Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: শিশুপাঠ: ছ-য়ে ছুটি

অনীক দত্ত-র ‘মানুষকে ভোলাতেই...’ এবং সীমন্তিনী মুখোপাধ্যায়ের ‘অঢেল ছুটির নিমন্ত্রণ...’ (১৬-১১) নিবন্ধ দু’টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। শনি রবি বাদ দিয়ে এ বছর রাজ্যে অনুমোদিত সরকারি ছুটির সংখ্যা ৩৪।

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

অনীক দত্ত-র ‘মানুষকে ভোলাতেই...’ এবং সীমন্তিনী মুখোপাধ্যায়ের ‘অঢেল ছুটির নিমন্ত্রণ...’ (১৬-১১) নিবন্ধ দু’টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। শনি রবি বাদ দিয়ে এ বছর রাজ্যে অনুমোদিত সরকারি ছুটির সংখ্যা ৩৪। বছরের শুরুতে বিবেকানন্দ জয়ন্তী থেকে বড়দিন পর্যন্ত ২৪টি মূল ছুটি বাদ দিয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী দরাজহস্তে পয়লা বৈশাখ, শিবরাত্রি, দোল, লক্ষ্মী ও কালীপুজোর পর দিন, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, জন্মাষ্টমী দুর্গাপুজোয় অতিরিক্ত দিন এবং ছট পুজোয় ছুটি মঞ্জুর করে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন। ‘বন্‌ধ’ নামক নিষ্ফলা কর্মসংস্কৃতির তীব্র বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন উদার হস্তে ছুটি বিতরণ কৌতূহলোদ্দীপক বইকি! বস্তুত এ রাজ্যে শিশুদের ‘ছ’-এ ছুটি দিয়ে অক্ষর পরিচয়ের দিন সমাগত। সরকারি দফতর ছুটি থাকলে বিদ্যুৎ খরচ বাঁচে। ট্রেনে বাসে ভিড় কম থাকে। ইস্কুল বন্ধ থাকায় মিড ডে মিলের খরচ সাশ্রয় হয়। স্থায়ী কর্মসংস্থান না হলেও উৎসবকেন্দ্রিক ভালই অর্থনৈতিক লেনদেন হয়। এতগুলো ইতিবাচক দিক হাতছাড়া করতে চায় কে? শনি-শীতলা-মনসা-ইতু-বিশ্বকর্মা-কার্তিক-হনুমান-জগদ্ধাত্রী-বাসন্তী-অন্নপূর্ণা-লোকনাথ-জামাই ষষ্ঠী (পূর্ণদিবসের জন্য) ইত্যাদি এক ডজন পুজো/উৎসবে ছুটি ঘোষণার জন্য বিশেষ সুবিধাভোগী সরকারি কর্মচারীরা এ বার সরব হন।

রাজশেখর দাস

কলকাতা-১২২

বঙ্গে ছুটির রঙ্গ


সত্যিই, এখন বঙ্গে ছুটির রঙ্গ চলছে। সরকারি কর্মীদের ছুটি যেন ফুরোতেই চায় না। ছুটি ফুরোলেই তা আবারও পাওয়া যায়। যেমন, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী গত ১০-১০-১৮ তারিখের এক পুজো উদ্বোধনে গিয়ে বলেন, ‘‘এ বারের (২০১৮) সরকারি ক্যালেন্ডারে ৩৫ দিন সরকারি ছুটি ছিল। কিন্তু আগামী (২০১৯) সরকারি ক্যালেন্ডার তৈরি করতে গিয়ে দেখা যায় ২৭টি ছুটি। কারণ চারটি ছুটি রবিবার পড়ায় তা কমে যায়, আমি সরকারি কর্মীদের পক্ষে তাই ওই চারটি ছুটি দিয়ে দিলাম।’’ সরকারি (৫-১১-১৮) আদেশনামায় তা প্রকাশিত হতেও দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, পঞ্জিকা মতে অর্থাৎ দিন, তিথি-নক্ষত্র বিচারে পালা- পার্বণের কোনও ছুটি শনি, রবি বা অন্য কোনও সরকারি ছুটির দিন পড়ার কারণে, সেই ছুটি পরবর্তী কাজের দিনে স্থানান্তর করে দেওয়া বা কোনও ছুটিকে শনি বা রবিবারের সঙ্গে জুড়ে টানা ছুটিতে পরিণত করার উদাহরণ এই আমলে বহু। বিগত আমলে সরকারি কর্মীদের দোলে ছুটি থাকলেও হোলিতে কোনও ছুটি ছিল না। বর্তমান সরকারের বদান্যতায় হোলিও সরকারি ছুটির বিজ্ঞপ্তিতে স্থান পেয়েছে। এ বছর হোলি শনিবার (৩-৩-১৮) পড়ার কারণে তা দোলের দিন শুক্রবারে (২-৩-১৮) স্থানান্তর করে, দোলের ছুটিটি সম্পূর্ণ একটি কাজের দিন— বৃহস্পতিবার (১-৩-১৮) দেওয়া হয়েছে। ফলে কর্মীরা না চাইলেও সরকার কর্মীদের টানা ৪ দিন ছুটি উপভোগ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
লক্ষণীয়, ২০১৫ সালের কালীপুজো ছিল মঙ্গলবার (১০-১১-১৫)। পর দিন বুধবার বিসর্জনের ছুটি। বৃহস্পতিবার ছিল সম্পূর্ণ কাজের দিন। শুক্রবার ছিল ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার ছুটি। কিন্তু সরকার বৃহস্পতিবার একটি অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করে টানা মঙ্গলবার থেকে রবিবার পর্যন্ত মোট ৬ দিন ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী গত ২-১১-১৬ ঝাড়গ্রামে পুলিশের এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, ‘‘বিহার, উত্তরপ্রদেশ-সহ বহু হিন্দিভাষী এই রাজ্যে বাস করেন, তাঁরা বাংলাকে ভালবাসেন, তাই এ বার থেকে ছট পুজোয় সবার জন্য ছুটি।’’ শুধু তা-ই নয়, গত ২০১৬-র ছট পুজো রবিবার (৬-১১-১৬) থাকায়, সেই ছুটিও তার পর দিন দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭-র ছটেও কর্মীরা দু’দিন ছুটি পেয়েছিলেন, ২৬-১০-১৭ সেকশনাল হলিডে (বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশবাসীদের), পরবর্তী ২৭-১০-১৭ সকল কর্মচারীর জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এ বারের (২০১৮) ছট পুজোয় সরকারি ক্যালেন্ডারে ১৩-১১-১৮ ছুটি ছিল। কিন্তু ১২-১১-১৮ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো, ওই দিনই আরও একটি সেকশনাল হলিডে (১৪-১১-১৮) ছুটির আদেশনামা প্রকাশ পায়। বলা বাহুল্য, ওই আদেশনামায় সেকশনাল হিসাবে বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশবাসী কথাগুলি স্থান না পাওয়ার জন্য, আইনত ছট পুজোর নামে যে কোনও কর্মচারীর ক্ষেত্রে ১৪-১১-১৮ দিনটিতে ছুটি নেওয়ার কোনও বাধা ছিল না।
উল্লেখ্য, গত ২৩-৩-১৬ দোলে স্বাভাবিক ছুটি ছিল, পর দিন ২৪-৩-১৬ হোলি, অতিরিক্ত ছুটি। ২৫-৩-১৬ গুড ফ্রাইডের ছুটি, পরবর্তী দু’দিন শনি ও রবি। মোট ৫ দিন ছুটি রাজ্যকর্মীরা উপভোগ করেছেন। গত ২০১৭-র দুর্গাপুজোয় সরকারি কর্মীরা টানা ১৩ দিন ছুটি উপভোগ করার পর, কালীপুজোয়ও তাঁরা ৪ দিন (শনি, রবি-সহ) ছুটি পেয়েছেন।
সরকারি বিজ্ঞপ্তি ব্যতীত অতিরিক্ত ছুটির ঘোষণাপর্বটি শুরু হয়েছিল ইংরাজি নববর্ষ দিয়ে। এবং তা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি মহাকরণের অলিন্দে দাঁড়িয়ে আগাম করেছিলেন। কারণ হিসেবে তখন তিনি জানিয়েছিলেন যে, ওই দিন বাড়ি থেকে মহাকরণ আসার যাত্রাপথে সাধারণ মানুষদের ছুটি উপভোগ করাকে লক্ষ করেই তিনি আজ সিদ্ধান্ত নিলেন যে, ‘‘এ বার থেকে পয়লা জানুয়ারিও সরকারি কর্মীদের ছুটি থাকবে।’’ ফলে সে সময় থেকেই বিজ্ঞপ্তি ব্যতীত, হোলিতে ছুটি, শিবরাত্রিতে ছুটি, বিশ্বকর্মা পুজোয় (অর্ধ দিবস) ছুটি, প্রাক দুর্গা পুজোয় (ষষ্ঠী) ছুটি, লক্ষ্মী-কালী বিসর্জনে ছুটি, প্রতিপদে ছুটি, সরস্বতী পুজো ছুটির দিন পড়লে, আগে পরে ছুটি, জামাইষষ্ঠীতে (অর্ধ দিবস) ছুটি, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে, বুদ্ধ-পূর্ণিমায় ছুটি। পুলিশদের ভাল কাজের জন্য ইনাম ছুটি। এ ছাড়াও আছে ছুটির উপর ছুটি। যেমন, এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের প্রেক্ষিতে ২-৫-১৮, ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ভোটের দিন পরিবর্তন হলেও ২-৫-১৮’তে ছুটি বহাল থাকে। এর ফলে কর্মীরা একনাগাড়ে ৫ দিন ছুটি উপভোগ করেছেন। (২৮-৫, ২৯-৫ শনি-রবি, ৩০-৫ বুদ্ধপূর্ণিমা, পয়লা মে, পরবর্তী ২ মে)। শোনা যায়, বাম আমলে নাকি কথায় কথায় বন্‌ধের কারণে কর্মদিবস নষ্ট হত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিরোধীদের বন্‌ধ রুখতে উপস্থিত সরকারি কর্মীদের অতিরিক্ত ছুটি দেওয়া হচ্ছে।
বাম আমলে ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত ২০১১ সালের সাধারণ ছুটির বিজ্ঞপ্তি অনুসারে কর্মীদের মোট ছুটি ছিল ১৭ দিন। সঙ্গে ৪টি সেকশনাল হলিডে। ২০১৭-তে সেই ছুটি গিয়ে দাঁড়ায় ২৭টিতে, ২০১৮-তে ৩৫টি। মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো আগামী বছর তা খাতায় কলমে ২৭+৪= ৩১টি হলেও পরবর্তী সময়ে যে তা আরও বাড়বে তা হলফ করে বলা যায়। বলা বাহুল্য, এখন বিজ্ঞপ্তির কোনও মূল্যই নেই। কারণ, সেকশনাল হলিডেগুলিকে এক কলমের খোঁচায় সাধারণ ছুটির তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকী কর্মীরা ডিএ-র দাবি জানালে মুখ্যমন্ত্রী পুজোর ছুটি বাড়িয়ে দেওয়ার কথা শোনাচ্ছেন। কয়েক মাস আগে পার্শ্বশিক্ষকেরা বেতন বৃদ্ধির দাবি করেছিলেন, সরকার সে সময় তাঁদেরকেও দু’দিন ছুটি বাড়িয়ে ক্ষোভ সামাল দিয়েছে। নিন্দুকেরা বলেন, এই রাজ্য কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি বা মহার্ঘভাতা প্রদানে লাস্ট হলেও, ছুটি প্রদানে ফার্স্ট।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার গত ২৬-৮-১৩ বিধানসভায় ‘জন অধিকার সুরক্ষা বিল’-২০১৩ পাশ করিয়ে তা আইনে পরিণত করেছে। তাতে বলা আছে, নির্ধারিত সময়ে জনসাধারণকে নির্দিষ্ট সরকারি পরিষেবা দিতে না পারলে সরকারি কর্মচারীদের শাস্তি পেতে হবে। শাস্তি হিসাবে কর্মীদের ২৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা-সহ বিষয়টি তাদের সার্ভিসবুকে পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করা হবে। সরকারের এ হেন উদ্যোগকে বহু সাধারণ মানুষ অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এত ছুটির পর নির্দিষ্ট সময়ে সরকারি কর্মীরা সাধারণের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেবেন কী ভাবে?


মলয় মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-১১০

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও

অন্য বিষয়গুলি:

Academics Education Work Culture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE