Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Editorial News

ওষুধ একটাই— মমতা

এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় বাড়ির কাছের আশুতোষ কলেজে যান মুখ্যমন্ত্রী। এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্রীও তিনি। ছাত্র রাজনীতির সময়ে আশুতোষ কলেজে সাত-আট বছর কেটেছিল মমতার।

ছাত্র ভর্তিতে অনিয়ম রুখতে আসরে মুখ্যমন্ত্রী। ফাইল চিত্র।

ছাত্র ভর্তিতে অনিয়ম রুখতে আসরে মুখ্যমন্ত্রী। ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ০০:৩২
Share: Save:

মোক্ষম দাওয়াইটি ছাড়া আর কোনও কিছুতেই কাজ হয় না যেন আজকাল। অসুখ যে ধরনেরই হোক, যে প্রাবল্যেরই হোক, সবচেয়ে কড়া ওষুধটা না দিলে কিছুতেই যেন রোগ সারতে চায় না। কলেজে ভর্তি নিয়ে বিপুল অনিয়ম এবং তোলাবাজি চালানোর যে অভিযোগ উঠছিল, তার নিরসনে ময়দানে নামতে হল রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসনকে। দল বা প্রশাসন, কারও পক্ষেই সম্ভব হল না ছাত্র সংগঠনের অবাধ্য অংশকে নিয়ন্ত্রণে আনা।

উচ্চমাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণ হওয়া পড়ুয়াদের কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে এ বছর যে পরিমাণ অনিয়ম এবং জুলুমবাজির অভিযোগ উঠল, তেমনটা স্মরণাতীত কালে হয়েছে বলে মনে হয় না। কলেজে কলেজে দাদাগিরি, পড়ুয়াদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করা, মার্কশিট যতই উজ্জ্বল হোক, টাকা-পয়সার দাবি না মিটলে ভর্তি হতে না দেওয়ার শাসানি দেওয়া— অভিযোগ এই রকমই। এ রকম অভিযোগ কি আগে কখনও ওঠেনি? অবশ্যই উঠেছে। অনিয়ম ঠেকাতেই অনলাইন ভর্তি চালু হয়েছে। কিন্তু কলেজে কলেজে দাপিয়ে বেড়ানো ‘দাদা’রা সে সব বাধা ডিঙিয়ে টাকা আদায়ের এবং অনিয়ম বহাল রাখার নতুন ফিকির খুঁজে নিয়েছে। ‘ভর্তি ব্যবসা’ এতই লোভনীয় হয়ে উঠেছে যে, বাড়তে বাড়তে এ বছরটা বেলাগাম হয়ে পড়েছে। সদ্য উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়াটিকে কলেজে ভর্তি করতে গিয়ে ঘরে ঘরে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। এই বেলাগাম জুলুমের সর্বত্রই অভিযোগের আঙুল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একাংশের দিকে। রাশ টানতে তাই মাঠে নামলেন খোদ দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীই। সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয়তা বাড়তে দেখা গেল শিক্ষমন্ত্রীরও।

মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যক্ষ ভাবে হস্তক্ষেপ করার আগে পর্যন্ত কি জুলুম নিয়ন্ত্রণের কোনও চেষ্টা হয়নি? অবশ্যই হয়েছে। দলের নামে বা দলের কোনও গণসংগঠনের নামে তোলাবাজি চালানো যাবে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বার্তা দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজের দলের ছাত্র সংগঠনকে সতর্ক করেছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী জয়া দত্তও সক্রিয় হয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বার্তা পেয়ে। টাকা তোলার চেষ্টা করায় নিজের সংগঠনের কর্মীকে জয়া পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু কোনও কিছুতেই লাভ হয়নি। কলেজে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের থেকে টাকা তোলাকে ছাত্র নেতাদের একাংশ যেন অধিকার ভেবে নিয়েছেন।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু থেমে ছিলেন না। কথায় বা বার্তায় কাজ হচ্ছে না দেখে পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কলকাতা পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়াকে সঙ্গী করে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমেছিল। ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর প্রকাশ করে অভিযোগ জানাতে বলেছিল। কিন্তু ত্রস্ত পড়ুয়াকুল তাতেও আশ্বস্ত হতে পারে নি, বেপরোয়া তোলাবাজরাও বিন্দুমাত্র ঘাবড়ায়নি। ভর্তির মরসুমকে তোলাবাজির উত্সবে পরিণত করার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পারছিলেন, তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ জরুরি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তো বটেই, দলনেত্রী হিসেবেও জরুরি। আচমকা আশুতোষ কলেজে হানা দেওয়া সেই কারণেই।

আরও পড়ুন: ভর্তি-প্রক্রিয়া দেখতে আচমকা আশুতোষ কলেজে মুখ্যমন্ত্রী

আরও পড়ুন: ভর্তিতে টাকার খেলা মানতেই নারাজ পার্থ

শুধু ছাত্র সংগঠনকে নয়, শৃঙ্খলা এবং স্বচ্ছ রাজনীতির বার্তা কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সব অংশকেই দিয়েছেন, একাধিক বার দিয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সে বার্তা অনুসৃত হচ্ছে না। দলনেত্রীর বার্তা কি দলের সব স্তরে পৌঁছচ্ছে না? নিশ্চয়ই পৌঁছচ্ছে। যোগাযোগ বিপ্লবের এই যুগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য তাঁর দলের সব স্তরের কর্মীর কাছে পৌঁছচ্ছে না, এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন। তাই ধরে নিতে হচ্ছে যে, বার্তা পৌঁছলেও তা মেনে চলতে অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, কারণ তাতে দুর্নীতির রমরমা বন্ধ হয়ে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, প্রয়োজনে দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ হবে। অনিয়ম রুখতে তিনি নিজে সরাসরি আসরে নেমেছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অরূপ বিশ্বাসকেও সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছেন। বার্তা যদি অনুসৃত না হয়, অপ্রিয় সিদ্ধান্তগুলো নিতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুণ্ঠিত হবেন না আশা করা যায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE