‘জরিমানায় ধর্মীয় বৈষম্য, অখুশি ঢাকা’ (৫-৩) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন কোন ব্যাখ্যাতীত এবং নির্লজ্জ পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা মানুষদের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা নিয়ে ভারতে থাকা সংক্রান্ত এই নিয়ম। যা অনুযায়ী, ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে ওই দেশ থেকে আসা সংখ্যাগুরু ধর্মের মানুষদের, সংখ্যালঘু ধর্মের মানুষদের চেয়ে অনেক বেশি জরিমানা দিতে হবে।
সাত আট বছর আগে হলেও, এ রকম অন্যায় আইন কী ভাবে আমার দেশ চালু করতে পারে ভেবে বিস্মিত হতাম। এখন কিন্তু অপেক্ষায় আছি, কবে ধর্মের ভিত্তিতে একই অপরাধে দু’রকম শাস্তির বিধান চালু হয়।
এই ধরনের বৈষম্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, এ দেশটি ইতিমধ্যেই হিন্দুরাষ্ট্র হয়ে গিয়েছে,আমাদের অজান্তেই!
কোনও বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতহীন যে সংবিধান নিয়ে আমাদের এত গর্ব ছিল, আজ তাকে পদে পদে উল্লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এখনও এই সব মানবতা বিরোধী কাজকর্মের বিরুদ্ধে সরব না হলে, পরে অনুশোচনা ছাড়া কিছু করার থাকবে না।
সন্দীপ মিত্র
কলকাতা-৫১
প্রাণ আছে?
‘পথে পড়ে দেহ...’ (২৮-২) প্রতিবেদনে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে অন্তত ৫০টি গাড়ির পিষে যাওয়ার খবর পড়ে বিস্মিত হলাম। রাত আড়াইটে থেকে তিনটে পর্যন্ত একটা মানুষ যশোর রোডের উপর পড়ে রইলেন, কেউ তুলতে এল না! এ কোন মানসিকতা? অথচ সমাজ এমনটা ছিল না। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘ছন্নছাড়া’ (১৯৬৯) কবিতায় দেখি, এক দল বেকার যুবক, দুর্ঘটনার শিকার ভিখিরিকে বাঁচাচ্ছেন। ‘‘রক্তে মাখামাখি সেই দলা-পাকানো ভিখিরিকে/ ওরা পাঁজাকোলা করে ট্যাক্সির মধ্যে তুলে দিল।/ চেঁচিয়ে উঠল সমস্বরে—আনন্দে ঝংকৃত হয়ে/ প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে’’... আমাদের শহরের প্রাণ আছে তো?
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
পোস্ত
দামের জটে ঘুরপাক খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। ৮০-৯০ দশকে দোকানে গিয়ে শ্রমিক কৃষক মানুষ বলতেন, ‘‘কই গো দুকানি, ২০ পয়সার পুসতু দেও ক্যানি।’’ দোকানি কাগজের প্যাকেটে করে অনেকটা পোস্ত দিলে, মনার মা-র মন ভরল না, বললেন, ‘‘দুকানি কি ঠুটা!’’ দোকানি তখন প্যাকেট খুলে হাতটা ঝেড়ে দিলে, মনার মা বাড়ি গিয়ে পোস্ত বেটে ভাত খেয়ে বাবুদের কাজ করতে চলে গেলেন।
আজ দিন পাল্টেছে ঠিকই, কিন্তু ১৮০০ টাকা কেজি পোস্ত! আগে বলা যেত, ‘‘খায় পোস্ত মারে ঘুম, এই নিয়ে বীরভূম। আমার প্রিয়, তোমার প্রিয়, সবার প্রিয়, পোস্ত বড়া যুগ যুগ জিয়ো!’’ এখন মানুষকে দুঃখ করে পোস্ত বলছে, ‘‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের পাতে আমি বাঁচিবারে চাই।’’
গৌর গোপাল সরকার
রামপুরহাট, বীরভূম
অদ্ভুত নিয়ম
মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, আবহাওয়ার কারণে ম্যাচ বাতিল হলে বাড়তি দিন রাখা হয়নি। এ রকম কাণ্ডজ্ঞানহীন নিয়মের ফলে, ইংল্যান্ডের মহিলা দল সেমিফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার দ্বিতীয় সুযোগ পেল না। আজ ভারত ফাইনালে উঠে গিয়েছে বলে আমরা আনন্দ করছি, কিন্তু এই নিয়মের ফলে সেমিফাইনালে ভারতকে হারতে হলে, আমাদের কেমন লাগত?
তাপস সাহা
শেওড়াফুলি, হুগলি
নম্বরের কারণ
‘নম্বর কাটার কারণ লিখতে হবে খাতায়’ (৪-৩) প্রতিবেদনে পড়লাম, নতুন নির্দেশিকা দিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ: পরীক্ষককে প্রতিটি উত্তরের মূল্যায়নের ভিত্তি পাশে পাশে লিখে দিতে হবে, যদি তিনি নির্ধারিত পূর্ণ মান না দেন কোনও প্রশ্নের উত্তরে। অবজেক্টিভ প্রশ্নমালার উত্তর না-হয় বাঁধাধরা, কিন্তু সাবজেক্টিভ প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে, মূল্যায়ন ধরাবাঁধা ছকে বা নিয়মে হয় কি! পরীক্ষক একটি উত্তর যাচাই করেন অনেকগুলি ব্যাপারের ভিত্তিতে— পরিবেশিত তথ্য, প্রশ্নভিত্তিক উত্তরের যথার্থতা, ব্যবহৃত ভাষা ও ভাষাশৈলী, বানান ও ব্যাকরণগত শুদ্ধতা, ছাত্রছাত্রীর প্রাসঙ্গিকতার মাপ ও পরিমিতিবোধের জ্ঞান... প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের মূল্যায়নের কারণ লিখতে গেলে, পরীক্ষক খাতা দেখা নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারবেন তো! পরীক্ষকের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করতে হবে, সময়ে ফল প্রকাশ করতে গেলে। এতে পরীক্ষকেরও পরীক্ষা হয়ে যায় বটে!
চার-পাঁচ লাখ ছেলেমেয়ের মধ্যে ফলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে এক-দুই শতাংশ। তাদের খাতাগুলো রিভিউ করা সহজ, তবে সেই রিভিউ অন্য কাউকে দিয়ে করালে স্বাভাবিক ভাবেই মূল্যায়নের সামান্য হেরফের হবে, কারণ দু’জন শিক্ষক/ শিক্ষিকার মানসিক গঠন, বোধের ব্যাপ্তি বা বিষয়টি সম্বন্ধে জ্ঞানের গভীরতা এক না-ও হতে পারে। কিন্তু রিভিউয়ের সুবিধে করতে গিয়ে গোটা মূল্যায়নের প্রক্রিয়াটিকে অযথা খুব জটিল করে তোলা উচিত হবে কি?
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
কলকাতা-১৫৪
ওঁদের সংগঠন
মৌমিতা ‘এ সব কথা ভুলে থাকার আরাম’ (৪-৩) শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘‘...বাড়ির কাজের মহিলাদের কোনও ইউনিয়ন নেই।’’
আমাদের রাজ্যে ‘সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি’ ১৯৯৮ সালে গড়ে ওঠে। এই সংগঠন পরিচারিকাদের ন্যূনতম মজুরি, সপ্তাহে এক দিন সবেতন ছুটি, অসংগঠিত শ্রমিকের স্বীকৃতি দান, প্রভিডেন্ট ফান্ড-সহ নানান অধিকার ও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের জাতীয় নীতি গ্রহণ করার মতো নানা দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে অসংগঠিত শ্রমিক হিসেবে পরিচারিকাদের স্বীকৃতি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করেছে রাজ্য শ্রম দফতর। এই বিষয়গুলি নিয়ে, আনন্দবাজার পত্রিকাতেই, ‘ইজ্জত পেতে পরিচারিকারা’ (৩-১২-২০১৩) এবং ‘পরিচারিকাদের ইউনিয়নে জুজু দেখছেন গৃহস্থ’ (২৩-৬-২০১৮) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
অসীমা পাহাড়ি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
শোষণমুক্তি
‘এ সব কথা...’ নিবন্ধের সঙ্গে একমত। নারী দিবস যে নারীর মর্যাদা রক্ষার, স্বাধীনতা অর্জনের শপথ নেওয়ার দিন, এটা ভুলিয়ে দেওয়ার হাজার আয়োজন চলছে। গয়না, শাড়ির দামে বিশেষ ছাড় দেওয়া, আর সে দিনের ব্যবসার সাফল্য-ব্যর্থতার নিরিখে চলছে নারী দিবসের মূল্যায়ন। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা এটাই চায়। এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের জরুরি কাজটা করবে স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সমাজের শোষিত, নির্যাতিত মানুষ। তাদের সংগঠিত করতে হবে, যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। নারী দিবসের যথার্থ তাৎপর্য তাদেরই উপলব্ধি করতে হবে। বাড়ির কাজের মহিলাদের ইউনিয়ন নেই তা নয়, আছে। তবে যে কোনও শ্রমজীবী মানুষের সংগঠন যদি কেবল অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়ার গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখে, তবে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। শোষণের মূল কোথায়, তার স্পষ্ট উপলব্ধি এবং তার অবসানের আন্দোলনই পারে এই অসহনীয় অবস্থা থেকে সমাজকে মুক্ত করার রাস্তা দেখাতে।
জয়শ্রী চক্রবর্তী
সম্পাদিকা, সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি, পঃ মেদিনীপুর জেলা কমিটি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy