শিবাজীপ্রতিম বসুর ‘লোকসভার পূর্বাভাস?’ (১২-৭) শীর্ষক প্রবন্ধ সম্পর্কে কিছু কথা। কোটি কোটি টাকা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রভাব-প্রতিপত্তি জাহির করার স্বার্থে ক্ষমতা দখলই ভোটের রাজনীতির প্রধান কথা। জনহিতের কথা নিছক কেতাবি বুলি। ভোট পেয়ে আখের গোছাতে গিয়ে যেটুকু জনমঙ্গল হয়ে যায়, সেটুকুই মানুষের লাভ। উন্নয়নের কাজগুলো ভোটের আগে করতে পারলে দু’দিক দিয়ে লাভ। যা করলে দলের লাভ নেই তা বক্তৃতায় পুষিয়ে দেওয়া হয়। এ সব কথা জনগণ জানেন। কিন্তু এর প্রতিরোধ করার উদ্যোগ কে করবে?
কাকে ভোট দেওয়া উচিত, তা হয়তো অধিকাংশ জনগণের ভাবনায় কুলোয় না। তাঁরা মিডিয়ার দ্বারা, দলের দ্বারা বিভ্রান্তও হন। তাই জনগণের সমস্যার সমাধানের চেষ্টা ছেড়ে দলীয় সংগঠনের উপর জোর বেশি দেওয়া হয়। প্রবন্ধকার ইঙ্গিত দিয়েছেন, স্বাধীনতার আগে ও পরে গ্রামেগঞ্জে সশস্ত্র প্রতিরোধ কিংবা সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের ‘বিরোধী-নিকাশ’ নির্বাচনী সন্ত্রাস গ্রামবাংলায় সাংস্কৃতিক পরম্পরায় পরিণত হয়েছে। কথাটা ভাবার মতো। তবে আর একটা বিষয় হল পঞ্চায়েত নির্বাচনে, বিশেষত গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো এত হিংসা, এত ছাপ্পার ঘটনা ঘটে না লোকসভা, বিধানসভার ভোটে। যদিও সেখানে আর্থিক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপার আরও বড় মাপের। গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটের ফলাফল সাধারণত একটি বা দু’টি মাত্র বুথেই নির্ধারিত হয়। এখন তো গণনাতেও যথেষ্ট কারচুপি হচ্ছে। ভোট গণনার পরেও পুনরায় নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। জয়ীদের ভাগ্য ঝুলছে আদালতে। যে সব গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও দলের ভোট একচেটিয়া নয়, সেখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ভোটের ফারাকটা সাধারণত খুব কমই থাকে। প্রার্থী একটু এ দিক-ও দিক করতে পারলে জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা। এমনই এক ভাবনা থেকে প্রার্থীরা ও তাঁদের দলবল অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। পরিণাম, মৃত্যু পর্যন্ত গড়ায়। লোকসভা বিধানসভার ভোটকেন্দ্রের পরিধি অনেক বিস্তৃত বলে অতি সক্রিয়তার ব্যাপারটা তেমন ঘটে না।
দুর্গেশ কুমার পাণ্ডা, নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কোষমুক্ত
কৌশিক সেন ‘আমাদের টিনের তলোয়ার’ (৯-৭) প্রবন্ধে বিজেপি-আরএসএস’এর ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের যে ভয়ঙ্কর দিক তুলে ধরেছেন, তার সঙ্গে মতানৈক্যের কোনও অবকাশ নেই। বিজেপি এই মুহূর্তে দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অখণ্ডতার পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে গড়ে ওঠা, ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’-এর ভারতবর্ষকে বাঁচাতে হলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি বৌদ্ধিক সমাজের অগ্রণী ভূমিকার কথা প্রবন্ধকার যথার্থ ভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বুদ্ধিজীবী তথা সুশীল সমাজের সক্রিয় যোগদান ছাড়া, শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দিয়ে বিজেপির সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি প্রতিহত করা সম্ভব নয়।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, প্রবন্ধকার ‘প্রাতিষ্ঠানিক আধিপত্য’-এর দানবীয় চেহারা শুধুমাত্র কেন্দ্রের শাসন ক্ষমতায় থাকা আরএসএস-এর মতাদর্শপুষ্ট বিজেপি সরকারের কার্যক্রমে দেখতে পাচ্ছেন? রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারের কাজকর্মে তা দেখতে পাচ্ছেন না? রাজ্যে বারংবার ঘটে চলা প্রাতিষ্ঠানিক অত্যাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলার বৌদ্ধিক সমাজের সিংহভাগ হয় নীরব, নয়তো সরকারের সঙ্গে গলা মিলিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক আধিপত্যের সঙ্গে আপস করছেন। অনেকে সরাসরি রাষ্ট্রক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করে প্রাতিষ্ঠানিক আধিপত্যের শরিক হয়ে উঠেছেন। ২০১১ সালে বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’র রাজনৈতিক শক্তি যে স্তরে থাকুক না কেন, সিপিআইএম-কে ক্ষমতাচ্যুত করা তাঁর পক্ষে একক ভাবে সম্ভব ছিল না, যদি না বাংলার বৌদ্ধিক সমাজ প্রতিবাদে সরব হতেন। পরিবর্তনের বার্তা বহন করে সে দিন তাঁরা যে কোনও রকমের প্রাতিষ্ঠানিক শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই মানুষ পরিত্রাণের পথ হিসাবে অগ্নিকন্যাকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করার সাহস পেয়েছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর থেকে তৃণমূল সরকার ক্রমাগত গণতন্ত্র চর্চার পরিসরকে সঙ্কুচিত করেছে। মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে। অথচ, বাংলার বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশ বিজেপির সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচার করে ‘লেসার ইভিল’ আখ্যা দিয়ে তৃণমূল দলের স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্রকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন।
প্রবন্ধকার আরএসএস-বিজেপির সাম্প্রদায়িক চরিত্র সম্পর্কে পাঠককে সজাগ করে দিয়েছেন। অথচ, একদা আরএসএস-ঘনিষ্ঠ বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুজরাত দাঙ্গায় অভিযুক্ত নরেন্দ্র মোদীকে বিধানসভায় ভাল ফল করার জন্য উপহার হিসাবে তিনি ফুল পাঠিয়েছিলেন। লেখায় সে বিষয়ে প্রবন্ধকার সম্পূর্ণ নীরব।
সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোট উপলক্ষে গণতন্ত্রের যে হত্যালীলা হল, তা যে শাসকের স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট চরিত্রকেই প্রতিভাত করে, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে গণনাপর্ব পর্যন্ত তৃণমূল দল প্রশাসনের সহায়তায় কার্যত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে ধূলিসাৎ করে আধিপত্য কায়েম করেছে। তাই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের নীরবতা শুধু বিস্ময় উদ্রেক করে না, হাড়হিম করা ভয়ও সঞ্চার করে। বাংলার বৌদ্ধিক মহলের এই নীরবতা যতই দীর্ঘায়িত হবে, ততই বাংলার ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। কারণ, সামাজিক পটপরিবর্তনে বা রাজনৈতিক পালাবদলে বৌদ্ধিক সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। তাঁরাই সমাজের চালিকাশক্তি। দেশের অগণিত সাধারণ মানুষের মতামতকে সংগঠিত করার শক্তি তাঁদের আছে। দেশ, কাল, সমাজ নির্বিশেষে বৌদ্ধিক সমাজের সক্রিয় যোগদানে রাষ্ট্রবিপ্লব নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। বাংলার বৌদ্ধিক মহল যত তাড়াতাড়ি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারবেন, ততই ভাল। তাঁদের তরোয়াল টিনের হলেও কোষমুক্ত। তবে মরচে পড়ে ভোঁতা হয়ে গেলে দুশ্চিন্তার বিষয়।
কমল কুমার দাস, কলকাতা-৭৮
অপব্যবহার
‘দখলদারি’ (১৮-৭) সম্পাদকীয়টি নিয়ে কিছু কথা। একটি নির্দিষ্ট দিন এক মর্মান্তিক মৃত্যু-মিছিলের স্মরণে এক রাজনৈতিক দল একটি দিবস পালন করলে দোষের কিছু দেখি না। প্রশ্নটি হল, সরকারি ব্যবস্থাপনার অপব্যবহার, যা সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নতুন নয়। ষাটের দশকে লবণ হ্রদ এলাকায় তৎকালীন একচ্ছত্র রাজনৈতিক আধিপত্যের ক্ষমতায় বলীয়ান দলের প্লেনারি কনফারেন্সটি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় হয়েছিল। আর কলকাতার গড়ের মাঠের সভা-সমিতির কল্যাণে পুরো যান চলাচল ব্যবস্থা বন্ধ থাকা, এবং সাধারণ মানুষের অবর্ণনীয় ভোগান্তি তো আমাদের গা সওয়া! তবে এ ধরনের মিটিং-মিছিলের একটা বড় অংশ রাজনৈতিক তাৎপর্য না বুঝেই, কিছুটা রাজনৈতিক নেতাদের বিরাগভাজন না হওয়ায় কারণে, যোগ দেন। খাওয়াদাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের উত্তেজনা স্তিমিত হওয়ার পথে, আবার বৃহত্তম নির্বাচনের প্রস্তুতি! সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
সুবীর ভদ্র, ডানকুনি, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy