Advertisement
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
Celebrity Birthday

অসীম শক্তিতে কটাক্ষ সহ্য করেন, আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে আমাদের কাছে কিন্তু ভেঙে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী

“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে আমরাও শিখেছি। আমরাও তাই এত কটাক্ষের শিকার হই। কিন্তু প্রতিক্রিয়া জানাই না।”

সাংসদ-অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সাংসদ-অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:১১
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সারা ক্ষণই কি তিনি প্রশাসনিক প্রধানের বর্ম পরে থাকেন? এ নিয়ে প্রচুর মানুষের কৌতূহল। একটা সময় আমারও ছিল। ধীরে ধীরে অভিনয় সূত্রে ওঁর কাছাকাছি আসার সৌভাগ্য হয়েছে। যদিও আজও জানি না, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় এত স্নেহ করেন। জানি না, আমার মধ্যে কী দেখেছিলেন! যার জন্য আমায় লোকসভা নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছিলেন। ওঁর জোরে আমি অভিনেত্রী এবং সাংসদ। তবে কাছাকাছি এসে বুঝেছি আমাদের নেত্রী একই সঙ্গে ‘দিদি’। যতটা বাংলার মানুষের কাছে, ততটা ওঁর সহকর্মী বা অধস্তনদের কাছেও। তাই, প্রয়োজনে সরাসরি ওঁর সঙ্গে হোয়াট্‌সঅ্যাপে যোগাযোগ করা যায়। দিদি কিন্তু সারা ক্ষণ হোয়াট্‌সঅ্যাপে নজর রাখেন। নিজে জবাব দেন। নির্দেশ দেন। আজ ওঁর জন্মদিনে একটা কথা না বললেই নয়, দিদি না দেখলে, না সামলালে আমাদের আর কে দেখবেন?

সাংসদ হওয়ার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে খুব ঘনিষ্ঠ আমি, তা-ও কিন্তু নয়। তবে শুনেছি, ওঁর দিন শুরু হয় শরীরচর্চা দিয়ে। হ্যাঁ, নিজেকে সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখতে দিদি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। রোজ সকালে ঘাম ঝরিয়ে হাঁটেন। ওঁর বাড়িতে শুনেছি ট্রেডমিল আছে। দিদি পছন্দ করেন খোলা হাওয়ায় হাঁটতে। তাই বাড়ির সামনে যে লম্বা রাস্তা চলে গিয়েছে সেখানেই নাকি ৪ মাইল রোজ হাঁটাহাঁটি করেন। যে কেউ ভোরে গেলে দেখতে পাবেন। ওঁর হাঁটা মানে বাকিদের ছোটা! দিদি এখনও এতটাই শারীরিক ভাবে শক্তিশালী। এ ভাবেই নিজের ওজন ঝরিয়েছেন। এ ভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেন। গত বছর আমি নিজস্ব প্রসাধনী সংস্থা খুলেছি। সেখানে রূপচর্চার নানা সামগ্রী মেলে। অনেকেই কৌতূহলী, দিদি কি সেই সব ব্যবহার করেন? শুনে মজাই লাগে। না, দিদিকে এখনও সে সব কিছুই দিতে পারিনি। তবে ওঁর ত্বক এমনিতেই ভীষণ উজ্জ্বল। দিদি কিন্তু খুব ফর্সা। আর ওঁর ওই একঢাল চুল, এই বয়সেও!

এর পর সম্ভবত স্নান, পুজো, খাওয়াদাওয়া পর্ব। একটা কথা বলি? মুখ্যমন্ত্রী যে কী খান, জানি না! কোনও দিন ওঁকে খেতে দেখিনি। চা খেতে ভালবাসেন। বড়জোর মুড়ি-তেলেভাজা। শুনেছি খুব ভারী খাবার খান না। এই জন্যই দিদিকে রোগবালাই ভয় পায়। অতিথিদের সঙ্গে কিন্তু উল্টোটাই করেন। মুখ্যমন্ত্রী তখন গৃহকর্ত্রী, “এসো রে, বসো রে, নাড়ু-নিমকি খাও।” বা “কী খাবে বল?”-র মতো অনুরোধ। সঙ্গে একাধিক বার চা। আমারও ওঁকে নিজে রান্না করে খাওয়ানোর খুব ইচ্ছে। শুনেছি, দিদি তেল-ঝাল-মশলা দেওয়া খাবার পছন্দ করেন না। আমিও তাই। রকমারি ভর্তা, সব্জি দিয়ে ডাল আর পাতলা মাছের ঝোল— খুব প্রিয় আমার। যে দিন দিদি আমার বাড়িতে আসবেন, রান্নার দিদি নন, আমি নিজে রেঁধে এগুলোই খাওয়াব ওঁকে।

মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির যে কোনও অনুষ্ঠানে এলাহি আয়োজন। আপ্যায়নও দেখার মতো। ওঁর বাড়ির কালীপুজোয় একাধিক বার গিয়েছি। ভীষণ সুন্দর প্রতিমা। জাগ্রত দেবী। নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করেন। নিজে ভোগ রান্নার তদারকিতে থাকেন। এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইন থেকেই যেমন প্রশ্ন এসেছে, চর্চিত খবর, দিদি নাকি রোজ গভীর রাতে নিজে কালীপুজো করেন? তাই এত শক্তি পান? সত্যিই বলছি, জানা নেই। তবে এটা বিশ্বাস করি, কোথাও থেকে শক্তি তো অবশ্যই পান। যার জোরে তিনি নিজেকে বার বার প্রমাণ করেন। বার বার ফিরে আসেন। কোনও বাধাই ওঁর কাছে বাধা নয়।

সাংসদ হওয়ার আগে ‘দিদি নং ১’-এর সেটে মুখ্যমন্ত্রী এবং রচনা।

সাংসদ হওয়ার আগে ‘দিদি নং ১’-এর সেটে মুখ্যমন্ত্রী এবং রচনা। ছবি: সংগৃহীত।

নিজের এই জোরের দিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও জানেন। তাই তাঁকে ঘিরে এত কটাক্ষ, এত সমালোচনা, এত নিন্দার ঝড়— তিনি অনড়। দিদি জানেন দিদি কী। তাই হাজার কটাক্ষেও কোনও প্রতিক্রিয়া জানান না। জানানোর প্রয়োজন বোধ করেন না। আমরাও ওঁকে দেখে শিখছি। আমাদেরও তো কম পোহাতে হয় না। আমাকেই দেখুন না, কত লোকে কত কিছু বলে। আমিও চেষ্টা করি নিরুত্তর, নিরুত্তাপ থাকার। এই মন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই শহরে ঘটে যাওয়া আরজি কর-কাণ্ডের মতো ঘটনাতেও মুখ্যমন্ত্রী অবিচল। আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময় দিদি কিন্তু ভেঙে পড়েছেন। তিনি নিজে এক জন মহিলা। অন্য নারীর সঙ্গে অন্যায় ঘটলে কী করে মেনে নেবেন? চেয়েছিলেন, রাজ্য পুলিশ ঘটনার তদন্ত করবে। পরে প্রশাসন সিবিআই তদন্ত চাইলে তিনি বাধা দেননি। ওঁর একটাই লক্ষ্য, যেন মৃতা এবং তাঁর পরিবার সুবিচার পান। এই প্রসঙ্গেও আনন্দবাজার অনলাইন থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দিদি একেবারে গোড়ার দিকে কাউকে না জানিয়ে শহরের হাসপাতালগুলিতে ‘সারপ্রাইজ় ভিজ়িট’ দিতেন। সেটা বজায় রাখলে কি আজ এত বড় অঘটন এড়ানো যেত?

এর উত্তর আমার কাছে নেই। মুখ্যমন্ত্রী ভাল বলতে পারবেন। তবে আমি বলব, এর আগেও কিন্তু বাংলায় বা শহরে এই অন্যায় একাধিক বার ঘটেছে। অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের আমলে। দিদি তখনও এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন, আজও জানাচ্ছেন।

সেই জায়গা থেকে বলব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে মস্তিষ্ক, বুদ্ধির পাশাপাশি ‘মমতা’ নামক বিশেষ অনুভূতির সহাবস্থান। তিনি তাই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও নিজের বাড়ি ছাড়েননি। বাংলার তাঁতের কাপড় ভোলেননি। ওঁর সংগৃহীত শাড়ি দেখার মতো। প্রত্যেকটি শান্তিপুর, ফুলিয়া, টাঙ্গাইল বা ধনেখালি থেকে আসে। ভুল হলে সহকর্মীদের বকেন। পরে ডেকে বুঝিয়েও দেন। আমি যদিও এখনও ওঁর কাছে বকা খাইনি। এবং দিনের শেষে ‘মানবী’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসেন। আর হ্যাঁ, ধারাবাহিক দেখতেও। প্রত্যেকটা ধারাবাহিক খুঁটিয়ে দেখেন। আমাদের মুখ যেমন মনে রাখেন, তেমনি অভিনীত দৃশ্যও। মুখোমুখি হলে সে সব নিয়ে আলোচনা করেন। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে হয়তো মুখ টিপে হাসেন। তাঁরা বোঝেন না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাকি মুখ্যমন্ত্রীদের মতো নন। যা করেন, হৃদয় দিয়ে করেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Rachna Banerjee Birthday chief minister West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy