‘এ বার চার বাঙালির নামে কাউন্সিল ভবন লন্ডনে’ (১৫-৩) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই চিঠি। এই প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে, লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল টিউব স্টেশনের নাম বাংলায় লেখা হয়েছে জেনে উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লন্ডনের ‘ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন অথরিটি’ মেট্রো স্টেশনের সাইনবোর্ডে ইংরেজির পাশে বড় করে বাংলা ভাষায় লিখেছে ‘হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশন’। কারণ, এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে বাংলাভাষী প্রায় চল্লিশ শতাংশ। তাঁদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল এই স্টেশনটির নাম বাংলা হরফে লিখতে হবে। সাহেবদের দেশে বাংলাকে যে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য সমগ্র বিশ্বের প্রায় ২৮ কোটি বাঙালির পক্ষ থেকে।
এর বিপ্রতীপে বাংলা ভাষার ধাত্রীভূমি পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র দেখা যাচ্ছে দোকানপাট, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিতে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় সাইনবোর্ড লেখা হচ্ছে দেদার। মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে আমাদের রাজ্যের বাঙালিদের কোনও মমত্ব বা দরদ নেই। তাই নিজ ভূমেই ব্রাত্য হয়ে পড়ছে বাংলা ভাষা।
মনে হয়, আমাদের মাতৃভাষা আবহমানকাল ধরে বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের মাতৃভাষাপ্রেমী মানুষের জন্য। কেননা মাতৃভাষার স্বাধিকার রক্ষার জন্যই সেখানে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল পঞ্চাশের দশকে। তার পরে ঐতিহাসিক স্বাধীনতা অর্জন ১৯৭১ সালে। কেবলমাত্র মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের নজির বিশ্বে বিরল। অথচ, এ পারের বাঙালিদের মধ্যে মাতৃভাষা নিয়ে যেন কোনও আবেগই নেই। বাংলা ভাষা এখন দুয়োরানির ভূমিকায় পর্যবসিত হয়েছে।
তুষার ভট্টাচাৰ্য
কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ
পরম প্রাপ্তি
খাস লন্ডনের বুকে বাংলায় লেখা হল রেল স্টেশনের নাম। ব্রিটেনের গণপরিবহণের ইতিহাসে এই প্রথম। পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত মেট্রো স্টেশন ‘হোয়াইটচ্যাপেল’ স্টেশনের একাধিক প্রবেশদ্বারে নামটি বাংলায় লেখার পাশাপাশি স্টেশনের প্রবেশপথে ‘হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে আপনাকে স্বাগত’ এই বার্তাও শোভা পাচ্ছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে, এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির বর্ষে বাঙালির এই পরম প্রাপ্তি, এবং বাংলা ভাষার এই স্বীকৃতি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে!
সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৯১
তাচ্ছিল্য কেন?
লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল টিউব স্টেশনের নাম বাংলায় লেখা হচ্ছে, সে জন্য এক ধরনের গর্ব অনুভব হয়। অথচ, আমাদের রাজ্যের দোকান থেকে প্রতিষ্ঠান, বাস-মিনিবাস সর্বত্র বাংলাতে লেখার বিষয়টা অত্যন্ত কম। এবং যেটুকু বাংলায় লেখা থাকে, তার অনেকটাই ভুল বানানে ভরা। বাংলা ভাষাটা কি বাঙালিদের একাংশের কাছে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের বিষয় হয়ে যাচ্ছে?
অরূপরতন আইচ
কোন্নগর, হুগলি
বাংলার ব্যবহার
দৈনন্দিন চর্চাই হল যে কোনও বিষয় আয়ত্ত করার চাবিকাঠি। যদি দৈনন্দিন জীবনেই বাংলা ভাষার ব্যবহার না থাকে, তা হলে ভাষার অস্তিত্ব যে বিপন্ন হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। ক’টা দোকানে বড় বড় করে বাংলায় লেখা থাকে নাম-ঠিকানা? সকালে যে দুধের প্যাকেট আসে, তাতেও বাংলায় ব্র্যান্ডের নাম লেখা থাকে না। এটিএম থেকে বাংলা ভাষায় লেখা পড়ে টাকা তোলা যায়, এমন মেশিনের সংখ্যা হাতেগোনা। এ ছাড়া ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসের সব ফর্ম-ও তো বাংলায় নয়। কোনও ডাক্তারবাবু কি প্রেসক্রিপশন বাংলায় লেখেন? ক’টা বেসরকারি অফিসে বাংলায় কথা বলা হয়? আগেকার দিনে বরেণ্য সাহিত্যিকরা গদ্যের ভাষাকে শুধুমাত্র সৃজনশীল সাহিত্যে সীমাবদ্ধ না রেখে রোজকার জীবনের ছোট ছোট কাজে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এখন সেই অভ্যাস অনেক কমেছে। দৈনন্দিন জীবনে বাংলার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে না। সরকারি বিজ্ঞপ্তিও প্রধানত ইংরেজিতেই লেখা হয়। ব্যবহারিক বাংলার অস্তিত্ব না থাকলে বাংলা সাহিত্যের অস্তিত্বও বিপন্ন হবে না কি? তাই বাংলার ব্যবহারিক প্রয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
সুমন চক্রবর্তী
বেঙ্গালুরু
বাঙালির রুচি
শিক্ষিত বাঙালির আত্মগরিমাতে টোকা মেরেছেন গৌতম চক্রবর্তী (‘বৃহৎ বাঙালি কোথায়’, ১৩-৩)। মহানগর জুড়ে অধিকাংশ শিল্পবোধহীন আড়ষ্ট স্ট্যাচুগুলিকে ভাস্কর্যের তকমা দেওয়া যে অনুচিত, তা রামকিঙ্করের নগর পরিক্রমার সময় মন্তব্যে সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছিল। রামকিঙ্করের সরস মন্তব্যের পর প্রায় সাতচল্লিশ বছর কেটে গেলেও যত্রতত্র কৃষ্ণনগর, কুমোরটুলি-নির্ভর পুতুলসদৃশ মূর্তি বসানোর ট্র্যাডিশন আজও চলছে, যার শুরু স্বাধীনতা-উত্তর সময় থেকে। আসলে পরিবেশ, সামাজিক, নান্দনিক দিকগুলিকে উপেক্ষা করে সৌধ ও মূর্তি স্থাপন, বহু প্রাক্তন উপনিবেশের উপসর্গ। মূর্তি দিয়ে শহর সাজানো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। নগর উন্নয়নের সামগ্রিক পরিকল্পনার সঙ্গে এটি নিবিড় ভাবে যুক্ত। এই সাংস্কৃতিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব পাবে নগরের চরিত্র, পরিবেশ ভাবনা, স্থাপত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন ইতিহাসবিদ, স্থপতি, চিত্রকর, ভাস্কর, সমাজতাত্ত্বিক, প্রযুক্তিবিদরাও। ভাস্করকেও স্বাধীনতা দিতে হবে মূর্তি নির্মাণের স্থান, আঙ্গিক ও মাধ্যম নির্বাচনের। প্রসঙ্গত বলি, বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক পৃথ্বীশ নিয়োগী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁকে যদি মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি তৈরি করতে বলা হয়, তিনি অনতিবিস্তীর্ণ এক বালুকাভূমিতে সুদীর্ঘ এক নেড়া পাথর খাড়া দাঁড় করিয়ে রাখবেন। কারণ, মহাত্মার নিরাভরণ সারল্যকে প্রকাশ করা আর কোনও ভাবে সম্ভব নয়।
এই মহানগরে চলচ্চিত্র, চিত্রকলা, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক জলসা, মেলা, শিল্প প্রদর্শনী, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা আর্ট গ্যালারির দীর্ঘ পরম্পরার মধ্যেই গড়ে উঠেছে নিম্ন রুচির স্থাপত্যের বোধসম্পন্ন বহুতল বাড়ির জঙ্গল, আর তার অ্যাপার্টমেন্টগুলিতে নিছক জায়গা ভরাট করবার জন্য কুৎসিত দেওয়াল চিত্র। এতে শিল্প-সাংস্কৃতিক বোধ নিয়ে অদ্ভুত উন্নাসিকতার মধ্যেই শিক্ষিত ‘কালচার্ড’ বাঙালির নান্দনিক বোধের হাঁড়ির হাল আরও প্রকট হয়েছে মাত্র। শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নানা প্রকল্প শুরু হয়েছে বটে, কিন্তু দিল্লির মতো একটা ‘আর্বান আর্ট কমিশন’ তৈরি হয়নি আজও, ভাবা হয়নি যথার্থ ‘পাবলিক আর্ট’-এর বিকাশে ভাস্কর্য নির্মাণের প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণের বিষয়টিও।
কিছু পরিবর্তন নিশ্চয়ই ঘটেছে। বাম আমলে মৌলালি যুবকেন্দ্রে মুষ্টিবদ্ধ প্রতিবাদী মানুষ দিয়ে ভরাট মুরাল সরিয়ে বসেছে নীল-সাদা ফাইবারের পাখি। যদিও শহর সৌন্দর্যায়নের জন্য নানা উদ্যোগ সরকার করছে, তথাপি নাগরিকরা যাতে নান্দনিকতার আস্বাদ পেতে পারেন তার জন্য এক সংহত ভাবনা গড়ে উঠবে, এই আশায় রইলাম।
অমিতাভ ভট্টাচার্য
কাটালপাড়া, নৈহাটি
ফিরুক ট্রাম
‘শহরে ট্রামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে চালকও’ (২২-২) সংবাদে যথার্থ ভাবেই লেখা হয়েছে, যদি রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করে তা হলে এই পুরনো ট্রামগুলিকে লাভজনক করা যেতে পারে। সারা বিশ্ব যখন উষ্ণায়ন এবং দূষণ নিয়ে চিন্তিত, তখন ঐতিহ্যবাহী ট্রাম ব্যবহার করা উচিত। রাজ্য সরকারের উদ্দেশে দু’টি অনুরোধ— এক, ট্রাম কোম্পানিকে সমান্তরাল পরিবহণ সংস্থা করে তোলা, এবং দুই, ঐতিহ্যবাহী দোতলা বাস ফের চালু করা।
দেব কুমার
কুমড়োখালি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy