দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়িতে নগদ টাকা উদ্ধার কাণ্ডে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে দিল্লি পুলিশকে। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিরই প্রশ্নের মুখে পড়তে হল দিল্লি পুলিশকে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, বেশ কয়েকটি জায়গায় ফাঁক থেকে গিয়েছে। আর সেই প্রশ্নের উত্তরই খোঁজার চেষ্টা চলছে।
দিল্লি পুলিশের কমিশনার সঞ্জয় অরোরা এবং ডেপুটি পুলিশ কমিশনার দেবেশ কুমার মহলা-সহ এই ঘটনায় বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্ত কমিটি। সূত্রের খবর, সেখানেই দিল্লি পুলিশের কাছে তদন্ত কমিটি প্রশ্ন করে, বিচারপতি বর্মার বাসভবনে বিপুল টাকা উদ্ধার হওয়ার পরেও কেন এফআইআর করা হল না? কেনই বা উদ্ধার হওয়া টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়নি? শুধু তা-ই নয়, সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা এই প্রশ্নও তুলেছেন যে, টাকা উদ্ধারের সময় যাঁরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা ভিডিয়ো করেছেন, সেই ভিডিয়ো ক্লিপ কেন মুছে দেওয়া হয়েছে?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিল্লি পুলিশও তদন্ত কমিটির এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্ত কমিটিকে জানানো হয়েছে যে, এই ঘটনায় কোনও এফআইআর দায়ের না হওয়ার কারণে টাকা বাজেয়াপ্ত করা যায়নি। বিচারপতি বর্মার বাসভবনে গিয়ে পুলিশকর্মীরা নিজেদের ‘দায়িত্ব’ পালন করেছেন। সূত্রের খবর, দিল্লির পুলিশ যে ‘দায়িত্বের’ কথা বোঝাতে চেয়েছে, তার সারমর্ম হল, যত ক্ষণ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এ বিষয়ে সরকার পরামর্শ না করা হচ্ছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত কোনও হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যায় না। তাই পুলিশকর্মীরা তাঁদের ঊর্ধ্বতনকে বিষয়টি জানান। তার পর পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায়কে বিষয়টি অবগত করেন। তিনি আবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নাকে ঘটনাটি জানান।
গত ১৪ মার্চ রাত ১১টা ৩৫ মিনিট নাগাদ দিল্লিতে বিচারপতি বর্মার সরকারি বাংলোয় আচমকা আগুন লেগে গিয়েছিল। সে সময়ে বিচারপতি এবং তাঁর স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যেরা দমকল ডাকেন। সেই দমকলবাহিনী আগুন নেভাতে গিয়ে বিচারপতির বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকা দেখতে পায় বলে দাবি। অভিযোগ, ওই টাকা হিসাব-বহির্ভূত। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর বিচারপতি বর্মাকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। পরে তারা বিবৃতি দিয়ে জানায়, বদলির সিদ্ধান্তের সঙ্গে নগদকাণ্ডের কোনও যোগ নেই। বিচারপতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি ওঠে। কলেজিয়ামের সদস্যেরাই জানান, বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বিচারপতি বর্মাকে সরানো প্রয়োজন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রয়োজন। এর পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না নগদকাণ্ডে দিল্লি হাই কোর্টের রিপোর্ট তলব করেন। বিস্তারিত রিপোর্ট শীর্ষ আদালতে জমা দেন প্রধান বিচারপতি উপাধ্যায়। তাতে অভিযুক্ত বিচারপতির বক্তব্যও ছিল। সম্পূর্ণ রিপোর্টটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়।
বিচারপতি বর্মা দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। ঘটনার দিন তিনি এবং তাঁর স্ত্রী ভোপালে ছিলেন। যে ঘর থেকে টাকা পাওয়া গিয়েছে, তা বাংলোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। সেখানে বাইরের লোকের যাতায়াত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি খন্না এই সংক্রান্ত তদন্তের জন্য যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন, তাতে রয়েছেন পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শীল নাগু, হিমাচল প্রদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি জিএস সন্ধাওয়ালিয়া এবং কর্নাটক হাই কোর্টের বিচারপতি অনু শিবরামন।