস্তুত, নারীবিদ্বেষ একটি ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে সে রাজ্যে। পঞ্চায়েত ভোটের সময় এক জন মহিলা বিরোধী দলের প্রার্থী হইতে চাহিলে তাঁহার সমস্ত পরিবারের বিরুদ্ধে নির্যাতন শুরু হয়। বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলিলে অভিযোগকারিণীর পরিবারের মানুষরা নিহত হন, বন্দি হন। অধিকাংশ বন্দির জামিনের প্রশ্ন উঠে না, মামলাও হয় না। কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে, অন্য সব প্রদেশের সংবাদমাধ্যমে সপ্তাহের পর সপ্তাহ জুড়িয়া হেডলাইন আদায় করিয়াছে উত্তরপ্রদেশ— তাহার নদীবক্ষে শবদেহের ভাসমান ভিড়ের জন্য। গোটা বিশ্ব এই অবর্ণনীয় পরিস্থিতি আলোচনা করিয়াছে, নদী দিয়া অসংখ্য শব ভাসিবার ভীষণতায় শিহরিত হইয়া কেহ আপত্তি করিলে তাঁহাকে অ্যান্টি-ন্যাশনাল বলিয়া শাসানো হইয়াছে। বর্তমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে বর্তমান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর মাথার উপর আশ্বাসছত্র ধরিবেন, তাহাতে নূতন করিয়া বিস্ময়ের কিছু নাই। বিস্ময় বরং— কিছু নাছোড় আশাবাদী এখনও প্রতিকার আশা করেন, কিছু প্রতিবাদী তবুও হাল ছাড়েন না; সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছাইয়াও খোলা চিঠি লিখিয়া আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ওই চিঠির বক্তব্য: প্রশাসনের সকল বিভাগ, শাসনবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হইতে শুরু করিয়া স্থানীয় পুলিশ পর্যন্ত— পুরা ব্যবস্থা ভাঙিয়া পড়িয়াছে ওই রাজ্যে। বিচারবিভাগের উপরেও ভরসা রাখিবার জায়গা নাই, ‘এক্সট্রা-জুডিশিয়াল’ হত্যাকাণ্ডসমূহ তাহার প্রমাণ। এখন প্রশ্ন হইল, যে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন-পরবর্তী হিংসার তীব্র নিন্দা করিয়া কড়া পদক্ষেপ করিতে ব্যস্ত হন, উত্তরপ্রদেশকে তাঁহারা কেন ছাড় দেন, এমনকি বাহবাও দেন? যে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন পশ্চিমবঙ্গে তদন্ত— সঙ্গত তদন্ত— করিয়া অপরাধীদের ধরিতে উদ্যত, তাহাদের তরফে উত্তরপ্রদেশের পঞ্চায়েত নির্বাচনী হিংসা লইয়া কেন এই অন্তহীন ঔদাসীন্য? প্রশ্নের উত্তরটি কি তবে সহজ সাধারণ বুদ্ধিতে যাহা ধরা পড়ে, তাহাই? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিজেপি-শাসিত রাজ্যের কোনও দোষ দেখিবেন না, আর বিরোধী-শাসিত রাজ্যে তদন্তের পর তদন্ত চালু করিবেন? সে ক্ষেত্রে বলিলে অত্যুক্তি হইবে না যে, যোগী আদিত্যনাথ কোনও নীতি, আদর্শ, বিধি, আইন কিছুর তোয়াক্কা না করিয়া রাজ্য স্তরে দলতন্ত্রের যে অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছেন, সমগ্র দেশ জুড়িয়া সেই একই দলতন্ত্র ও একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করিতেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাকি সব তুচ্ছ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy