এই উৎসবে নুসরত জাহানের হিন্দু মনোভাবাপন্ন আচরণে ফতোয়া জারির বিষয়টা, কবি নজরুল ইসলামের ‘‘মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান’’ পঙ্ক্তিটিকে বড্ড অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। স্বাধীনতার পরে ভারত কুসংস্কারাচ্ছন্ন থাকা সত্ত্বেও, হিন্দু-মুসলমান নিয়ে এত ধর্মের গোঁড়ামি ছিল না। ভিন্ন ভাষাভাষী সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র হল এই ভারত। এ দেশে রামের রক্তে রহিম কিংবা রহিমের রক্তে রামের জীবন বেঁচেছে— এমন নজির বহু আছে। হিন্দু বোনের ঘরে মুসলিম ভাই ভাইফোঁটা নিতে গিয়েছেন, কিংবা মুসলিম ভাইয়ের বাড়িতে হিন্দু বোন রাখি বাঁধতে গিয়েছেন, বা হিন্দু প্রতিবেশীর মৃতদেহ মুসলিম ভাইরা কাঁধে করে বয়ে নিয়ে গিয়েছেন, কিংবা কেরলে ভয়ঙ্কর বন্যায় মুসলিম ভাইরা নোংরা আবর্জনায় গলা ডুবিয়ে হিন্দু মন্দির পরিষ্কার করেছেন। এর পরেও ভারতে আজ এই অত্যাধুনিক যুগে এত ধর্মীয় গোঁড়ামি কিসের?
বটুকৃষ্ণ হালদার
কবরডাঙা
ভোট বিভ্রাট
আমার বাবা, রামকৃষ্ণ সাহা (৫৬) বিগত ৩৮ বছর ধরে প্রতিটি নির্বাচনে ভোট দিয়ে আসছেন; অথচ এই বছর লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে ভোটার স্লিপ দিতে এলে, সবার স্লিপ পাওয়া গেলেও, বাবার স্লিপটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তখন ভোটের মুখে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাই ‘কিছু একটা ব্যবস্থা’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষান্ত হন। ভোটের দিন ভোটদান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তালিকায় ওঁর নামই নেই। অতএব ভোটদান বন্ধ!
আমরা যোগাযোগ করি আমাদের বুথ লেভেল অফিসারের সঙ্গে। উনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ৬ নং ফর্মটি ফিল-আপ করতে। কিন্তু সেই ফর্মটি নতুন ভোটারদের জন্য, অর্থাৎ আমার বাবাকে আবার নতুন করে ভোটার তালিকায় নাম তুলতে হবে, তাও আবার প্রথম বারের জন্য! পুনরায় যোগাযোগ করা হলে, উনি বলেন, নতুন করেই নাম তুলতে হবে।
এখন প্রশ্ন হল, আমার বাবার দোষটা ঠিক কী যে, এ রকম হেনস্থার শিকার হতে হবে? সরকারের ভুলের জন্য নতুন করে নামই বা তুলতে হবে কেন? উপরন্তু উক্ত ফর্মে স্বীকার করতে হবে ‘‘আমি এর আগে ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত হইনি।’’ এ তো রীতিমতো মিথ্যাচার! আর গোদের ওপর বিষফোড়া হল, নির্বাচন কমিশনের সদ্য চালু করা ইলেক্টর্স ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম (ইভিপি)। এ ক্ষেত্রে আমার বাবার ভোটার কার্ড ভেরিফাই করা তো দূরের কথা, পরিবারের অন্যদের ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ করতেও অসুবিধে হচ্ছে। কারণ ইভিপি-তে ‘ফ্যামিলি লিস্টিং’ বা পরিবারের সদস্যদের কার্ড লিঙ্কিংয়ের অপশনে আমার বাবার এপিক নং দিতে পারছি না।
রৌনক সাহা
কলকাতা-৪৯
পরিচারিকা
বড় বে-জায়গায় হাত পড়ে গিয়েছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্তের পক্ষে অস্বস্তিকর সম্পাদকীয় ‘বোনাস দিয়াছেন?’ (৪-১০) দক্ষিণ কলকাতার এক গৃহকর্তা প্রতিশ্রুত বোনাস না দিয়ে তাঁকে বরখাস্ত করায়, থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন শান্তি চৌধুরী নামে এক গৃহপরিচারিকা। নিবন্ধে বলা হয়েছে, মধ্যবিত্ত গৃহকর্তারাই এমন কথার খেলাপে স্বচ্ছন্দ। অনুমানটি ডাহা ভুল। এই ‘স্বাচ্ছন্দ্য’-এর হার উচ্চবিত্তদের মধ্যে ঢের বেশি। খেয়াল করলে দেখা যাবে, গৃহপরিচারিকাদের কাজে গাফিলতি এবং দোষত্রুটির বিষয়ে সব শ্রেণির এক রা। বিশেষ করে গৃহস্থ-মহিলাদের যে কোনও সমাবেশে বা ফোনালাপে এই প্রসঙ্গে কথাবার্তার কত অংশ উৎসর্গীকৃত, সেটি সামাজিক গবেষণার বিষয় হতেই পারে।
মানতেই হবে, আলোচিত দিকগুলি একেবারে অসার নয়। অনেক সময়েই পরিচারিকার নৈতিক মান, কাজের মান ও কর্তব্যবোধ আশানুরূপ হয় না। তার পিছনে আছে নিয়োগকারী শ্রেণির দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণের বৃত্তান্ত। অনৈতিক কাজ কোনও মতেই সমর্থন করা যায় না, কিন্তু সেই অনৈতিক কাজ-কারবার সমাজের উপরের স্তরের মানুষকে মহিমান্বিত করে তোলে। টেবিলের নীচের মেঝে ভাল করে না মুছলে পরিচারিকার কপালে জোটে ফাঁকিবাজ অপবাদ। কিন্তু তাঁর মালকিনটি যখন দেরি করে অফিসে যান এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাড়ির দিকে রওনা দেন, তখন অফিসে তাঁর প্রতিপত্তি আলাদা।
দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা বঞ্চনার প্রতিকারে শান্তিদেবীর মতো আরও অনেকে এগিয়ে আসবেন। কম পারিশ্রমিক, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, গৃহস্থের দুর্ব্যবহার, কখনও বা যৌন নির্যাতন এক বিপুল অংশের নিত্যসঙ্গী। প্রয়োজন বলিষ্ঠ, কার্যকর সংগঠন এবং নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে আরও সচেতনতা।
প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে। সারা রাজ্যে গৃহ পরিচারিকাদের নিবন্ধীকরণ জরুরি। পরিচারিকা ও গৃহস্থ— উভয়ের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে শ্রম আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। কাজের ধরন ও সময় অনুসারে উপযুক্ত পারিশ্রমিক নির্ধারণ করুক শ্রম দফতর। মূল্যস্তরের সঙ্গে তা অবশ্যই সম্পর্কিত হতে হবে। নিয়মিত এবং গর্ভকালীন ছুটির পরিসর চাই। প্রয়োজন অবসরকালীন পেনশন ও ইএসআই-এর সুবিধাপ্রদান।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি
শ্রীরামপুর, হুগলি
‘শাসিত’?
‘গণতন্ত্রের শর্ত’ (১১-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা লেখা হয়েছে: ‘‘শাসকের সহিত শাসিতের সংলাপের পরিসরটির নামই গণতন্ত্র...’’ কিন্তু সুস্থ এবং প্ৰকৃত গণতন্ত্রে জনগণ ‘শাসিত’ নন, তাঁরা ‘নাগরিক’। এবং নির্বাচিতরাও ‘শাসক’ নন, তাঁরা জনগণের প্রতিনিধি। মাথায় রাখতে হবে, দু’পক্ষই কিন্তু এক পঙ্ক্তিতে দাঁড়িয়ে, একে অন্যের ওপর ছড়ি ঘোরাবার অধিকার কোনও পক্ষেরই নেই। বরং নাগরিকেরা কিছুটা বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত— ভোটাধিকার প্রয়োগ করে অপছন্দের দল বা ব্যক্তিকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের আছে। ভারতের মূলধারার মিডিয়ায় শাসক ও শাসিত জাতীয় শব্দের ব্যবহার দেশের রাজনীতিতে কতটা বা কী কী বিকৃতি এনেছে, তা সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হতেই পারে।
ভারত সাংবিধানিক ভাবে একটি গণতন্ত্র হলেও, গণতান্ত্রিক চেতনা বা মূল্যবোধের পরিবর্তে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ব্যক্তির মধ্যেই তাঁদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান খুঁজতে চেয়েছেন, সেই ব্যক্তির গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে হাজার প্রশ্ন থাকলেও। বলা যায়, এক ধরনের benevolent dictatorship এ দেশে দীর্ঘ দিন ধরে মান্যতা পেয়ে এসেছে। সে কারণেই ইন্দিরা গাঁধী থেকে এখন মোদী, বা এ রাজ্যে জ্যোতি বসু থেকে এখন মমতা— কোথাও গিয়ে এঁরা সবাই এক হয়ে যান। কিন্তু সম্পাদকীয় স্তম্ভ যদি জনগণকে ‘শাসিত’ হিসেবে নিজেদের ভাবতে শেখায়, তা হলে বড় বিপদ— ‘শাসিত’ থেকে ‘শোষিত’ খুব দূরে নয়।
সুশোভন সরকার
কলকাতা-২৫
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy